• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী

হেফাজতে দীনের জন্য শাইখের আদর্শ গ্রহণ জরুরি
 মাওলানা আবদুস সামাদ


আমার আব্বা হযরত মাওলানা আবদুস সালাম রহ. দীর্ঘদিন দেশের ঐতিহ্যাবাহী বড়কাটারা মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন হযরত আবদুল ওয়াহাব পিরজি হুজুর রহ.-এর খলিফা।  আমাদের বাসা ছিল বড়কাটারার মাদরাসার ভেতরে। এখানেই আমার বেড়ে ওঠা। আব্বা আমাকে ভর্তি করে দিলেন বড়কাটারা মাদরাসার মক্তব বিভাগে। বাল্যকালের সে বড়কাটারা ও তার চারপাশের অনেক কথায় আজ মনে পড়ছে। বড়কাটরা তখন ছিল সারা দেশের প্রধান ইলমি মারকাজ। এখান থেকেই এক রকম সব কিছু পরিচালিত হতো। ওলামায়ে কেরামের ভিড়ে সব সময় মাদরাসা মুখরিত থাকতো। সারা দেশের ওলামায়ে কেরাম আসতেন, থাকতেন। বয়স ছোট হওয়ার কারণে তখন অনেক কিছুই বুঝতাম না।  তবে বাল্য বয়স হলেও দু‘জন ব্যাক্তি সম্পর্কে তখন আমি খুব সচেতন  ছিলাম। একজন হাফেজ্জী হুজুর রহ. অন্যজন পীরজি হুজুর রহ.।  শৈশবেই এ দু‘জনকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। 
তবে আরেক জনের নাম সে সময় খুব বেশি শুনতাম কিন্তু কখনো দেখতাম না। তিনি হযরত সদর সাহেব হুজুর রহ.। আমি মনে করতাম হয়তো তিনি জীবিত আছেন কিন্তু মাদরাসায় না আসার কারণে তাকে দেখতে পায়নি। একদিন আব্বাকে হযরত সদর সাহেব হুজুর রহ. সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। আব্বা বললেন, তিনি তো দুনিয়াতে নেই তবে এমন একজন আছেন যাকে দেখলে সদর সাহেব কেমন ছিলেন তুমি তা অনুমান করতে পারবে। কে তিনি? আমার অবাক চোখে অন্যরকম   কৌতূহল। আব্বা তার নাম বললেন। মাওলানা আজিজুল হক রহ.। শাইখ তখন লালবাগ মাদরাসার শাইখুল হাদীস ছিলেন। সুস্পট মনে আছে সে নামটি শুনার পর হৃদয়ে ভিন্ন রকম একটি শিহরণ অনুভব করলাম। তারপর দিনে দিনে সে নামের মানুষটির সাথে যতবেশি পরিচিত হতে লাগলাম। শিহরিত সে অনুভব ক্রমেই গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগল। সে থেকে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক -এর প্রতি আমার আগ্রহ এবং দুর্বলতা। 
শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক তখনই সারা দেশে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। একটা পাতলা সুতির জামা। মাথায় সাধারণ পাঁচ কলি টুপি। যখন হাঁটতেন স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য জোড়ে হাঁটতেন। কোনো দিকে তাকাতেন না। নিচের দিকে তাকিয়ে দ্রুত পথ চলতেন। শরীরের কাঠামো ছিল চমৎকার। আমরা ছোটরা  বেশ অবাক হতাম। একজন লোক হেঁটে যাচ্ছেন আর সবাই তাকে দেখে পথ ছেড়ে দিচ্ছেন। সমীহ করছে। তাকে দেখলেই রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। অথচ সে লোকটির কোনো হাবভাব নেই।  নেই  কোনো হাকডাক। তিনি চলছেন তার  মতো করে।  নীরবে। হয়ত দ্রুত চলার কারণে গায়ের  পেছন দিকটা ভেজা। ঘামে জামা লেপ্টে আছে। ভেতরে গেঞ্জি না থাকায় গায়ের হালকা বাদামি রং জামার ওপর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে।
শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. তখন চকবাজার থেকে এটাসেটা কিনতেন। তারপর  সোজা হাঁটা । আজিমপুরের বাসায়। এখন শাইখের বাসার যে ভবনটি আছে এটা বহু প্রাচীন ভবন। এটা তখনও ছিল। একদিন হঠাৎ করে দেখি শাইখ চকবাজারে। কী যেন কিনছেন। অবশ্য তখন এখানে তার ব্যবসাও ছিল । আমি ভাবলাম আজকে যতোক্ষণ পারি হুজুরের সাথে থাকবো। ব্যাস। হুজুর এ দোকান থেকে সে দোকানে যাচ্ছেন। আমিও হাঁটছি। তবে পাশাপাশি নয়। অনেকটা দূর থেকে। মনে মনে ভয় কাজ করছে। এক সময় শাইখ কাজ শেষ করে বাসার দিকে রওনা হলেন। আমিও পিছে পিছে হাঁটছি। শাইখের দ্রুত হাঁটার সাথে তাল মেলাতে আমাকে রীতিমতো দৌড়াতে হচ্ছে। তারপরেও আমি আছি। রিকশার ফাঁকে ফাঁকে। বস্তাসহ চলা ছোট ঠেলা গাড়ির ভিড়ে। এ গলির পর সে গলি। শাইখ হাঁটছেন। আর আমি দৌঁড়াচ্ছি। কিছু সময় পর পর মাথা উঁচু করে দেখি শাইখ কতোদূর গেলেন। আবার দৌঁড়াই। আবার দেখি। এভাবে একসময় শাইখ তার বাসার দরজায় পৌঁছে গেলেন। আমি দূরে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। শাইখ  দেখলেন। এবং হাত উঁচু করে ডাকলেন। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম। কাছে যাওয়ার পর তিনি নাম জানতে চাইলেন। বললাম। বাবার নাম জানতে চাইলেন। সেটাও বললাম। শাইখ চিনলেন। সাথে করে বাসার  ভেতরে নিয়ে গেলন। 
বাসার ভেতরে দু’তলার একটা রুমে শাইখ বসলেন। জামা খুলে পাশে রাখলেন। কয়টি সূরা মুখস্থ করেছি তা জানতে চাইলেন। আমি বললাম। তিনি ত্রিশ পারার সূরা নাবা’র পড়তে বলেলন। শাইখ যতোটা অসাধারণ মাপের আলেম ছিলেন তার কথা ছিল ততোটাই অতিসাধারণ। আমাকে বললেন পড়। আম্মায়াতাসা আলুন থেকে পড়ো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। এ সূরাটি আমার মুখস্ত ছিল কিন্তু শাইখ বলাতে কেমন যেন সব ভুলে গেলাম। শাইখ কুরআন শরিফ এনে আমাকে দেখে পড়তে বললেন। আমি কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে কোনোমতে পড়া শেষ করলাম। শাইখ অনেক দোয়া করলেন। কী যেন খেতেও দিলেন। এই ছিল শাইখের সাথে আমার জীবনের প্রথম সাক্ষাৎ। এ মহান প্রদীপের আলোতে প্রথম ঝলসে ওঠা। নিজের মন, মনন ও সত্ত্বাকে তার আদর্শ ও দিক নির্দেশনায় তৈরি করার প্রথম পাঠ। 
এরপর থেকে শাইখের বয়ান হচ্ছে কোথায়ও শুনলেই দৌঁড়ে যেতাম। মাহফিলের পোস্টার দেখলেই শাইখের নাম খুঁজতাম। মাওলানা  আমিনুল ইসলাম রহ., মাওলানা আব্দুল গাফফার রহ., মুফতি আবদুল মুঈজ রহ.-এর নাম তখন প্রায় পোস্টারেই দেখা যেতো। শাইখের বয়ান শুনে ফিরতে রাত হয়ে যেত। তখন মাদরাসায় না এসে বাসায় চলে যেতাম। আর রাতে না পড়ার কারণে সকালে সবক দিতে পারতাম না। এ কারণে বেশ কয়েকবার উস্তাদের হাতে পিটুনিও খেতে হয়েছে।
আমি মিজান জামাতে পড়ি সেই সময়ে একবার বড়কাটারা মাদরাসার বুখারি খতমে শাইখ আসবেন। এ জন্য শাইখের উস্তাদ মাওলানা মুহাম্মদ আলী সাহেব তার খুব প্রসংশা করলেন এবং সকল আয়োজন নিয়ে একেবারে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তিনি শাইখকে খুবই মহব্বত করতেন। সেদিন সারাক্ষণ তিনি ছাত্রদের কাছে শাইখের নানা  প্রশংসার কথা বলতে লাগলেন। হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আলী রহ. ছিলেন শাইখের খুব শফিক উস্তাদ। এক সময় তিনি বড়কাটারা মাদরাসার প্রিন্সিপালও ছিলেন। আমার আব্বা ও আমি দুজনেই তার ছাত্র।
তো যথাসময়ে  বুখারি শরিফ খতমের অনুষ্ঠান শুরু হলো। আমি গিয়ে একবারে সামনের সারিতে বসলাম। পরে অবশ্য দাওরার ছাত্ররা আসার কারণে আমাকে একেবারে কাতারের শেষভাগে যেতে হলো। দাওরার একজন ছাত্র আমার আগ্রহ দেখে তার সাথে বসতে দিলেন এবং কিতাবের একটি অংশ আমার সামনে দিলেন। সেটাই আমার জীবনে প্রথম বুখারি শরিফের দরসে বসা। মনে আছে, তখন শাইখ তার উস্তাদদের সামনে বোখারির অসাধারণ তাকরির পেশ করেছিলেন। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে চিন্তা করলাম। উস্তাদদের সামনে তিনি কীভাবে এত সুন্দর তাকরির করছেন। এরপর থেকে নানাভাবে নানা প্রসঙ্গে শাইখের ঘনিষ্ঠ হয়েছি। শাইখের প্রিয় দৌহিত্র জামিয়া রাহমানিয়ার সুনামধন্য মুহাদ্দিস  আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু ও সহপাঠি মুফতি হাসান আহমদের আন্তরিকতায় অনেকবার শাইখের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ হয়েছে। শাইখের জীবনের শেষ লগ্নে তার কিছু শারীরিক চিকিৎসাও করেছি। এক কথায় যতই তার কাছে গিয়েছি, তার ঘনিষ্ঠ হয়েছি। তার পরশে ধন্য হয়েছি ততই যেন তার প্রতি আগ্রহ, আবেগ ও শ্রদ্ধাবোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাকে আরও দেখার, তার কাছ থেকে আরও শেখার অদম্য আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। 
কর্মজীবনের এক পর্যায়ে এসে আল্লাহ পাক আমাকে দরসে বুখারির কিছু খেদমত করার সুযোগ দিলেন। কিন্তু মনের মাঝে একটা প্রচণ্ড আগ্রহ সৃষ্ট হলো শাইখের কাছে লম্বা একটি সময় বুখারির দরস নেবার। বিষয়টির আরজি নিয়ে মুফতি হাসান সাহেবের সাথে শাইখের রুমে গেলাম। শাইখ তার রুমে বসে কিতাব মুতা’আলা করছিলেন। সালাম দিলাম। নানা কথার পর মনের আকুতি পেশ করলাম। শাইখ জানতে চাইলেন কোথায় থাকি। বললাম। তিনি বলেন এতোদূর থেকে তো নিয়মিত আসতে তোমার কষ্ট হবে। বলেই তিনি সামনে রাখা কিতাবে মনযোগ দিলেন। আমরা চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি । আমার চোখ ইতোমধ্যে ভিজে উঠেছে। শাইখকে যে আবার বলব সে সাহস নেই।   একটু পার শাইখ আমার দিকে তাকালেন। তার হাসিমাখা চেহারায় তাকালাম। শাইখ বলেন। শোনো! প্রতিদিন সবকে আসার চেষ্টা করবা। যদি আমি কোনো প্রোগ্রামে রংপুরেও থাকি, তবেও জানবা আমি অবশ্যই সকালে সবক পড়াবো।-এরপর দীর্ঘদিন শাইখের কাছে সামা‘আত করেছি। আল্লাহ পাকের মেহেরবানিতে এখন যে কয়েক জায়গায় বুখারির খেদমত করার সুযোগ হয়, সকল জায়গায় আমার তাকরীরের প্রধান অংশ জুড়ে থাকে শাইখের আলোচনা। এতে করে ছাত্ররাও অনেক বেশি উপকৃত হয়। 
শাইখের সম্পর্কে কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমার একান্ত ভাবনা মতে শাইখের সকল কাজের প্রধান বিষয়টি ছিল আন্তরিকতা ও প্রাণময়তা। তিনি দরস দিচ্ছেন  সেখানে প্রাণ আছে। তিনি মাহফিলে ওয়াজ করছেন সেখানে প্রাণ আছে। তিনি বাবরি মসজিদ আন্দোলন করছেন সেখানেও প্রাণ আছে। আর প্রাণ ছিল বলেই সব জায়গায় আরো হাজারো প্রাণ ঝাপিয়ে পড়ত। আমাদের কাজে যেমন প্রাণ নেই। আন্তরিকতা নেই। তাই আমাদের কাজে প্রাণের কলরব নেই। কাজের প্রত্যাশিত সফলতা নেই। 
এতোগুলো বছর শাইখের কাছে থেকে তার অনেক কারামাত দেখেছি। আজ একটির কথা বলব। আমার দেখা দীর্ঘ এ সময়ে কখনও তাকে কারো সমালোচনা করতে দেখিনি। কেউ তার সমালোচনা করলেও তিনি -এর জবাব দিতেন না। শাইখের এক ছাত্রের নাম ধরে আমি বললাম, ‘হুজুর ঐ লোক দেশ-বিদেশে ঘুরে ঘুরে আপনার সমালোচনা করে।’ শুনে শাইখ বললেন, ‘তোমার সমস্যা কী?’ 
আমি ক্ষীণ স্বরে বললাম আমাদের তো মনে কষ্ট হয়। 
শাইখ বললেন,  অন্য অনেকে যে আমার প্রশংসা করে ওগুলো শুনে আনন্দিত হতে পারো না?  সোবাহানাল্লাহ, কতো সুন্দর জবাব।
ইসলামি আন্দোলনে শাইখের অদম্য স্পৃহা ছিল অনুসরণীয়। একবার চকবাজার একটি প্রোগ্রাম শেষ করে শাইখ স্টেজ থেকে নামছেন, এমনি সময় একজন লোক বলল, হযরত  ‘দেশের যে পরিস্থিতি, এ দেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করাও কী সম্ভব? সেদিন শাইখ তা ইকামাতে দ্বীনের বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন।
শাইখ তার জবাবে বলেলন, যখন ইবরাহীম আ. কে আগুনে ফেলে দেয়া হলো, একটি ব্যাঙ তখন বারবার লাফাচ্ছিল আর প্রস্রাব করছিল। তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জিব্রাইল আমিনকে পাঠালেন ইবরাহিম আ.-এর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। এ সময় জিব্রাইল আ. এসে ব্যাঙ-এর এ অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি-এরকম করছ কেন, তোমার প্রসাবে কি আগুন নিভে যাবে? ব্যাঙ জবাব দিলো  আমি জানি আমার এ কাজে নমরুদের আগুন নিভবে না। কিন্তু আমি আমার সামর্থ অনুযায়ী চেষ্ঠা করছি। এমনিভাবে আমরাও আল্লাহর জমিনে আল্লাহর খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মাত্র। কামিয়াবি এবং সফলতা আল্লাহর হাতে। তিনি চাইলে সবই সম্ভব। 
শাইখ আজীবন ইসলামবিরোধী সকল কর্মকাণ্ডের জোরালো প্রতিবাদ করেছেন। আন্দোলন, সংগ্রাম ও সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিনি কখনো জালেমের রক্তচক্ষুকে ভয় পাননি। তিনি ছিলেন দীনের ব্যাপারে সর্বদা আপোসহীন। বাতিলের কাছে মাথানত করেননি। হেফাজতে দীন ও একামাতে দীনের লক্ষ্যে তিনি নির্বিঘœ চিত্তে সম্মুখ পানে এগিয়ে চলেছেন। এ কারণে তাকে কয়েকবার কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিক্ষিপ্ত হতে হয়েছে। নানা রকম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি দমে যাননি। সত্যের পথে তার সংগ্রাম চলেছে অবিরাম গতিতে। আজ আমাদের অবস্থা কী? আমরা এখন ইসলামবিরোধী কোনো কাজ হতে দেখলে বাধা দেই না। বলিÑ পরিস্থিতি অনুকুলে নাই। এটা ঈমানী দুর্বলতা ছাড়া কিছু নয়। হেফাজতে দীন ও একামাতে দীনের জন্য সংগ্রামের ক্ষেত্রে আমাদের সামনে হযরত শাইখুল হাদীস রহ.-এর রেখে যাওয়া আদর্শ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
 লেখক, শাইখুল হাদীস, দারুল হাবীব মাদরাসা, মিরপুর, ঢাকা

Powered by Create your own unique website with customizable templates.