• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী


অসাধারণ গুণাবলির অপূর্ব সমাহার
মাওলানা লিয়াকত আলী


শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক একটি নাম, বাংলাদেশের আলেম সমাজের মুকুটমণি, খেলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওয়াত আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ, এই আন্দোলন ও তওবার রাজনীতির প্রবর্তক হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর প্রকৃত উত্তরসূরি, বাবরি মসজিদ লংমার্চের সফল নেতা, অসাধারণ গুণাবলির অপূর্ব সমাহার এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।  
হাদিস শাস্ত্রের একজন উস্তাদ, সবচেয়ে বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থ সহীহুল বুখারির উস্তাদ, ইলমে হাদিসের জন্য একটি নিবেদিত জীবনের নাম ছিল আল্লামা আজিজুল হক রহমাতুল্লাহি আলায়হি। এটিই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য । কিন্তু তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী । ব্যাপক বিস্তৃত ছিল তাঁর খেদমতের ময়দান। উলূমে নবুবীর তাদরীস তার দীর্ঘকালের কর্মক্ষেত্র। পাশাপাশি বয়ান, তাসনীফ, রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, রাজনৈতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব, সমাজ সংস্কারের উদ্যোগ, বাতিলের অসারতা প্রমাণের জন্য গবেষণা ও রচনা, বিশ্ব মুসলিমের দুর্দশা লাঘবের আহ্বান ও পদক্ষেপ, ইসলামের ঐতিহ্য ও নিদর্শন রক্ষায় সোচ্চার ও সক্রিয় ভূমিকা, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এসবই ছিল তাঁর কর্মতৎরতার তালিকাভুক্ত। অনেক আন্দোলনেই তাঁর সাফল্য ছিল উজ্জ্বল। তেমনি দীনী শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য প্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে তোলা, শাগরেদদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকি ও পরামর্শ তাঁর নৈমিত্তিক ব্যস্ততা ছিল। কুরআন-সুন্নাহর সাথে সম্পর্কহীন ও সঙ্গতিহীন কর্মকাণ্ড ও প্রবণতার ব্যাপারে আপসহীনতা ছিল তার ব্যক্তিত্ব ও নৈতিকতার অন্যতম উজ্জ্বল দিক।  অবশ্য  ইলমে দীন, বিশেষ করে ইলমে হাদিসের দরস ও মোতালায়া, তাহকীক ও তাসনিফে তার নিবিষ্টতা ছিল সবচেয়ে দৃশ্যমান। অন্যসব ব্যস্ততা ও নিবিষ্টতার মাঝে এই দিকটির বিশিষ্টতা ও অনন্যতাই তার প্রধান পরিচয় ছিল। যেন এতেই  ছিল তার প্রশান্তি ও স্বস্তি, তার অন্তরের খোরাক, তার ভাবনা ও মননের ক্ষেত্র ছিল এটাই। এজন্যই তিনি ছিলেন শাইখুল হাদীস। কোনো প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক সনদে নয়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ফল নয়, প্রশাসনিক খেতাব নয়, এটি তার সারা জীবনের সাধনা, গোটা কর্মজীবনের কেন্দ্র, মেধা, শ্রম ও অধ্যবসায়ের স্বয়ংক্রিয় স্বীকৃতি। কোটি হৃদয়ের উচ্ছ্বসিত অনুরাগ ও শ্রদ্ধার অভিব্যক্তি। বাংলাদেশে তাঁর একক পরিচিতি ছিল শাইখুল হাদীস। 
আরবি ভাষা ও সাহিত্য, নাহব, সরফ, বালাগাত, মানতিক, ফিকাহ, উসূলে ফিকাহ, তাফসির, উসূলে তাফসির, ইসলামি রাষ্ট্র, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতিÑ কোন শাখায় তিনি বিশেষজ্ঞ ছিলেন না? তার শাগরেদরা জানেন, যেকোনো বিষয়ে তার জ্ঞানের পরিধি ও গভীরতা ছিল  ঈর্ষণীয়। ইলমের এমন সামগ্রিকতা ও বিস্তৃতি পাওয়া যায় সীমিত সংখ্যক ব্যক্তির মধ্যে। কিন্তু তার সব শাস্ত্র ও শাখার জ্ঞান যেন চাপা পড়ে ছিল ইলমে হাদিসের নিচে। কেবল এটাই প্রকাশ  পেত, এটারই প্রচার ঘটেছিল, তিনি পরিচিত ছিলেন হাদিস শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ হিসেবে, সমকালীন ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘকাল দরসে হাদিসে মশগুল থাকা ব্যক্তি হিসেবে। বিশেষ করে বুখারি শরিফের তাদরিস ও তাহকিকে তার মতো এতো দীর্ঘকাল কোনো মুহাদ্দিস ব্যস্ত থেকেছেন বলে জানা যায় না। 
ইলমে হাদিস ইসলামি শরীয়তের অন্যতম প্রধান উৎস। আখেরি নবী সাইয়েদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনি আদমের জন্য যে সুন্দরতম জীবনাদর্শ এবং পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনের চূড়ান্ত সাফল্য ও সার্থকতার নিয়ামক উপহার দিয়ে গিয়েছেন, তাÑই তো বিধৃত হয়েছে ইলমে হাদিসে। পৃথিবীবাসীর সামনে শ্রেষ্ঠতম ও উন্নততম জীবনের নমুনা উপস্থাপন করেছেন আল্লাহ তাআলার প্রিয়তম মানব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর উক্তি, কর্ম, আচরণ, ইশারা, সম্মতি, ইচ্ছা, বাসনা, রুচি ও মেজাজ মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্নততম, নির্ভরযোগ্যতম ও সঠিকতম মানদণ্ড। এজন্যই আল্লাহ তাআলার বাণী কুরআন মজিদের মর্ম অনুধাবন ও নির্ণয়ে উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রধানতম অবলম্বন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস। শ্রেষ্ঠতম নবীর সাহচর্যের জন্য নির্বাচিত শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিবর্গ বা সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রতিটি যুগেই ইলমে হাদিস আহরণ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ, মর্ম উদঘাটন ও নির্দেশনা অনুসন্ধানে জীবনব্যাপী সাধনায় লিপ্ত থেকেছেন উম্মতের পুণ্যবান ব্যক্তিবর্গ। মুহাদ্দিসিনে কেরাম অভিধায় আখ্যায়িত ও স্মরণীয় মনীষীদের মহাকাশে উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি। হাদিস সংগ্রহ, শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয়, বিশুদ্ধতম হাদিসসমূহের সঞ্চলন এবং সেগুলো থেকে বিধান ও নির্দেশনা উদঘাটনে সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি নজিরবিহীন, সবার অগ্রগণ্য। তাঁর প্রণীত আল জামেউস সহীহ কুরআন মজিদের পরে বিশুদ্ধতম গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি। তাই ইলমে হাদিসের গ্রন্থসমূহের মধ্যে বুখারি শরিফ যেমন সবচেয়ে উঁচু মর্যাদার দাবিদার তেমনি এ গ্রন্থ অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার সাথে তারাই সম্পৃক্ত হতে পেরেছেন যারা সবচেয়ে বেশি মেধা ও মনন, একাগ্রতা ও ঐকান্তিকতা হাদিসশাস্ত্রেই ব্যয় করতে সঙ্কল্প করেছেন। 
শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.সেইসব ভাগ্যবান মানুষের তালিকায় স্থান পেয়েছেন, যারা বুখারি শরিফের সাথে নিজেদের জীবনকে আবদ্ধ করেছেন। এটা তার বৈশিষ্ট্য নয়, মকবুলিয়তের দলীল। বর্তমানে কয়েক হাজার মুহাদ্দিস তাকে মাধ্যম করে হাদিসের সনদ বর্ণনা করেন, তাকে উদ্ধৃত করে হাদিসের মর্ম উল্লেখ করেন। মনে হয় শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা শিব্বির আহমদ উসমানী রহ. ও শেষ যুগের ইমাম তহাবী হযরত মাওলানা যফর আহমদ উসমানী রহ. এর সনদে হাদিসের দরস দেয়ার মতো প্রবীণতম ব্যক্তি তিনিই ছিলেন। বিশেষ করে হযরত শায়খুল ইসলামের আর কোনো শাগরেদের সন্ধান পাওয়া মুশকিল।  
হাদিসের শাইখ বুখারি শরিফের উস্তাদ আল্লামা আজিজুল হকের জীবনধারা ছিল নবুবী আলোয় উদ্ভাসিত। তার জীবনের সৌন্দর্য, কর্মকাণ্ডের বিন্যাস, আচরণের ধারা, নৈতিকতার মানদণ্ড ও সৌজন্যের রূপরেখা তিনি আহরণ করেছিলেন হাদিসে রাসূল থেকে। তার মধ্যে ছিল না কৃত্রিমতা ও লৌকিকতা, বিলাসিতা কিংবা আড়ম্বরপ্রিয়তা।  তিনি ছিলেন স্বচ্ছতা ও স্পষ্টবাদিতায় অভ্যস্ত, সাধুতা ও নিষ্ঠায় অনড়। প্রফুল্ল বদনে আলাপ ও ভাববিনিময় ছিল তার রীতি। তাঁর লেনদেন ও আয়-ব্যয় ছিল সবার কাছে পরিষ্কার। অত্যন্ত সাদাসিধে পোশাকে তিনি চলাফেরা করতেন। সাধারণ যাত্রীদের মতোই যানবাহনে সফর করতেন। নিকট অতীত পর্যন্ত তার চলাচলে ছিল না কোনো ব্যতিক্রম কিংবা অসাধারণত্ব। সাধারণ যাত্রীবাহী বাস কিংবা রিকশাই তিনি ব্যবহার করতেন। নিজেকে বিশিষ্টজন হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা কখনোই করতেন না। 
জান্নাতি মানুষেরা সরল হয়ে থাকেনÑ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণীর উজ্জ্বল নমুনা ছিলেন হযরত শাইখুল হাদীস রহ.। কুরআন ও হাদিসের মর্ম অনুধাবনে তিনি কী সূক্ষ্মদর্শী! কিন্তু স্বার্থ ও সুবিধার ব্যাপারে একেবারেই সরল। কূটচাল তো অভাবনীয়, কৌশল অবলম্বনের পরামর্শ তাকে দিতে পারেনি কেউ। সরলতার কারণে কর্মজীবনে তিনি অনেকবার নিছক বঞ্চনা নয়, রূঢ় পরিবেশের মুখে পড়েছেন। কিন্তু এ জন্য তিনি কাউকে দোষারোপ করতে রাজি হননি। 
আল্লামা আজিজুল হক রহ. তাদরীসি জিন্দেগিতেই আবদ্ধ থেকেছেন। তিনি আধ্যাত্মিকতার বেশ ধারণ করেননি। কিন্তু তার নিকটজনেরা জানেন, তিনি সুলূক ও তাসাউফের কত উঁচু মাকামের অধিকারী ছিলেন। তাযকিয়া ও ইহসান তিনি হাসিল করেছেন তার উস্তাদবৃন্দ থেকে। শৈশব থেকেই তিনি যাদের লালিত, সেই হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ., হযরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী রহ., হযরত মাওলানা আবদুল ওয়াহাব পীরজি রহ. এর একান্ত সান্নিধ্য তাঁকে শিক্ষাজীবন থেকেই পরিশীলিত করেছে। তাসাউউফের আসল উদ্দেশ্য নবুবী আখলাকের রঙে রঙিন হওয়ার জন্য তার এসব মহান উস্তাদের øেহ ও শাসনই যথেষ্ট ছিল। এজন্যই আধ্যাত্মিকতা শাস্ত্রের কিতাবসমূহ তিনি সবসময় মুতালাআয় রাখতেন, বুযুর্গানে দীনের বাণী ও উপদেশের সারবস্তু তিনি আত্মস্থ করেছেন গভীরভাবে। তার দরসে এসব বিষয় ফুটে উঠত সাবলীলভাবে অকৃত্রিমভাবে। এজন্যই তার দরসের ছিল এতো প্রভাব, এমন মুগ্ধ হতো তার শিষ্যরা। 
তিনি রাজনীতি করেছেন দীর্ঘদিন। দেওবন্দী ধারার উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে পরিচালিত রাজনীতির কোনো পর্যায়েই তিনি অনুপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু প্রচলিত রাজনীতির কুটিলতা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। আবার রাজনীতিকে তিনি পেশা হিসেবেও গ্রহণ করেননি। তিনি দীনী দায়িত্ব হিসেবে নিজের সাধ্যমতো অবদান রেখেছেন, শরীক থেকেছেন। রাজনৈতিক চরম ব্যস্ততায় সময়েও দরসে হাদিস চালিয়ে গেছেন নিয়মতান্ত্রিকতার বিন্দুমাত্র ছেদ না ফেলে। এজন্য তাকে অনুযোগ পোহাতে হয়েছে। কেউ কেউ সমালোচনাও করেছেন। কিন্তু দরসে হাদিসের সাথেই যেন আত্মার অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। 
ওয়াজ ও বয়ানের জন্যও তিনি একটি পরিচিত নাম। সারা দেশে তিনি সফর করেছেন ওয়াজ মাহফিলের উপলক্ষে। কিন্তু তার ওয়াজে নেই সুরেলা ধারা। ঢাকাইয়া কথ্য ভাষায় তিনি ওয়াজ করে  যেতেন দীর্ঘ সময় ধরে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ বিষয়বস্তু আলোচনা করতেন সহজ ভাষায়। শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকতেন। তার বয়ানগুলোর সঙ্কলন তৈরি হলে সেগুলো অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ। ইতোমধ্যে তার বয়ানের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশনার এই ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা চলছে।  
গ্রন্থ রচনায় তার প্রধান কীর্তি বুখারি শরিফের বাংলা ভাষ্য। বাংলা ভাষায় তিনি নিজের যোগ্যতা বর্ণনা করতেন কলাপাতায় লেখা পর্যন্ত। অথচ জগদ্বিখ্যাত কিতাবখানা তিনি বাংলাভাষী পাঠকদের কাছে পরিচিত করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। তাতে তিনি আশাতীত সাফল্য লাভ করেছেন। এত সহজ ভাষায় এমন উঁচু মানের বিষয়বস্তুর গভীরে পাঠকদের নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব আর কারো আছে কি না জানা নেই। প্রকৃতপক্ষে বাংলা বুখারি শরিফের শিরোনামে তিনি রচনা করেছেন ইসলামের একটি বিশ্বকোষ। প্রথমে সাত খণ্ডে যখন তা প্রকাশিত হয়, তখন সব ধরনের পাঠকের কাছে তা সমাদৃত হয়। পরে হাদিসের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের দিকে খেয়াল রেখে তিনি গ্রন্থখানা দশখণ্ডে পরিণত করেন। ইসলামের সামগ্রিক বিষয় এতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। তাঁর ইলমের ব্যাপকতা ও বিস্তৃতি এবং গভীরতা ও সূক্ষ্মতার প্রমাণ পাওয়া যায় এ গ্রন্থ থেকে। একজন সফল লেখক হিসেবে তাকে ভূষিত করার জন্য এই একখানা গ্রন্থই যথেষ্ট।  
শাইখুল হাদীসের কাব্যপ্রতিভা অনেকেরই অজানা। তিনি আরবিতে হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের শানে যে কবিতা রচনা করেছেন, তা অলঙ্কারশাস্ত্রের মানদণ্ডে শুধু উত্তীর্ণ নয়, অত্যন্ত উঁচুমানের বলে সাব্যস্ত। মহানবী সা.-এর প্রতি তার ভক্তি ও প্রেমের গভীরতাও অনুমান করা যায় এ থেকে। বাংলাভাষী আলেমদের মধ্যে আরবিতে রাসূল প্রশস্তি রচনায় তার জুড়ি মেলা ভার। হাদিসের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার সুবাদে রাসূলপ্রেমের কোন মার্গে তিনি উন্নীত হয়েছিলেন, এসব কবিতাই তা বলে দেয়। খাঁটি নবীপ্রেমিকের এক জ্বলন্ত নমুনা ছিলেন হযরত শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক।  
শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক এখন আখেরাতের বাসিন্দা। পাঁচ যুগের বেশি ইলমে হাদিসের খেদমতে নিয়োজিত থাকার পর তিনি  যেন ক্লান্ত, শ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তার মস্তিষ্ক যেন চাইছিল অখণ্ড বিশ্রাম। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একান্ত সান্নিধ্যে চলে গিয়েছেন মাহে রমজানুল মোবারকের পবিত্র দিনে। এটাই তো আল্লাহর অমোঘ নিয়ম। জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিসীনে কেরাম এক সময় চির বিশ্রাম নিয়েছেন। তাদের অনুপস্থিতি সাগরেদদের শোকার্ত করলেও মেনে নিতেই হয়েছে। আল্লামা আজিজুল হক যেন সেটাই স্মরণ করিয়ে দিলেন। এতে আমাদের হৃদয়তন্ত্রী ছিঁড়ে যেতে চায়। ভারাক্রান্ত হই। কিন্তু তবুও সান্ত্বনা পাই তাঁর পুণ্যবান ছায়ার শীতল পরশ আমরা লাভ করেছি। তিনি আমাদের ছেড়ে আপন প্রভুর একান্ত সান্নিধ্যে চলে গিয়েছেন। তার উলূম ও মাআরেফ সংরক্ষণের ব্যবস্থা হোক। তাঁর উত্তরসূরিরা ইলমে হাদিসের দরসের ধারা অব্যাহত রাখুন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে আমাদের ব্যাকুল হৃদয়ের আকুল নিবেদন এটাই। আমিন।  
লেখক : শিক্ষাসচিব, মাদরাসাই দারুর রাশাদ মিরপুর, ঢাকা

Powered by Create your own unique website with customizable templates.