• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী


 রচনা ও সংকলন  
 ছাত্র বয়সেই লেখালেখির প্রতি বিশেষ আকষর্ণ ছিল হযরত শাইখের। জটিল জটিল বিভিন্ন কিতাবের বিস্তারিত ব্যাখ্যাগ্রন্থ পড়ার ফাঁকে ফাঁকে লেখা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষভাবে হাদিস পড়ার সময় হাদিসের গুরুত্বপূর্ণ দুই কিতাব বুখারি ও তিরমিজি শরিফের শরাহ লিপিবদ্ধ করেন। ঢাকার বড়কটরা মাদরাসায়  হযরত মাওলানা যফর আহমাদ উসমানী রহ.-এর নিকট তিরমিযী শরিফ পড়ার পূর্বেই মেশকাত পড়াকালীন সময়ে তিরমিজির তাকরীর লিপিবদ্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।  হাদিসের বিস্তারিত ব্যাখ্যাগ্রন্থ সমূহসহ চার মাজহাবের ফেকহি কিতাবগুলো এ সময়ে ব্যাপকভাবে হযরত শাইখের মুতালাআতে আসে। মাদরাসার কুতুবখানায় লম্বা লম্বা সময় মুতালাআ করে করে তিরমিজি শরিফের তাকরীর লেখা আরম্ভব করেন। হযরত শাইখের ছাত্র সময়ের লেখা তিরমিযি শরীফের এই শরাহ দরসের তাকরীর ছিল না। বরং এক স্বতন্ত্র ব্যাখ্যাগ্রন্থ ছিল যা একজন তালিবুল ইলম কিতাব হল করার জন্য জমা করেছিলেন। পূর্ণ কিতাবের তাকরীর শেষ করা হয়েছিল কি না জানা নেই, কেননা বিভিন্ন স্থানান্তরের  কারণে তার অনেক অংশ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল। তবে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থাতেও হযরতের কাছে যতটুকু পরিমাণ তাকরীর সংরক্ষিত দেখেছি তাও তিরমিজি শরিফ ১ম খণ্ডের ৭৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। বড় আকারের কাগজে গুটিগুটি হস্তাক্ষরে সাড়ে পাঁচশত পৃষ্ঠাব্যাপী। ছাত্র জামানায় হযরত শাইখের যে দ্বিতীয় বড় তাছনিফী কারনামা তা হলেÑ 
এক. ব্যাখ্যাগ্রন্থ বুখারি শরিফের জগৎ বিখ্যাত শরাহ ফজলুল বারী। দ্বিতীয় বারের মতো বুখারি শরিফ পড়ার জন্য হযরত শাইখ যখন শাইখুল ইসলাম শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ.-এর দরসে অংশগ্রহণ করেন ডাভেল মাদরাসায়। হযরত শাইখুল ইসলাম রহ.-এর তাদরিসী জামানার সর্বশেষ ঐতিহাসিক সেই শিক্ষাবর্ষের দরসী তাকরীর লিপিবদ্ধ করেন ‘জূদুল বারী’ নামে সেই তাকরীরে বুখারি হস্তাক্ষরের প্রায় ১৮০০ পৃষ্ঠায় সুসম্পন্ন  হয়। যা পরবর্তীতে‘ ফজলুল বারী’ নামে প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে।
নিয়মতান্ত্রিক ছাত্রত্বের সময়ই যে ব্যক্তি বুখারি শরিফ ও তিরমিজি শরিফের মতো কিতাবের শরাহ দরসী তাকরীর থেকে এবং মূল ব্যখ্যাগ্রন্থ ও অন্যান্য  উৎসমূল থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যেমে লেখার কৃতিত্ব দেখান সেই ব্যক্তির তাসনিফী যওকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা নি®প্রয়োজন। ছাত্রজীবনের এই দুই বড় কৃতিত্বের পর কর্ম জীবনেও রচনা ও সংকলনের এই ধারা অব্যাহত থাকে। ছাত্র জীবনের লিখিত ব্যাখ্যাগ্রন্থ দুটি উর্দুতে ছিল। পরবর্তীতে হযরতের তাসনিফী কাজ চলেছে বাংলা ভাষাভাষী  সেই বিশাল জনগোষ্ঠি ও স্বদেশবাসীর জন্য, যারা দীনী তাসনিফাত ও লেখালেখির দ্বারা দীনী জ্ঞানলাভের সৌভাগ্য থেকে অনেকটাই বঞ্চিত ছিল। হযরতের উস্তাদ হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. ছিলেন সেই মহান ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত যারা বাংলা ভাষায় এলমেদীন প্রচারের শূন্যতা পূরণে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি তার লেখালেখির লক্ষ্যই নির্ধারণ করে ছিলেন বাংলাভাষার মানুষদের দীনী রাহনুমায়ী ও ফিকরী তারবিয়াত। হযরত ফরিদপুরী রহ. এর এই লক্ষ্য পূরণে তারই শিষ্য হযরত শাইখুল হাদীস  রহ. রেখেছেন এক অবিস্মরণীয় ভূমিকা।
বাংলা বুখারি : বাংলাভাষায় শাইখুল হাদীসের অমর অবদান
ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়, বাংলাভাষায় মেশকাত শরিফের আংশিক অনুবাদ ছাড়া তখনও হাদিসের মৌলিক কোনো কিতাব প্রকাশ হয়নি। কুরআনুল কারীমের কোনো বিশদ তাফসিরও বাংলায় রচিত হয়নি। ইসলামি সাহিত্যও বাংলা ভাষায় হাতেগোণা স্বল্প পরিমাণ। বাংলা ভাষায় দীনী তালীম প্রচারের সেই দৈন্যতার সময়ে বাংলা ভাষাভাষীদের নিকট দীন প্রচারের যুদ্ধে হযরত শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর সঙ্গে ময়দানে নেমে পড়লেন তারই ভাবশিষ্য তরুণ আলেমেদ্বীন শাইখুল হাদীস রহ. শুরু করলেন বুখারি শরীফের অনুবাদ কাজ। দীর্ঘ ষোল বৎসরের পরিশ্রমে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হলো ৭ খণ্ডের বুখারি শরিফ। নামে অনুবাদ হলেও প্রকৃত অর্থে শাইখুল হাদীসের অনুদিত এই বাংলা বুখারি শরিফ বাংলা ভাষায় এ যাবৎকালে রচিত অন্যতম শ্রেষ্ঠ মৌলিক ও বিস্তারিত হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ। বুখারি শরিফেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক শরাহ এটি। বাংলা ভাষায় রচিত হাদিসের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যাগ্রন্থ এটাই প্রথম। বাংলা ভাষায় হাজার বছরের ইতিহাসে অন্যতম মৌলিক কর্ম হিসেবে শাইখুল হাদীসকৃত বুখারি শরিফের বাংলা ব্যাখ্যাগ্রন্থ সুধী মহলে স্বীকৃত। বাংলা ভাষায় আলেম সমাজের পশ্চাৎপদতার সেই যুগে বুখারি শরিফের এমন বাংলা ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা কত বড় কৃতিত্বের বিষয় আজকের দিনে সেটা কল্পনা করাও কঠিন।
বাংলা ভাষায় রচিত এই ব্যাখ্যাগ্রন্থের  বৈশিষ্ট্য 
ক. প্রধানত এই ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করা হয়েছে এমনভাবে যে, জটিল জটিল ইলমী আলোচনা গাইরে আলেম সাধারণ পাঠকরাও সহজেই বুঝতে পারে। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত সুধী মহলে ইসলাম সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা ও আহলে হক আকাবিরে দেওবন্দের চিন্তার বিকাশ ও প্রসার ঘটাতে বাংলা বুখারি শরিফ যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে।
খ. প্রচলিত আরবি উর্দু ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোতে বুখারি শরিফের ফেকহী অধ্যায়গুলোর বেশি বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বাংলা বুখারিতে ইতিহাস সীরাত ও আকিদাসংক্রান্ত অধ্যায়গুলোর আলোচনা বেশি বিস্তারিতভাবে এসেছে।
গ. মানুষের বাস্তব আমলসংক্রান্ত যে কোনো হাদিসের ব্যাখ্যায় ফেকহী আলোচনাসহ আমলের সুনির্দিষ্ট পথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঘ. হাদিসের অনুবাদ এমন দক্ষতার সঙ্গে করা হয়েছে যে, কেবল অনুবাদের দ্বারাই বহু ‘তা’আরুজ’ বৈপরীত্যের অবসান হয়ে যায় এবং বহু ‘সুয়ালে মুকাদ্দ’র (উহ্য) প্রশ্নেরও সমাধান হয়ে যায়। উলূমে দীনিয়ার সকল শাখায় হযরত শায়েখের অসামান্য দক্ষতার বরকতেই এমনটি সম্ভব হয়েছে।
ঙ. তাসাউওফ এবং সুলূকেরও বহু সুক্ষ্ম বিষয়ের সমাধান খুব সরল সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা কেবল এই ব্যাখ্যাগ্রন্থেরই বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলা চলে।
মুসলিম শরিফ ও  হাদিসের ছয় কিতাব
বুখারি শরিফ অনুবাদের পর হযরত শাইখ আরেকটি বিশাল কাজ হাতে নিয়েছিলেন। বুখারি শরিফ বাদে উসূলের অবশিষ্ট পাঁচ কিতাব মুসলিম শরিফ, আবু দাউদ শরিফ, নাসায়ী শরিফ, তিরমিজি শরিফ ও ইবনে মাজাহ শরিফ সাথে মেশকাত শরিফ মোট এই ছয় কিতাবের সমন্বয়ে এক অনবদ্য হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনার কাজ শুরু করেন। মুসলিম শরিফকে প্রধানত অবলম্বন করে অবশিষ্ট পাঁচ কিতাবের অতিরিক্ত হাদিসগুলোকে সংয্ক্তু করেছেন। এভাবে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের এ কাজ শুরু হয়ে বড় বড় দুই খণ্ড ও আরও কিছু অংশের লেখা ও ছাপার কাজও সম্পন্ন হয়ে পাঠকদের হাতে পৌঁছে যায়। পাঠকমহলেও ব্যাপক সাড়া পড়ে এ কিতাবের প্রতি। এটা ১৯৮০-এর দশকের কথা। এরপরই হযরতের দৃষ্টি পূনরায় নিবদ্ধ হয় বুখারি শরিফের দিকে। বুখারি শরিফের প্রথম সংস্করণে একান্ত তালিবে ইলমদের সাথে সংশ্লিষ্ট সাধারণ পাঠকদের প্রয়োজন নেইÑ এমন চিন্তায় বেশ কিছু বিষয় বাদ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে শায়েখের খেয়াল হলো যে, তালিবে ইলমদের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভূক্ত করে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যাগ্রন্থের রূপদান করা হোক। সেমতে ১৯৯০ সনের কাছাকাছি সময় থেকে বাংলা বুখারি শরিফের বর্ধিত সংস্করণের কাজে মনোনিবেশ করলেন। পূর্বে প্রকাশিত ৭ খণ্ডের বাংলা বুখারি শরিফ বর্ধিত সংস্করণে ১০ খণ্ডে রূপান্তরিত হলো। কিন্তু এ কাজে সময় এতো চলে গেল যে, এটা সমাপ্ত করার পর হাদিসে ছয় কিতাবের কাজে হাত দেয়ার মতো আর অবকাশ মিলল না। বরং ধীরে ধীরে বার্ধক্যের প্রাবল্যে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে লাগলেন। মুসলিম শরিফ ও অন্যান্য হাদিসের ছয় কিতাব যতটুকু প্রকাশিত হয়েছে তাতে  প্রায় দেড় হাজার হাদিসের ব্যাখ্যা এসেছে। শাইখের এই আজিমুশ্বান কাজকে পূর্ণতায় পৌঁছানোর জন্য আল্লাহ তা’য়ালা এই কাজের উপযুক্ত কাউকে হিম্মত দান করেন। আমীন
মসনবীর বাংলাভাষ্য 
মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহ.-এর মসনবী শরিফ ইলমে তাসাওউফের কোন স্তরের কিতাব তার সঠিক অনুমান করা তাদের পক্ষেই সম্ভব যারা সুলূকের বহু পথ পাড়ি দিয়ে মাহবুবে হাকিকীর সাথে আত্মার বন্ধন জুড়তে সক্ষম হয়েছেন। আধ্যাত্মিকতা তথা এশকে মাওলানার যে অনল মসনবীর মধ্যে সুপ্ত, তার খবর এ অনলে যারা পুড়ে খাঁটি হতে পেরেছে তাদের কাছেই থাকতে পারে। আমরা যারা সাধারণ তারা শুধু এতোটুকু বলতে পারি, তাসাওউফ তথা আধ্যাত্মিক ইলমের এ ময়দানে মাওলানা রুমীর মসনবী কিতাবের মতো এমন মকবুলে আম নজির পূর্বাপর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি মেলা কঠিন। সুলূকের রহস্যময় গুপ্ত ভান্ডারগুলোকে মূল কিতাব থেকে হযরত শাইখ রহ. তার বাংলা মসনবী শরীফের  ছত্রে ছত্রে যেভাবে বিকশিত করেছেন তার দৃষ্টান্তও বাংলা ভাষায় বিরল। হযরত শাইখ রহ. এর বুখারির খেদমত দৃষ্টে সমকালীন বড় বড় ওলামায়ে কেরাম তাকে যামানার বুখারি উপাধি দিতেন। কিন্তু যারা শাইখের বাংলা মসনবী শরিফের বিদগ্ধ পাঠক তারা অবলীলায় শাইখ রহ. কে যামানার রুমী বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। শায়েখের মসনবী শরিফের এ বাংলা ব্যাখ্যা পড়লে সুলূকের পথের অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ অনুমান করতে পারেন তাসাওউফ ও সুলূকের লাইনে শায়েখের মাকাম কোন  উচ্চস্তরে ছিল আর সাধারণ পাঠকগণ লাভ করতে পারেন প্রভু প্রেমের প্রদীপ্ত শিক্ষার আলো। হযরত শাইখ রহ. তার কৃত এই বাংলা মসনবীর মধ্যে হাকীমুল উম্মত হযরত থানবী রহ. এর উর্দু মসনবীর ব্যাখ্যাকেও অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন। এভাবে বাংলায় তিন খণ্ডে লিখেছেন। শায়েখের বাংলা মসনবীর ৩ খণ্ড পাঠ করার পর পাঠকদের তৃষ্ণা বেড়ে যায়। তারা আফসোস করেন, হযরত শাইখ যদি এভাবে পূর্ণ মসনবী শরিফের বঙ্গানুবাদ করে যেতেন! 
অন্যান্য রচনাবলি 
বাংলা বুখারি, হাদিসের ছয় কিতাব, মসনবী শরিফ ছাড়াও হযরতের আরও কিছু রচনা রয়েছে। হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রহ. সংকলিত  মোনাজাতে মকবুলের বঙ্গানুবাদ হলো তার অন্যতম। মোনাজাতে মাকবুলের মধ্যে প্রধানত হাদিসে বর্ণিত মাসূর দোয়াসমূহ সংকলন করা হয়েছে। খুব অর্থবহ এ দোয়াগুলোর যথার্থ মর্ম উপলব্ধি করা খুব সহজ বিষয় নয় মোনাজাতে মাকবুল সংকলিত হওয়ার পর আকাবিরগণের অনেকেই গুরুত্বের সাথে উস্তাদের কাছে এই কিতাব পড়েছেন। আমাদের শাইখও হযরত সদর সাহেবের কাছে পড়েছেন। নবীয়ে কারীম সা.-এর অন্যতম একটি মুজেযা হলো তার আরবি ভাষার গভীর সাহিত্যমান। আর নবীজির দোয়া সমূহের মধ্যেই সর্বোচ্চ মানের ‘জাওয়ামিউল কালিম’ (ভাব ও অর্থের বিচারে সর্বোচ্চ মানের ভাষা) সন্নিবেশিত হয়েছে। এই জন্য নবীজি সা. এর দোয়াগুলোর পূর্ণভাব উপলব্ধি করা বহু উচ্চমানের এলেমের ব্যাপার। এই জন্য হযরত ফরিদপুরী রহ.-এর বিশেষ আগ্রহের প্রেক্ষিতে হযরত শাইখুল রহ. মোনাজাতে মাকবুলের বঙ্গানুবাদ করেছেন।
এ ছাড়াও বাতিল মতবাদের খণ্ডন ও ভুল চিন্তা-ধারার সমালোচনায় হযরত শাইখের কিছু রচনা রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো ভ্রান্তির বেড়াজালে কাদিয়ানি মতবাদ, পূঁজিবাদ সমাজবাদ ও ইসলাম।
পবিত্র কুরআনে কারিমের কিছু কিছু সূরার ব্যাখ্যাসহ অনুবাদও রয়েছে হযরত শাইখের। এগুলো অপ্রকাশিত। পবিত্র কুরআনে পাকের অনুবাদের ওপর শাইখের শেষ জীবনে করা কিছু কাজ অপ্রকাশিত অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে শাইখের আত্মজীবনীমূলক স্বল্প পরিমাণে লেখা একটি মূল্যবান পাণ্ডলিপি। শীগ্রই ইনশাআল্লাহ এগুলো প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হবে।
 ওয়াজ ও বয়ান
   হযরত শাইখের দীনি খেদমাত মৌলিকভাবে চার ময়দানে হয়েছিল। ১। দরস ও তাদরিস। ২। তাসনীফ ও তালিফ ৩। ওয়াজ ও এরশাদ  ৪। তাহরিক ও সিয়াসাত। 
সৃষ্টিগতভাবে এলমি যওকের প্রাধান্য হযরতের মধ্যে সুপ্ত ছিল। এ জন্যই হযরতের সকল কাজের মধ্যেই এলমি যওকের আলামত প্রকাশ পেতো। ওয়াজ ও এরশাদের কাজও এর ব্যতিক্রম ছিল না। হযরত বয়ান করতেন এবং যথেষ্ট পরিমাণ করতেন আর হযরতের বয়ান হতো এলমি বয়ান। ওয়াজের জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাকে সফর করতে হতো। জীবনের দীর্ঘ একটা অংশ দাওয়াত ও নসিহতের উদ্দেশ্যে এ ময়দানে অতিক্রম করেছেন তিনি। সাধারণভাবে ওয়াজের উদ্দেশ্যে যে সকল মাহফিলের আয়োজন করা হয় তিনি সাধারণত সে সকল মাহফিলেই বয়ান করতেন। এ সকল মাহফিলে সব শ্রেণীর শ্রোতা উপস্থিত থাকে, কাজেই এখানকার বয়ান সকলের উপযোগী হওয়া চাই। যেন মাহফিলে উপস্থিত সর্বশ্রেণীর শ্রোতারাই উপকৃত হতে পারে এমন ভাবে সকলের উপযোগী বয়ান পেশ করা হযরত শায়েখের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। ওয়াজের সূত্রে সারা দেশে হযরতের সাথে সম্পৃক্ত ও তার ভক্তবৃন্দের এক বিশাল হালকা রয়েছে। যারা হযরত শাইখুল হাদীস রহ.-এর বয়ানের আশেক। শাইখুল হাদীস রহ. ঐ সৌভাগ্যবান লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদের ওয়াজ ও বয়ানে হাজারো মানুষের জীবনের মোড় পরিবর্তন হয়ে গেছে। বদদীনের পথকে ছেড়ে দিয়ে খোদার পথের পথিক হয়েছে। ঘোর অন্ধকারে পেয়েছে আলোর সন্ধান। 
ওয়াজের বৈশিষ্ট্য :
শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.  বয়ান ও ওয়াজ সাধারণত  যে সকল বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হতো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোÑ            বোধগম্য ভাষা : 
ক. এমন সহজ ভাষায় কিন্তু আকষর্ণীয়ভাবে হযরত তার বয়ান উপস্থাপন করতেন যে নিতান্ত অশিক্ষিত ও সাধারণ মানুষরাও সহজেই তার বয়ান বুঝতে পারতো। কথ্য ভাষায়ই তিনি বয়ান করতেন যেই ভাষায় সাধারণ মানুষ কথা বলে।
খ. আকর্ষণীয় তবে অকৃত্রিম উপস্থাপনা  
হযরতের বয়ানের উপস্থাপনা জাদুময় হতো। মানুষ তন্ময় হয়ে শুনতে থাকত হযরতের বয়ান। কিন্তু এই আকর্ষণীয় উপস্থাপনার সম্পূর্ণটাই হতো অকৃত্রিম। কৃত্রিমতার লেশমাত্র থাকত না। শুধু বয়ান নয় হযরতের জীবনের কোনো কিছুকেই কৃত্রিমতা স্পর্শ করতে পারে নাই।
গ. বাস্তব জীবনের দৃষ্টান্ত পেশ :
কুরআন হাদিসের মূল শিক্ষাগুলোকে সহজে বোঝানোর জন্য প্রচুর পরিমাণ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতেন। উপমা উল্লেখ করতেন। গ্রামগঞ্জের সহজ সরল মানুষদের জন্য গ্রাম্য বাগধারা ব্যবহার করতেন।
ঘ. আলোচ্য বিষয়ের ওপর আলোচনা :
একটা বয়ান একটা আলোচ্য বিষয়ের ওপরই হতো। এবং সাধারণত  কুরআনুল কারীমের কোনো আয়াত বা কোনো হাদিসকে কেন্দ্র করে বয়ান অগ্রসর হতো। প্রসঙ্গক্রমে কোনো আনুসাঙ্গিক আলোচনা মাঝখানে চলে আসলেও ফিরে ফিরে আবার সেই আয়াত বা হাদিসের আলোচ্য বিষয়ের দিকে চলে যেতেন। যে আয়াত বা হাদিস পড়ে বয়ান শুরু করতেন সেই আয়াত বা হাদিসের বিষয় সুন্দরভাবে খোলাসা করার পর আবার সেই আয়াত বা হাদিসের ওপর বয়ান শেষ করতেন।
ঙ. শ্রোতাদের মান অনুযায়ী আলোচনা :
সুধী ও শিক্ষিত শ্রোতাদের মাহফিলে ইসলামের সৌন্দর্য  ও শ্রেষ্ঠত্ব, ইসলামের সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ জটিল বিষয়ের ওপর প্রমাণ ও যুক্তিনির্ভর এবং তাত্ত্বিক আলোচনা যেমন সাবলীলভাবে করতেন আবার এমন মাহফিল যেখানে সর্বশ্রেণীর শ্রোতা বিদ্যমান সেখানকার আলোচনা এমনভাবে হতো যে ওলামায়ে কেরাম সেখান থেকে যেমন পেতেন ইলমি খোরাক, শিক্ষিত সুধীমহল পেত তাদের রুচিমতো খোরাক আবার নিতান্ত সাধারণ অশিক্ষিত মানুষরাও আখেরাতের পাথেয় লাভ থেকে বঞ্চিত হতো না। এক পাত্রের মধ্যেই যেন বিভিন্ন স্বাদের শরবত বিলিয়ে যেতেন বয়ানের মাধ্যমে। বয়ানের মধ্যে হযরতের এই বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যের নজির খুঁজে পাওয়া বড় মুশকিল।
 রাজনীতি ও   ইসলামি আন্দোলন     
তাদরিস, তাসনিফ, ওয়াজ-এরশাদের পাশাপাশি রাজনীতি ও ইসলামি আন্দোলনের ময়দানেও হযরতের ভূমিকা ও অবদান অসামান্য। ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের সময়ে মুসলমানদের জন্য পৃথক ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন থেকে শুরু করে শারীরিক সক্ষমতার শেষ সময় পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামবিরোধী যে কোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে এবং ইসলামের গৌরব প্রতিষ্ঠার সকল আন্দোলন-সংগ্রামে প্রত্যক্ষ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন শাইখুল হাদীস রহ.। ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের সময় আকাবিরদের সহযোদ্ধা হিসেবে তরুণ আলেমেদীন শাইখুল হাদীস রহ.  পৃথক ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ময়দানে ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তান গঠিত হওয়ার পর নেজামে শরীয়ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিচালিত আন্দোলনেও তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। বিশেষত মাওলনা আতহার আলী রহ. মুফতি শফী রহ. সহ আকাবির ওলামায়ে হকের নেতৃত্বে নেজামে ইসলাম পার্টি গঠিত হলে শাইখুল হাদীস রহ.-এর কার্যকারী সদস্য হিসেবে সারাদেশে সফর করেন এবং নেযামে ইসলামের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।  পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ূব খান ইসলামবিরোধী ফ্যামিলি প্ল্যানিং ল পাস করলে সারা পাকিস্তানজুড়ে তার বিরুদ্ধে ইসলামি জনতার ব্যাপক বিক্ষোভ পালিত হয়। এ সময় পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শাসন উপেক্ষা করে মুজাহিদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। সে আন্দোলনেও শাইখুল হাদীস রহ.  অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়াও আল্লামা ফরিদপুরীর পরিচালিত সকল আন্দোলন-সংগ্রামের প্রধান সংগঠক ও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এভাবে পাকিস্তান আমলের ২৪ বছর আকাবিরদের সহযোদ্ধা হিসেবে ময়দানে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরে ইসলামের পক্ষে রাজনীতির ময়দানে ঠিক যেই ধরনের বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রয়োজন ছিল শাইখুল হাদীস রহ. সেই বলিষ্ঠতা নিয়েই ময়দানে সক্রিয় থেকেছেন। 
স্বাধীন বাংলাদেশে ওলামায়ে কেরামের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ গঠিত হলে হযরত এর সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮১ ইং সালে তার শাইখ হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ময়দানে অবতীর্ণ হলে শাইখুল হাদীস রহ. হাফেজ্জীর দক্ষিণ হস্ত ও সিনিয়র নায়েবে আমির রূপে বিশাল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮১ এর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইসলামি হুকুমতের পক্ষে প্রার্থিতার সূত্রেই হযরত হাফেজ্জীর খেলাফত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সেই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. নিজের বয়োবৃদ্ধির ওজর উল্লেখ করে শাইখুল হাদীস রহ. কে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শাইখুল হাদীস রহ. সহ হাফেজ্জীর সাথীবর্গ হুজুরকেই প্রার্থী হওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করলে অবশেষে হাফেজ্জী হুজুর রহ. সম্মত হন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী খেলাফত আন্দোলনের কর্মকাণ্ডে শাইখুল হাদীস রহ. প্রধান মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮২ সালে ইরান, ইরাক ভ্রাতৃঘাতিযুদ্ধ বন্ধে হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. এক শান্তি মিশনে মধ্যপ্রাচ্য সফরে যান। সেখানেও হযরত শাইখুল হাদীস হাফেজ্জী হুজুরের মুখপাত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কুটনৈতিক ভূমিকা পালন করেন। হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর খেলাফত আন্দোলনের প্রভাব সেই সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে এতোই বেশি হয়ে ছিল যে, বাংলাদেশের বাঘা বাঘা পলিটিশিয়ান এমন কি সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতারাও হাফেজ্জী হুজুরের আন্দোলনে শরীক হয়ে ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনভাবে খেলাফত আন্দোলনের সেই প্রভাব ও জৌলুস বেশি দিন স্থায়ী করা সম্ভব হয়নি। 
 ১৯৮৭ সনে হযরত হাফেজ্জী হুজুরের ইন্তেকাল হয়ে গেলে খেলাফতের এই আহ্বানকে আবার জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৮৯ ইং সালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নামে নতুন সংগঠন গড়ে তোলেন। এরপর থেকে দুই দশক পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের সকল ইসলামি আন্দোলন-সংগ্রামের সর্বসম্মত শীর্ষ নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত থেকে নিরলস ভূমিকা পালন করেন।
মুজাহিদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. হযরত মাওলানা আতহার আলী রহ. ও হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. প্রমুখ আকাবিরদের সহযোগী হিসেবে আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার পর এমন এক সময় এলো যখন পুণ্যাত্মা এই পূর্বসূরিদের কেউই আর হায়াতে রইলেন না। তখন তাদের সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বাতিলের বিরুদ্ধে যথাযোগ্য ভূমিকাই পালন করেছেন শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কুখ্যাত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদির চরম বিতর্কিত ‘স্যাটানিক ভার্সে’স গ্রন্থে ইসলাম ও ইসলামের নবী মুহাম্মদ সা. ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে অবমাননাকর কটূক্তি করা হলে সারা দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। মুসলিম বিশ্বে পালিত হয়েছিল নজিরবিহীন বিক্ষোভ। সেই সময়ে শাইখুল হাদীসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুসলমানগণ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে সর্বাত্মক ও স্বতঃস্ফূর্ত ঐতিহাসিক হরতালও পালিত হয়েছিল। 
এরপর ১৯৯২-এর ৬ই ডিসেম্বর ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুদের দ্বারা  চারশত বছরের পুরনো ঐতিহাসিক অযোধ্যার বাবরি মসজিদ শহীদ হলে সারামুসলিমবিশ্ব প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে। পার্শ্ববর্তী মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মুসলমান সমাজ তখন এই অসভ্যতা ও উগ্রতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে অগ্রণী ও সাহসী ভূমিকা পালন করেছিল। এটা মূলত সম্ভব হয়েছিল হযরত শাইখুল হাদীস রহ. এর আপসহীন নেতৃত্বের বদৌলতে। বাবরি মসজিদ শহীদ হওয়ার পরদিন ৭ ডিসেম্বর ৯২ ভারতীয় ক্রিকেট দল বাংলাদেশে খেলছিল। হযরত শাইখুল হাদীস ভারতীয় উগ্রতা ও ভারত সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ ভারতীয় খেলা চলবে না ঘোষণা দিলে কর্তৃপক্ষ ত্বরিত খেলা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এরপর লাগাতার আন্দোলনের একপর্যায়ে শাইখুল হাদীস বাবরি মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্যে অযোধ্যা অভিমুখে লংমার্চ ঘোষণা করেন। ১৯৯৩ এর ২রা ফেব্র“য়ারি ঢাকা থেকে শুরু হয় লাখো লাখো জনতার লংমার্চ। ৪ঠা ফেব্র“য়ারি ভারত সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছালে এক পর্যায়ে লংমার্চে গুলি চালানো হয় এবং ২ জন লংমার্চকারী শাহাদাত বরণ করেন। ভারত সরকারের ইসলামবিরোধী জঘন্য ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কর্মসূচি হিসেবে শাইখুল হাদীসের এই লংমার্চ গোটা মুসলিমবিশ্বে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা দুনিয়ার আলেম সমাজ এই সাহসী ভূমিকার জন্য শাইখুল হাদীসকে মোবারকবাদ জানান।
এমনিভাবে দেশের অভ্যন্তরেও ইসলাম বিদ্বেষী মহল বা অনৈসলামি সরকারের পক্ষ থেকে যখনই ইসলামের ওপর কোনো হামলা  চলেছে তৎক্ষণাৎ তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন শাইখুল হাদীস আজিজুল হক রহ.। শিখা চিরন্তন নামে শিরকের সংস্কৃতি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিল ইসলাম বিদ্বেষী সরকার রাস্তার মোড়ে মোড়ে নির্মাণ শুরু করা হয় মূর্তি। এই অগ্নি ও মূর্তিপূজার ন্যায় শিরক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন শাইখুল হাদীস  আল্লামা আজিজুল হক রহ.। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান ফতোয়া নিষিদ্ধ করার পাঁয়তারা করেছিল একটি গোষ্ঠী, তার বিরুদ্ধেও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেন তিনি। খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মান্তরিত করার অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ছিলেন এক সাহসী কণ্ঠ। সারাদেশে হযরত শাইখুল হাদীস খ্রিস্টান এনজিওদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করার লক্ষ্যে সকল ইসলামি সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে তোলেন ইসলামী ঐক্যজোট। যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতি পরিচিত ও অনেক প্রভাব সৃষ্টিকারী একটি নাম।
শাইখুল হাদীস আজিজুল হক রহ. মূলত এলমী যওকের মানুষ ছিলেন। কিন্তু  সিদ্দীকী সেই চেতনা তার মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল যে, ‘দীনের কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে আর আমি আজিজুল হক জীবিত থাকবো’? সেই চেতনাই তাকে ইলমি মাশগালার মসনদ থেকে সংগ্রামের ময়দানে টেনে আনতো। আর এই চেতনার বরকতেই হয়তো আল্লাহ তা’য়ালা হযরতের ব্যক্তিত্বকে এমন প্রভাবশালী করেছিলেন যে তার হুঙ্কারে বাতিলের মসনদ কেঁপে উঠতো। ইসলামের ওপর কোনো হামলা তিনি তার শক্তি থাকা অবস্থায় বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেননি।  হযরত শাইখ রাজনীতি করেছেন, রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন কিন্তু তার রাজনীতি ক্ষমতা গ্রহণ বা ক্ষমতাভোগ করার জন্য ছিল না কখনও। এমনকি ক্ষমতা কেন্দ্রিক কর্মসূচিতেও তিনি খুব আগ্রহী ছিলেন না। দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ইসলামের গৌরব রক্ষাই ছিল তার রাজনীতির মূল দর্শন। এ কারণেই দেশে ইসলামবিরোধী কোনো পদক্ষেপ, বা ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রের সময় ইসলাম বিদ্বেষীরাও হযরত শায়েখের কথা স্মরণে রাখতে বাধ্য হতো।
সর্বোপরি শাইখুল হাদীস রহ. তার বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে বাংলাদেশে হকপন্থীদের প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। তার ইখলাসপূর্ণ আপসহীন নেতৃত্বের ওপর সকলের আস্থা ছিল। তার একান্ত সমালোচকরাও তার নেতৃত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। তিনি এমন এক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন  যে তার আহ্বানে দেশের ইসলামি অঙ্গনে সর্বজনীন ঐক্য সূচিত হতো। হযরত শাইখ যখন আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়লেন এবং একপর্যায়ে ময়দানে ভূমিকা পালন করতে সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়লেন তখন দেশের আলেম সমাজ ও ইসলাম দরদি মানুষেরা অনুভব করল হযরতের অনুপস্থিতি কত বড় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে অনেক বড় বড় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিন্তু ইসলামপন্থীরা আগের মতো সম্মিলিত কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে নাই একজন মাওলানা আজিজুল হকের অভাবে।  শেষ কথা শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের জীবন সম্পর্কে এক কথায় মন্তব্য করতে চাইলে বলা যায়, তিনি যাপন করেছেন ক্লান্তিহীন কর্মময় এক জীবন। এক জীবনে এতো কাজ এবং সবগুলো কাজ এতো চমৎকারভাবে করার নজির সমকালীন তো বটেই নিকট অতীতেও পাওয়া কঠিন। জীবনের ব্যস্ততম ও বার্ধক্যের দুর্বল সময়েও দরসের যে পাবন্দী তিনি করেছেন নবীন শিক্ষকদের পক্ষেও সেটা সম্ভব হতো না। দরসের এই এহতেমাম ও নিয়মানুবর্তিতার পাশাপাশি নিয়মিতই তাসনিফের টেবিলে বসে ক্লান্তিহীনভাবে লিখে যেতেন। আবার দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে উম্মতের জন্য দীনের দাওয়াতের তোহফা নিয়ে সুদূর কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাহফিলে তাশরিফ নিয়ে যেতেন। এরই মধ্যে যদি বিশেষ কোনো রাজনৈতিক হাঙ্গামার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে গেছে তো জাতি মিল্লাত ও দীনের ইজ্জত হেফাজতের জিম্মাদারি কাঁধে তুলে নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন এবং বিস্ময়করভাবে তাদরিস, তাসনিফ ও ওয়াজ এ সকল কাজ সুচারুরূপে করার পাশাপাশি। সারারাত সফর করে কোনো মাহফিল থেকে শেষ রাতে ফিরে এসে সাথে সাথেই যথা নিয়মে বেরিয়ে পড়েছেন দরসের উদ্দেশ্যে। দুপুর পর্যন্ত ধারাবাহিক দরসের দায়িত্ব পালন করে দুপুরে একটু বিশ্রাম নিয়ে বসে পড়েছেন লেখার টেবিলে। বাদ আসর রাজনৈতিক প্রোগ্রাম শেষে সন্ধ্যায় কোনো মাহফিলের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সফরের যাত্রা। সারা রাতের কষ্টকর সফরের পর পরের দিন আবার সেই পূর্বের মতোই সকল কাজগুলো যথাসময়ে করে যাওয়া মাঝে-মধ্যকার দৃশ্য নয়; বরং শাইখুল হাদীসের কর্মময় জীবনের প্রায় নিয়মিত চিত্র ছিল এটি। এভাবেই সকল ক্লান্তি, শ্রান্তি, অলসতা, অবসাদকে দুপায়ে দলে পৌনে শতাব্দীকাল ব্যপ্ত শুধু কর্ম আর কর্ম এমন এক বিস্ময়কর জীবন অতিক্রম করে জীবন সায়াহ্নে তিনি ঢলে পড়েছিলেন বার্ধক্যের কোলে। কর্ম জীবনে বিশ্রামের সুযোগ পাননি বা পেয়েও গ্রহণ করেননি বলেই হয়তো আল্লাহ তা’য়ালা তার কর্মবীর এই পেয়ারা বান্দাকে বার্ধক্যের জালে আবদ্ধ করে একটু বিশ্রামের সুযোগ করে দিয়েছিলেন শেষ জীবনে।  শতাব্দীকাল ব্যাপ্ত তার জীবনের শেষ দুটি বছর এমনভাবে কেটেছে যেখানে ছিল না কোনো কাজ, ছিল না কাজের সুযোগ। অক্ষম হয়ে পরেছিল তার শরীর। দুর্বল হয়ে গিয়েছিল স্মৃতি। জীবনের সব স্মৃতি বিস্মৃত হয়ে অম্লান ছিল শুধু প্রিয়তম মাওলার নাম। অস্ফুট স্বরে, হয়তো মনেরও অজান্তে জীবনের শেষ নিঃশ্ব^াস অবধি ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলে জপে গিয়েছেন প্রিয়তমের নাম। এভাবেই নীরবে সমাপ্তি ঘটেছে একটি শতাব্দীর। রহমতের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন শতাব্দীর বিস্ময় পুরুষ শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.। 
লেখক : সাহেবজাদা, শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.

Powered by Create your own unique website with customizable templates.