• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী

তার সাথে আমার    জীবনাচার
মাওলানা মুহাম্মদ আবুল কালাম
শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব রহ. বাংলাদেশের একজন শীর্ষ আলেম ছিলেন। ১৯৮১ সালে অলিকুল শিরোমণি আমীরে শরীয়ত হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. -এর নির্বাচনের সময় তার সাথে আমি পরিচিত হই। আমি নোয়াখালী জেলার চৌমুহনী নির্বাচনী কেন্দ্রে আমীরে শরীয়ত হযরত হাফেজ্জী হুজুরের রহ. নির্বাচনী কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখার সুবাদে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নজরে আসি। এ কারণে আমাকে মাদরাসার শিক্ষকতার কাজ ছেড়ে জনাব-মরহুম হাজী সিরাজ-উদ-দৌলা সাহেব ও শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব রহ. সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ হযরত হাফেজ্জী হুজুরের রহ. খেদমতে দফতর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য অনুরোধ করেন। আমি তাদের অনুরোধে মাদরাসার শিক্ষকতা ছেড়ে কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য যোগদান করি। তখন হযরত শাইখুল হাদীস সাহেব হুজুর রহ. খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর ছিলেন। খেলাফত আন্দোলনে আমার কর্মতৎপরতা, একনিষ্ঠতা দেখে হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. এবং শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব হুজুর রহ. সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত আনন্দিত হন।  
আমি ৮১ সালে হযরত হাফেজ্জী হুজুরের রহ. হাতে সুলুকের বায়আত গ্রহণ করি। হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. আন্দোলনের কাজে আমাকে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব রহ.-এর খেদমতে প্রেরণ করতেন। হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. খেলাফত আন্দোলনের সর্ববিষয়ে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব রহ.-এর পরামর্শকে অগ্রাধিকার দিতেন। ইরান, ইরাকের যুদ্ধের সময় ১৯৮৫ ইং সালে উভয় রাষ্ট্র মিমাংসার জন্য হযরত হাফেজ্জী হুজুরকে আহ্বান জানায়। হযরত হাফেজ্জী হুজুর এ আহ্বানকে স্বাগত জানিয়ে ইরান, ইরাক সফরের জন্য শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. ও জনাব মুফতি আমিনী সাহেবসহ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে প্রস্তুতি নিলেন। হুজুরের সফর সঙ্গীদের মাঝে দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব রহ.। আয়াতুল্লাহ খামেনী ও সদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আলোচনার সময়  হযরত হাফেজ্জী হুজুরের সাথে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব রহ. থাকতেন। এবং যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে হযরত হাফেজ্জী হুজুরের রহ. পক্ষ থেকে মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেন। হুজুর সফর সঙ্গীসহ দেশে ফেরার সময় কুয়েতের ট্রানজিট নিয়ে দেশে ফেরার সময় সবার পাসপোর্ট পাওয়া গেলেও হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও শাইখুল হাদীস সাহেবের পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি যদ্দরুন উভয়কে কুয়েত বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে আটকা পড়তে হয়। তখন সফর সঙ্গীদের মাঝে হাজী সিরাজ-উদ-দৌলা সাহেব উভয়ের খেদমত করার জন্য রয়ে যান এবং কুয়েতের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব রেফায়ি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে তাদের উভয়ের পাসপোর্ট-এর ব্যবস্থা করেন। 
১৯৮৪/৮৫ ইং সনে হযরত হাফেজ্জী হুজুরের রহ. নির্দেশে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব রহ.-এর নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলনের বিশিষ্ট কয়েকজন আলেম হজ্বের সফর করেন সে সফরে আমিও শরিক ছিলাম। সে হজ্বটা ছিল আমার জন্য অত্যন্ত বরকতময়। হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. আন্দোলনের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব রহ. ফজলুল হক আমিনী সাহেবকে আমার মাধ্যমে ডেকে এনে পরামর্শ করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ১৯৮৬ ইং সনে খেলাফত আন্দোলনের মাঝে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়ে লালবাগ মাদরাসা বন্ধ হয়ে যায়। প্রাণপণ চেষ্টা করেও খেলাফত আন্দোলনকে এক রাখা গেল না এবং লালবাগ মাদরাসাও অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো।  সে সময়ে ১৯৮৬ ইং সনে হাজী সিরাজ-উদদৌলা তার প্রতিষ্ঠিত মোহাম্মাদী হাউজিং এ একটি মাদরাসা করার জন্য আমাদের সাথে পরামর্শ করেন। বিস্তারিত আলোচনার পর হাজী সাহেব শাইখুল হাদীস সাহেবকে নিয়ে একটি দাওরা হাদিস মাদরাসা করার জন্য সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তখন হাজী সাহেবের আশ্বাস পেয়ে শাইখুল হাদীস সাহেবের আজীমপুরের বাসায় গিয়ে তার নিকট বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরি। শাইখুল হাদীস সাহেব তৎক্ষণাৎ আমাকে নিয়ে  মোহাম্মদপুর এসে হাজী সাহেবের সাথে পরামর্শে বসেন। উক্ত পরামর্শে হাজী সাহেবের ব্যক্তিগত বাসভবন এবং তার পার্শে মকতব ঘরে এ মাদরাসা করার জন্য বলেনÑ মাদরাসার নাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর জামিয়া মোহাম্মাদিয়া আরাবিয়া নামটা গৃহীত হয়। আমার স্বহস্তে লেখা প্রস্তাবিত নামের কাগজটি শাইখুল হাদীস সাহেবের দস্তখতসহ এখনো আমার নিকট সংরক্ষিত আছে। শাইখুল হাদীস সাহেব বুখারির দরস দেয়া আরম্ভ করলে দেশ-বিদেশে এই মাদরাসার প্রসিদ্ধি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মাদরাসার নামে কোনো জমি দলিলভুক্ত না হওয়ায় শাইখুল হাদীস সাহেব ১৯৮৮ সনে সাতমসজিদ-এর পাশে জমি ক্রয় করে জামিয়া রাহমানিয়া নামে মাদরাসা শুরু করেন। 
শাইখুল হাদীস সাহেব হুজুর যখন ২০০০ ইং সনে যেকোনো কারণে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া ছেড়ে চলে যান, তখন আমি হাজী সিরাজ-উদ-দৌলা সাহেবের সাথে পরামর্শ ক্রমে হুজুরকে জামিয়া মোহাম্মাদিয়ায় আনার জন্য ফরিদপুরের-মরহুম মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক সাহেবকে সাথে নিয়ে শাইখুল হাদীস সাহেবের বাসায় যাই। সেখানে গিয়ে হুজুরের সাথে আলোচনা ক্রমে বুঝা গেল হুজুর জামিয়া রাহমানিয়া নামে মোহাম্মাদপুর এলাকার যেকোনা স্থানে বসতে রাজি আছেন। তখন আমি হুজুরকে হাউজিং লিমিটেড-এর তিন নং রোডে অবস্থিত জামিয়া মোহাম্মাদিয়ার মসজিদে কোবা এবং মোহাম্মাদিয়ার মকতব বিভাগে জামিয়া রাহমানিয়া নামে মাদরাসা করার জন্য অনুরোধ করি। হুজুর সেখানে তাইসির থেকে দাওরা হাদিস পর্যন্ত জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া নামে মাদরাসা চালু করেন। 
আমি জামিয়া মোহাম্মাদিয়া আরাবিয়ার পক্ষ থেকে হুজুরকে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া পরিচালনার জন্য সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে যাই। এতে শাইখুল হাদীস সাহেব ও তার মুহিব্বীনরা আমার ওপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন। নতুন শিক্ষাবর্ষে হযরত শাইখের প্রতিষ্ঠান জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া হাকীকিয়ায় বহু ছাত্র ভর্তি হয়। ভাসমান অবস্থায় এই বিপুল পরিমাণ ছাত্রের আবাসন ও তালিমের এন্তেজাম করতে অনেক হিমশিম খেতে হয়। মোহাম্মদী হাউজিংয়ে অবস্থিত মোট চারটি মসজিদ যথাক্রমে নূর মসজিদ, জামিয়া মোহাম্মাদীয়ার মসজিদে কোবা, আশরাফুল মাদারিসের মসজিদ ও জিলানি মসজিদসহ কিছু বাড়ি ভাড়া নিয়ে ছাত্রদের থাকা ও পড়ার ব্যবস্থা করা হয়। মোহাম্মদিয়া মাদরাসার বোর্ডিংয়েই হুজুরের  মাদরাসার ছাত্রদের খানা পাক করার ব্যবস্থা হয়।   এভাবেই মোহাম্মদী হাউজিংয়ে অবস্থিত জামিয়া মোহাম্মাদিয়া সেই সঙ্গে আশরাফুল মাদারিস পরিপূর্ণ  আন্তরিকতার সাথে হুজুরের মাদরাসার সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। হুজুরের মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সবক নূর মসজিদে হওয়া সাব্যস্থ হয় এবং যথারীতি সবক আরম্ভ হয়ে যায়।-এরই মধ্যে ফতোয়া বিষয়ক হাইকোর্টের বিতর্কিত রায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তোলে। এই রায়ের বিরুদ্ধে দেশের ওলামা-মাশাইখের পক্ষ থেকে হরতাল আহ্বান ও একই দিনে এন.জি.ওর নামে ইসলাম বিরোধী মহল ময়দানে নামলে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। হরতালের দিন সকাল বেলা হুজুর নূর মসজিদে বুখারির দরস দান করেন। দরসের পর রাহমানিয়া, মোহাম্মাদিয়াসহ আশপাশের ছাত্ররা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে এন.জি.ওদের মিছিলের সাথে সংঘাত বেধে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল বাদশা মিয়া নিহত হয়। হুজুর তখন নূর মসজিদেই এক কর্ণারেই অবস্থান করছিলেন। হুজুরকে দমানোর জন্য পুলিশ হত্যার মিথ্যা মামলায় হুজুরসহ আমাকে জড়িয়ে জামিয়া মোহাম্মাদিয়া আরাবিয়া ও হুজুরের পরিচালিত জামিয়া রাহমানিয়াসহ বেশ কয়েকটি মাদরাসা সরকারিভাবে বন্ধ করে দেয়। ঐ মামলায় হুজুরকে গ্রেফতার করা হয় এবং হুজুরের সাহেবজাদা মাহফুজ সাহেব, মজলিস নেতা ইউসুফী সাহেবও আমার ব্যাপারে হুলিয়া জারি করা হয়। দীর্ঘ নয় মাস পর ২০০১ সালে জামিয়া মোহাম্মাদিয়া ও জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়াসহ বন্ধ হওয়া মাদরাসাগুলো আল্লাহর রহমতে পুনরায় চালু হয় এবং এক পর্যায়ে হুজুরের প্রতিষ্ঠিত সাতমসজিদ সংলগ্ন জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়াও হুজুরের আয়ত্তে চলে আসে।  ১৯৯২ ইং সনে ভারতে বাবরি মসজিদ শহীদ করার প্রতিবাদে ঢাকার চক বাজার জামে মসজিদে শাইখুল হাদীস সাহেবের নেতৃত্বে ওলামায়ে কেরামের এক পরামর্শ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মুফতি আমিনী সাহেবসহ দেশের বড় বড় ওলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন। 
শাইখুল হাদীস সাহেব হুজুরের নেতৃত্বে ভারতমুখী লংমার্চের প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং উক্ত বৈঠকে হুজুরকে সভাপতি ও আমিনী সাহেবকে সদস্য সচিব রেখে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈঠক শেষে হুজুর মিরপুরের মাদরাসাগুলোতে উক্ত বিষয়ে দাওয়াত দেয়ার জন্য চকবাজার থেকে একটি বেবিটেক্সিতে আমাকে সাথে নিয়ে মিরপুর অভিমুখে রওনা হন। হুজুর ও আমি এক সাথে রওনা হয়ে ঢাবির জগন্নাথ হলের সামনে যাওয়ার পর হঠাৎ করে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক হুজুর ও আমার ওপর মারাত্মকভাবে আক্রমণ করে। আমার একার পক্ষে উক্ত আক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। 
এমতাবস্থায় সজোরে চিৎকার করে হুজুরের পরিচয় তুলে ধরলে তৎক্ষণাৎ নিকটবর্তী টহলদার পুলিশ এসে এ আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। পুলিশ দেখে আক্রমণকারী যুবক দল জগন্নাথ হলের দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু হুজুর রক্তাক্ত হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ালে পুলিশ এসে আমাকে সহ হুজুরকে রমনা থানায় নিয়ে যায়। আমি থানার ভেতরেই ওসির সামনে হুজুরের ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা তুলে ধরে জোরালো বক্তৃতা করি এবং এই নৃশংস হামলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলার ঘোষণা দিই। 
অতঃপর থানার ওসি সাহেব হুজুরের নিকট ক্ষমা চেয়ে গাড়িতে করে আমাদের সাতমসজিদ রাহমানিয়া মাদরাসায় পৌঁছে দেন। আমি রাহমানিয়া মাদরাসায় ঢুুকেই মুফতি মনসুর সাহেবকে  ডেকে রাহমানিয়ার ছাত্র শিক্ষকদের সামনে হুজুরের ওপর এ নৃশংস হামলার ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করি। তৎক্ষণাৎ মুনসুর সাহেব টেলিফোনের মাধ্যমে মুফতি আমিনী সাহেবকে উক্ত ঘটনা জানান এবং সাথে সাথে চতুর্দিকে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সংবাদ সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়লে-এর প্রতিবাদে সমগ্রদেশ গর্জে ওঠে এবং বাবরি মসজিদ নির্মাণে ভারত অভিমুখে লংমার্চ আন্দোলন আরও তীব্রতা ধারণ করে। 
এ ভাবেই আমি ১৯৮১ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হুজুরের সুখে দুঃখে সর্বদা হুজুরের সাথে ছিলাম এবং আমার সাধ্যমতো  খেদমত করার চেষ্টা করেছি। আমি হুজুরকে সর্বদা অত্যন্ত সাদাসিধা ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতে দেখেছি, হুজুর এতবড় আলেম হওয়া সত্ত্বেও কখনো হুজুরকে অহংকার হিংসা, ও দুনিয়াবি কোনো লোভ লালসায় জড়িত হতে দেখিনি। তিনি ছিলেন এ দেশের মাটি ও মানুষের জন্য ইসলামের অতন্দ্র প্রহরী। তার ইলমী আমলি কামালিয়াতের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না এ কারণে আমি তার এ কামালিয়াতের ওপর সর্বদা আসক্ত ছিলাম। তার রেখে যাওয়া সকল প্রতিষ্ঠান ও আন্দোলন আল্লাহপাক সুন্দরভাবে পরিচালিত করুন এবং তার মাগফেরাত ও দারাজাত বুলন্দ ফরমান।

লেখক : প্রিন্সিপাল, জামিয়া মোহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, ঢাকা

Powered by Create your own unique website with customizable templates.