• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী


অনন্য শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক
মাওলানা আবদুল মালেক
অনুবাদ: আলী হাসান তৈয়ব


শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের মতো মনীষী সাধারণভাবে মুসলিম উম্মাহ এবং বিশেষভাবে এই দেশের জন্য নেয়ামত স্বরূপ। তিনি সেসব মনীষীর অন্যতম আল্লাহ যাদেরকে দুর্লভ সৌন্দর্য ও বিরল বৈশিষ্ট্য বিভায় আলোকিত ও সম্মানিত করেছেন। আল্লাহ তার  ব্যক্তিত্বে সুউচ্চ গুণাবলির সমাবেশ ঘটিয়েছেন। যার মধ্যে নিন্মোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো আমাকে সবিশেষ মুগ্ধ করেছে :
১. উলুমে আলিয়া ও উলুমে 'আলিয়া তথা শাস্ত্রাবলির ভিত্তিমূলক বিদ্যা ও উচ্চস্তরের কিতাবাদি অনুধাবনে এবং গবেষণামূলক উচ্চস্তরের বিষয়াদি উদ্ঘাটনে তার  পূর্ণ প্রস্তুতি। 
২. তার  মেধা ও ধী শক্তি। 
৩. মদিনা তাইয়েবা এবং এতে শায়িত রাসূলের প্রতি তার  অকৃত্রিম ভালোবাসা। এ স¤পর্কিত তার  কাব্যগাঁথাগুলো যেন হৃদয় ও অস্থি-মজ্জায় লুকিত ভালোবাসার আরশি।  
৪. শাইখ ও স্বীয় উস্তাদগণের প্রতি তার  অসম্ভব ভক্তি ও অকৃত্রিম ভালোবাসা :   এ ছিল তার  অনন্য বৈশিষ্ট্য, যখনই তিনি তার  কোনো শাইখ বা উস্তাদের স্মৃতি তর্পণ-স্মরণ করতেন, নিজের আবেগ ও অশ্র“কে বাঁধ মানাতে পারতেন না। আল্লাহ তাকে এমন কিছু শিক্ষক ও শাইখ দান করেছিলেন যারা ছিলেন নিজ নিজ যুগে  সমুজ্জ্বল। হিন্দুস্তানে তার  শাইখদের মধ্যে ছিলেন : শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী, শাইখ আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী, 'ইলাউস সুনান'- এর লেখক আল্লামা শাইখ যফর আহমদ উসমানী রহিমাহুমুল্লাহ। তবে তিনি তার  কাছে হিন্দুস্তানে পড়ার আগে পড়েছেন ঢাকায়। আরও ছিলেন ইমামুল আসর আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরির তাকরীরের সংকলন ফজলুল বারীর গ্রন্থকার শাইখ বদরে আলম মিরাঠী। হিন্দুস্তানে তাকে যারা ইজাযত দিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন সাহারানপুর মাজাহেরে উলুমের জৈষ্ঠ শিক্ষক শাইখ আসআদুল্লাহ রামপুরী। শাইখ ভুলক্রমে তার  নাম বলতেন আসাদুল্লাহ। তিনি তার  খুব সংক্ষিপ্ত সাহচর্য পেয়েছিলেন বলে এমন সূক্ষ্ম ভুল হয়েছিল। তিনি শাইখুল হাদীসকে 'বাজলুল মাজহূদ' এর গ্রন্থকার বিশিষ্ট বুযুর্গ আল্লামা খলীল আহমদ সাহারানপুরী সূত্রে অলীউল্লাহ দেহলভী রহ.-এর 'মুসালসালাত'-এর অনুমতি দিয়েছিলেন। (আল্লাহ তাঁদের সবার ওপর অফুরান রহমত বর্ষণ করুন।) আর বাংলাদেশে তার  শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন জাতির জ্যোতিস্ক মুজাহিদে আজম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. (মৃত্যু : ১৩৮৮ হি.), জাতির রাহবার প্রখ্যাত বুযুর্গ শাইখ মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. (মৃত্যু : ১৪০৭ হি.), প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শাইখ হেদায়েতুল্লাহ রহ. (মৃত্যু : ১৪১৬ হি.) প্রমুখ। শাইখ তার  কাছে সহিহ মুসলিম পড়েছিলেন আশরাফুল উলুম বড় কাটরায়। 
শিক্ষকদের সবাই তাকে ভালোবাসতেন। তাকে গুরুত্ব দিতেন। তিনিও তার  সমুদয় ভালোবাসা প্রস্তুত রাখতেন শিক্ষকদের প্রতি নিবেদনের জন্য। তার  প্রতি শিক্ষকদের ভালোবাসা এবং শিক্ষদের প্রতি শায়েখের  ভালোবাসা  ছিল শায়েখের জন্য আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামত।  
৫. ইলম ও তালিবুল ইলমদের প্রতি অপরিসীম গুরুত্ব প্রদান : 
নুসরাতে দীন তথা দীনের সাহায্যের দিক থেকে তার  কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ইলম ও তালিবুল ইলমদের খেদমতে নিয়োজিত থাকা। তিনি তার  জীবনটাকেই এ কাজে উৎসর্গ করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন যেন নজিরবিহীন। এ কাজে তিনি তার  সমুদয় চেষ্টা, গুরুত্ব, উদ্যম ও অবিচলতা নিয়োগ করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে তার  সমকক্ষ মেলা সত্যিই দুরূহ ব্যাপার। নিজের যৌবনের প্রারম্ভ থেকে নিয়ে সেই শক্তিহীন অক্ষম বার্ধক্যে উপনীত হওয়া পর্যন্ত এই ছিল তার  অবস্থা। বরং এ কাজই তাঁকে যেন বার্ধক্যের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিয়েছে। 
পঠন ও শিক্ষাদানে তার  উৎসর্গীপ্রাণ এবং দু কাজে তার  অত্যধিক নিষ্ঠা ইলমি তথা জ্ঞান-গবেষণার জগতে এক অনন্য প্রশংসনীয় কাজ। কঠিন স্থানগুলো বুঝানো এবং ইলমি মাতালিব তথা গবেষণামূলক তথ্য উপস্থাপনে পারঙ্গমতা তার  ক্ষেত্রে এ কথাকে সত্যে পরিণত করেছে যে 'কিছু কিছু বর্ণনা হয় যাদুকরী'। 
৬. সর্বসাধারণের প্রতি তার  অকৃত্রিম দরদ 
এটি আসলে সব দেশের সব কালের নিষ্ঠাবান আল্লাহর পথে আহ্বায়কের বৈশিষ্ট্য। সর্বসাধারণের প্রতি তার  দরদের প্রমাণ হলো তিনি তাদের জন্য সহিহ বুখারির একটি উচ্চ বৈশিষ্ট্যস¤পন্ন সমৃদ্ধ ব্যাখ্যা সম্বলিত অনুবাদ উপস্থাপন করেছেন। কুতুবে সিত্তার বাকি পাঁচটির সঙ্গে মেশকাত শরিফেরও একত্রে বঙ্গানুবাদ করেছেন। একইভাবে তিনি তাদের জন্য আল্লামা রুমি রহ.-এর মাসনবি গ্রন্থেরও অনুবাদ তুলে ধরেছেন। 
সর্বসাধারণের প্রতি তার  মমতার আরেকটি নিদর্শন দেশের নানা জায়গায় নানা প্রান্তে ও নানা স্থানে মাওয়ায়েজে হাসানা বা উত্তম উপদেশাবলি তথা ওয়াজ-নসিহতে, জুমার খুতবায় ও ধর্মীয় নানা সভার আলোচনায় স্থানীয় ভাষায় তার  সক্রিয় অংশগ্রহণ। এ ছাড়া তিনি কুরআনে কারিমের দরসের মজলিসও করেছেন ধারাবাহিকভাবে। এ থেকে আল্লাহ সব এলাকার সর্বশ্রেণীর মানুষকে উপকৃতও করেছেন। তার  সাধারণের সেবার একটি বৈশিষ্ট্য এই ছিল, তার  সব কিছুই আলেমদের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এবং তা থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকমহল প্রভূত উপকৃত হয়েছেন। 
৭. শাসকদের প্রতি তার মনোযোগ : 
এটি আল্লাহর পথের মুজাহিদ দায়ীদের অনন্য বৈশিষ্ট্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'সর্বোত্তম জিহাদ হলো অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা।' (মুসনাদ আহমদ : ৩/১৯) তিনি আরও বলেন, সর্বোত্তম শহিদ হলেন হামযা, অতপর ওই ব্যক্তি যে জালেম শাসকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর সে তাকে সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে। ফলে তাকে সে  হত্যা করে। (হাকেম, মুস্তাদরাক: ৩/১৯০; জাসসাস, আহকামুল কুরআন : ১/৭০)  
শাইখ এই গুণ পেয়েছেন তার  অনুসরণীয় পূর্বপুরুষদের থেকে যাদের অগ্রভাগে ছিলেন শামসুল উম্মাহ শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.। শাসক শ্রেণীর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাকে একাধিকবার জেলও খাটতে হয়েছে। প্রতিবার তিনি এ সময় একজন ধৈর্য্যশীল, শোকরগুজার মুমিনের পরিচয় দিয়েছেন। আল্লাহ হযরতকে উভয় জগতে তার  মেহনতের বদলা দান করুন। তার  পরবর্তীতে এমন ব্যক্তিদের তৈরি করে দেন যারা সালাফ তথা পুণ্যবান পূর্বসুরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে তাদের অসি ও মসির জিহাদে, বাচন ও লিখনের অঙ্গনে এবং আখলাক ও ঈমানের ময়দানে। 
উগ্র হিন্দুরা যখন ভারতের ফয়যাবাদের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলল, শাইখ তার সমর্থকদের নিয়ে এক দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। যার আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। আমি তখন আমার শ্রদ্ধেয় উস্তায শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ.-এর সান্নিধ্যে ছিলাম। আমাদের শাইখ রহ. ছিলেন কায়েমী স্বার্থবাদী ও জাতীয়বাদীদের বিরুদ্ধে বড় এক মুজাহিদ। এ কারণে আমাদের শাইখের কাছে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের আন্দোলন পেয়েছিল বিরাট মর্যাদা। আমি দেশে ফেরার সময় শাইখ তার  জন্য নিজের কিছু মূল্যবান গ্রন্থ উপহার পাঠান। উপহারনামায় তিনি তাকে বিশেষ গুণে বিভূষিত করেন। তাকে আখ্যায়িত করেন মুজাহিদ হিসেবে। এখানে আমি আমার শাইখের স¤পাদনা ও তাহকিকে প্রকাশিত আল্লামা যফর আহমদ উসমানী রহ. রচিত 'আল-কাওয়ায়েদ ফী উলুমিল হাদীস' গ্রন্থের শুরুতে তিনি যা লিখেছিলেন তা উদ্ধৃত করছি। সেখানে তিনি লিখেন : 'মহান আল্লামা, স্বনামখ্যাত মুহাদ্দিস, বড় মুজাহিদ, প্রিয় উস্তায আমার ভাই শাইখ মাওলানা আজিজুল হক ঢাকুবীর করকমলে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘজীবী করুন এবং তার  ইলম, দীনদারী ও জিহাদ-মেহনতের মাধ্যমে মানুষদের উপকৃত করুন। তার  নেক  দোয়া প্রত্যাশায়। 
আপনার ভাই,
আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ
রিয়াদ, ৩/৪/১৪১৬
একইভাবে তিনি শাইখুল ইসলাম শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ. কৃত 'মাবাদি ইলমিল হাদীস ওয়া উসুলিহী'র (ফাতহুল মুলহিমের ভূমিকা) পরিমার্জিত ও স¤পাদিত গ্রন্থের ভূমিকায় শাইখুল হাদীসকে 'খায়র' বা কল্যাণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। 
৮. সব হাদীস গ্রন্থের প্রতি বিশেষ এবং বুখারির প্রতি সবিশেষ ভালোবাসা :  
হাদিস শরিফের প্রতি ভালোবাসা একটি প্রাকৃতিক বিষয়। সব মুমিনের অন্তরেই হাদিস শরিফের  প্রতি ভালোবাসা প্রোথিত থাকে। কিন্তু কিছু মানুষ এমন থাকেন হাদিস শরিফের  প্রতি যাদের ভালোবাসা ঢুকে পড়ে তাঁদের রক্তে-মাংসে, শিরা-উপশিরায়। হাদিস হয়ে যায় তার জীবনের প্রাণভোমরা এবং জীবনের প্রশান্তি। হাদিস হয় তার  নিরবতায় বন্ধু এবং সরবতায় সঙ্গী। সন্দেহ নেই হাদিস গ্রন্থাদি বিশেষত বুখারির প্রতি শাইখের ভালোবাসা ঠিক যেন এমন প্রকৃতির। তাইতো যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কেউ তাকে সহিহ বুখারির সেবার আবেদন জানিয়েছে তিনি তার ডাকেই সাড়া দিয়েছেন। একই সময়ে তিনি বুখারি শরিফের দরস দিয়েছেন এমন সংখ্যা ছিল প্রায় দশ। আপন শিক্ষক ও গুরু মুজাহিদে আজম আল্লামা ফরিদপুরী রহ. মূলত তার  মাঝে বুখারির এ ভালোবাসা গেঁথে দিয়েছিলেন। এ কারণেই তা হয়েছে তার  জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং নামের অভিন্ন টুকরো। 
৯. তার  শাগরেদ ও ছাত্র সংখ্যার বিপুলতা  
এ ছিল বড় নেয়ামত আল্লাহ যা দিয়ে তাকে সম্মানিত করেছিলেন। তিনি যাদের সহিহুল বুখারি পড়িয়েছেন তাদের সংখ্যা প্রায় চার সহস্রাধিক। আর বিষয় ও কিতাব নির্বেশেষে তার  ছাত্র সংখ্যা এর কয়েক গুণ বেশি। সুদীর্ঘকাল পড়ানো এবং হিন্দুস্তানে শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিসগণের সান্নিধ্য লাভের বদৌলতে তিনি পরিণত হন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের শিক্ষক। একইসঙ্গে দাদা-নাতিদের উস্তাদ। বস্তুত তিনিই হলেন প্রকৃত উস্তাযুল আসাতিযা (শিক্ষকদের শিক্ষক) এবং শাইখুল মাশাইখ। 
১০. আখিরাতকে অগ্রাধিকার এবং আল্লাহর দান একাধিক নেক সন্তান : 
আমৃত্যু শাইখ তার  জীবনটাকে উৎসর্গ করেছেন আল্লাহ, তার  দীন, তার  কিতাব এবং তদীয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের সেবায়। তিনি আখেরাতের আবাস এবং আখেরাতের সাওয়াবকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এদিকে আল্লাহ তাকে অনেকগুলো নেক সন্তান দানে সম্মানিত করেছেন। তারা এই মনীষীর এমন উত্তরাধিকারী যাদের সবার বৈশিষ্ট্য ঈমান ও কুরআন। তাদের কেউ এমন নেই যিনি কুরআনুল কারিমের হাফেজ হননি। এমনকি হাফেজ হওয়া যেন তার  পরিবারের সদস্য হবার আলামতের রূপ পরিগ্রহ করেছে। 
আল্লাহ শাইখকে অবিচ্ছিন্ন ধারায় নেক আমল অব্যাহত থাকার তিনটি দিকই দান করেছেন। সেগুলো হলো : প্রথম. সাদাকায়ে জারিয়া। আর তা হলো, কতিপয় গুণমুগ্ধ সঙ্গীকে নিয়ে তার  জামিয়া রাহমানিয়া প্রতিষ্ঠা এবং অসুস্থ হবার প্রাক্কালে জামিয়াতুল আজিজ প্রতিষ্ঠা। (আল্লাহ উভয় প্রতিষ্ঠানকে চিরকাল টিকিয়ে রাখুন)। দ্বিতীয়. ইলমে নাফে বা উপকারী বিদ্যা। তা হলো তার রেখে যাওয়া হাজার হাজার ছাত্র এবং ছাত্রদের অসংখ্য ছাত্র। আর তা তো এভাবে চলতেই থাকবে। তেমনি তার  রচনা ও অনুবাদসমগ্র, যার সামান্য ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ওপরে। তৃতীয়. কুরআন ও দীন আঁকড়ে থাকা তার  সন্তানাদি। হাদীসের ভাষায় 'নেক সন্তানসন্ততি'।
তার  সবচেয়ে বড় সাদাকা হলো 'ফজলুল বারী'। এটি মূলত তার  শাইখ ও শিক্ষক শাইখুল ইসলাম শাব্বির আহমদ উসমানী রহ.-এর বুখারির তাকরির বা ভাষ্যের অনুলিখন। ১৩৬২-১৩৬৩ হিজরি জামেয়া ইসলামিয়া ডাভেলে পড়াকালে তিনি সহিহ বুখারির দরসে থেকে তার  এই ভাষ্য লিপিবদ্ধ করেন। যৌবনের প্রথম প্রভাতে মাত্র ২২ বছর বয়সে ছাত্র অবস্থায় শিক্ষকের সব ভাষ্য নিষ্ঠার সঙ্গে নোট করার মাধ্যমেই শিক্ষকের সঙ্গে তার  লেগে থাকা, গভীর ধীশক্তি, অধিক মনোযোগ এবং ইলম ও ইলম সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে তার  ধৈর্য ও দৃঢ়তা প্রমাণ করে।
[শাইখুল হাদীসের প্রকাশিত বুখারির উর্দু ব্যাখ্যগ্রন্থ বহুল পঠিত 'ফযলুল বারী'- এর আরবি ভূমিকা থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত]
লেখক: আমিনুত তালিম, মারকাযুদ্দাওয়া আল-ইসলামিয়া ঢাকা 
 

Powered by Create your own unique website with customizable templates.