• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী


তিনি কেন অসাধারণ
জুবাইর আহমদ আশরাফ

বাংলাদেশের অন্যতমশ্রেষ্ঠ হাদিস বিশারদ, বাংলা ভাষায় বুখারি শরিফের প্রথম অনুবাদক ও ব্যাখ্যাকর্তা, শত-সহস্র ওলামায়ে কেরামের  ওস্তাদ, গোটা দেশবাসীর একান্ত শ্রদ্ধাভাজন শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেবের পরিচয়-পরিচিতি বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। তার সুনাম সুখ্যাতি এতো ব্যাপকতা লাভ করার কারণ কী? বহুবিধ কারণ থাকলেও অন্যতমপ্রধান কারণ সম্ভবত তিনটি। 
এক. তিনি আল্লাহ প্রদত্ত প্রচুর মেধা ও স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। মেধা আল্লাহ তা’য়ালার বিশাল এক নেয়ামত। এ মহামূল্যবান নেয়ামত অর্জনে কারো কোনো ক্ষমতা নেই। সম্পূর্ণভাবেই তা আল্লাহ তা’য়ালর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে এ নেয়ামত দান করে ধন্য করেন।
দ্ইু. তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী, কষ্টসহিষ্ণু ও দায়িত্বপরায়ণ। ছাত্র জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করে পড়াশোনা করেন। তিনি যে পরিমাণ পরিশ্রম ও গভীর অভিনিবেশ সহকারে লেখাপড়া করেছেন, তার বিবরণ বর্তমান প্রজন্মের কাছে গল্প বলে মনে হবে। আল্লাহ তা’য়ালা যাকে প্রখর মেধা দিয়েছেন, সে যদি তা সঠিক পথে কাজে লাগায়, তবে উভয় জগতের সাফল্য তার দোরগোড়ায় উপস্থিত হবে। প্রখর মেধার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম যুক্ত হলে তো সোনায় সোহাগা। প্রখর ধীমান ব্যক্তি যদি গভীর সাধনায় নিমগ্ন হয় তবে সে সাফল্যের শীর্ষচূড়ায় আরোহণ করতে সক্ষম হয়। আমাদের হযরতের   ব্যাপারেও এরূপই ঘটেছিল।
তিন.  তিনি পিতামাতাসহ অনেক বড় বড় ব্যক্তির নেকদৃষ্টি ও নেক দোয়া লাভে ধন্য হন। এই বিরল নেয়ামত অনেকের ভাগ্যেই জোটে না। কেউ কেউ এ নেয়ামতকে কোনোরূপ গুরুত্বই দেয় না। কোনো কোনো লোক এর দ্বারা লাভবান হওয়ার সুযোগ পায় না। আবার অনেকে সুযোগ পেলেও অবহেলায় অনাদরে এর দ্বারা উপকৃত হতে সক্ষম হয় না। হযরত শাইখুল হাদীসের ক্ষেত্রে এর কোনোটিই ঘটেনি। তিনি বড় বড় মনীষীদের সোহবতও পান, তাদের নেক দোয়াও লাভ করেন। তীক্ষè মেধাসম্পন্ন ব্যক্তি যখন যথানিয়মে সাধনায় মশগুল হয়, এর ওপর তার প্রতি যদি গুরুজনের সুদৃষ্টি ও আশীর্বাদ থাকে, তবে তো ‘নূরুন আলা নূর’। তার সাফল্য অবধারিত। সে যশ ও খ্যাতির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে সমর্থ হয়। আমার মনে হয়, প্রধানত এ তিনটি কারণেই হযরত শাইখুল হাদীসের সুনাম-সুখ্যাতি সারা দেশব্যাপী, সারা বিশ্বব্যাপী।
হযরত শাইখুল হাদীস মরহুম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানাধীন কলমা গ্রামে ১৯১৯ সালে জন্মলাভ করেন। কলমায় তার নানার বাড়ি। তার পৈতৃক নিবাস একই থানার ভিরিচখা গ্রামে। তার নানি অকালে বিধবা হয়ে কলমাতেই দুই কন্যা নিয়ে জীবন যাপন করতে থাকেন। তার জন্মের ফলে গোটা পরিবার খুবই আনন্দিত হয়। সদ্যোজাত শিশুর কল্যাণ কামনা করে তার বিধবা নানি এবং পিতৃহারা মা ও খালা তার জন্য অনেক দোয়া করেন। হাদিস শরিফে আছে, আল্লাহ তা’য়ালা বিপদগ্রস্ত ও ভগ্নহৃদয়সম্পন্ন লোকদের করুণ আর্তনাদ শুনে থাকেন। তাই তাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। কালে এ শিশুই প্রভূত কল্যাণপ্রাপ্ত হন।
চার বছর বয়সে তিনি মাকে হারান। এতো অল্প বয়সে মাকে হারানোর কারণে এ অসহায় শিশুর প্রতি পিতা এরশাদ আলীর আদর, যতœ ও দোয়া বহুগুণ বেড়ে যায়। এ শিশু অতি শৈশবে মাতৃøেহ থেকে বঞ্চিত হলেও, পিতার øেহমাখা দোয়ার ফলে মহান ফেরেশতাদের নিবিড় যতেœ বড় হতে থাকেন। 
পাঁচ বছর বয়সে কলমা গ্রামের মক্তবে তার আলিফ বা তা পড়া শুরু হয়। অল্প দিন পর তার মমতাময়ী নানিও দুনিয়া ছেড়ে আল্লাহ পাকের সান্নিধ্যে চলে যান। মক্তবে তার প্রথম উস্তাদ ছিলেন হযরত মাওলানা আবদুল মজীদ। যিনি দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে শিক্ষা লাভ করে আসেন। ইনি অসীম মমতা নিয়ে তার প্রাথমিক তা’লীম ও তরবিয়ত করতে থাকেন।  এ উস্তাদেরও øেহদৃষ্টি ও আশিস এ শিশুছাত্রের প্রতি পড়তে থাকে। তৎকালে হযরত শাইখুল হাদীস সাহেবের পিতা হাজী এরশাদ আলী সাহেব ব্রাহ্মবাড়য়ার সড়ক বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ব্রাহ্মবাড়িয়া শহরে অবস্থিত জামিয়া ইউনুসিয়া তখন থেকেই বাংলাদেশের একটি নামকরা মাদরাসা হিসেবে পরিচিত। হাজী এরশাদ আলী তার এ মাতৃহারা শিশুপুত্রকে জামিয়া ইউনুসিয়ায় ভর্তি করে দেন। সে সময় এ মাদরাসায় পড়াতেন দেশবিখ্যাত আলেমগণ। তাদের মধ্যে অন্যতম মুজাহিদে আজম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুস, মাওলানা মুহ্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর, হযরত মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব পীরজি হুজুর ও মাওলানা সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
হাজী এরশাদ আলী সাহেব অতি আদরের এ পুত্রকে হযরত ফরিদপুরী সাহেবের হাতে তুলে দেন। হযরত ফরিদপুরী মরহুম এ ছাত্রের মাঝে তীক্ষè মেধা ও পড়ালেখার প্রতি গভীর মনযোগের পরিচয় পান। তাই তিনি এ শিশু ছাত্রকে অপত্য øেহ ও বাৎসল্যে পড়াতে ও তরবিয়ত করতে থাকেন। যেহেতু তিনি তখন মাতৃহারা ছিলেন তাই হযরত ফরিদপুরীসহ সকল ওস্তাদই তাকে অতীব øেহের দৃষ্টিতে দেখতেন।
কয়েক বছর পর হযরত ফরিদপুরী, হযরত পীরজি হুজুর ও হযরত হাফেজ্জী হুজুর ঢাকার বড়কাটারা মাদরাসায় চলে আসেন। তাদের প্রিয়তম øেহের ছাত্রও পিতার অনুমতিতে বড়কাটারায় এসে ভর্তি হন। বড়কাটারায় হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী সাহেবের উপাধি হয় সদর সাহেব নামে। কারণ তিনি ছিলেন সদরুল মুদাররিসীন বা প্রধান শিক্ষক। হযরত সদর সাহেব হুজুর শাইখুল হাদীস সাহেবকে শ্রেণীকক্ষের বাইরেও প্রাইভেটভাবে বিভিন্ন কিতাব পড়ায়েছেন। তিনি শুধু কিতাবই পড়াননি, বরং তাকে একজন আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তোলার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই তিনি সম্পন্ন করেন।  হযরত শাইখুল হাদীস অত্যন্ত কঠোর সাধনা করে বড়কাটারা মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এ সময় তিনি যুগবিখ্যাত মহান ব্যক্তিদেরকে শিক্ষক হিসেবে পান। তাদের মধ্যে হযরত সদর সাহেব, হযরত মাওলানা যফর আহমদ উসমানী, হযরত মাওলানা রফিক আহমদ কাশ্মীরি, হযরত হাফেজ্জী হুজুর, হযরত পীরজি হুজুর ও হযরত মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ রহ. অন্যতম। 
হযরত শাইখুল হাদীস সাহেবের কঠোর সাধনার সঙ্গে সঙ্গে এসব মহামনীষীর দোয়া, সাহচর্য ও সতর্ক তত্ত্বাবধানের ফলে তিনি জীবনে এতো বড় হতে সক্ষম হন।
বিশ্ববিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ এলাউস সুনান রচয়িতা হযরত মাওলানা যফর আহমদ উসমানীর কাছে বুখারি শরিফ পড়ার পর পুনরায় হাদিস ও তাফসিরে গভীর জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে ১৯৪৩ সালে তিনি ডাভেল গমন করেন। ডাভেল হল বর্তমান ভারতের মুম্বাই এবং নিকটবর্তী সুরত জেলায়। সেখানে আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী বুখারি শরিফ পড়াতেন। হযতর শাইখুল হাদীস তার কাছেই আরও গভীর মনোযোগসহ দ্বিতীয়বার বুখারি শরিফ পড়েন। আল্লামা উসমানী শাইখুল হাদীস সাহেবের ধীশক্তি ও পড়ালেখার প্রতি গভীর মনোযোগ লক্ষ করে তাকে অনেক মহব্বত করতেন। শাইখুল হাদীস  উসমানী সাহেবের দরসে বুখারি শরিফের যে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ শুনতেন, তা খাতায় নোট করে নিতেন। এ নোট বৃদ্ধি পেতে পেতে দীর্ঘ ১৮০০ পৃষ্ঠায় বি¯তৃত হয়। পরবর্তীতে ফজলুল বারী নামে দুই খণ্ডে শুরুর দিকের কিছু অংশ মুদ্রিত হয়। পরিপূর্ণ নোটখানি গ্রন্থাকারে মুদ্রণের প্রক্রিয়া চলছে। আল্লাহ চাহে তো অচিরেই প্রকাশ পেয়ে যাবে।
বড়কাটারা মাদরাসাতেই উস্তাদদের একান্ত আগ্রহে হযরতের কর্মজীবনের সূচনা হয়। তিনি এখানে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। ১৯৫০ সালে লালবাগ শাহী মসজিদ সংলগ্ন জামেয়া কুরআনিয়া প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এখানে চলে আসেন। লালবাগ জামেয়া প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই বছর পর হিজরি ১৩৭২ সাল মোতাবেক ১৯৫২ সাল থেকে তিনি বুখারি শরিফ পড়ানোর দায়িত্ব পান। ১৯৫২ সাল থেকে প্রায় ২০১০ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে সুদীর্ঘকাল তিনি বুখারি শরিফের দরস দেন। যখন থেকে তিনি বুখারি শরিফ পড়াতে শুরু করেন, তখন থেকেই এতো গুরুত্ব দিয়ে তা পড়াতেন যে, তার উস্তাদ ও সহকর্মীগণ তাকে শাইখুল হাদীস উপাধিতে ভূষিত করেন। গত পঞ্চশ বছর ধরে এ উপাধি এতো ব্যাপকতা লাভ করে যে, সারা বাংলাদেশে শাইখুল হাদীস  বললে তাকেই সকলে বুঝে থাকে। এটিও তার মকবুলিয়াতের অন্যতম এক প্রমাণ।
হযরত শাইখুল হাদীস রহ.-এর অন্যতম এক কীর্তি বাংলাভাষায় বুখারি শরিফের অনুবাদ ও ব্যাখ্যাগ্রন্থ প্রকাশ। দীর্ঘদিন সাধনা করে উস্তাদদের দোয়ার বদৌলতে তিনি এ বিশাল কাজ সম্পন্ন করেন। বাংলাভাষায় তার পূর্বে আর কেউ বুখারি শরিফের তরজমা করেননি। তিনি এ গ্রন্থে কেবল তরজমা করেই ক্ষান্ত হননি, বরং স্থানে স্থানে প্রয়োজন মতো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও করেছেন। 
হযরত শাইখুল হাদীস  এতো অধিক এলেমের অধিকারী হয়েও শুধুমাত্র নিজের এলেমের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না। বরং উস্তাদদের দোয়া ও নেক তাওয়াজ্জুহকে পুঁজি করে তিনি এ কাজে হাত দেন। বাংলা বুখারি শরিফের প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় তার  উস্তাদ হযরত ফরিদপুরী সাহেব লিখেছেনÑ ‘যখন বাংলার অভাব মিটাইবার জন্য বুখারি শরিফের বাংলা অনুবাদ করা তিনি শুরু করিয়াছিলেন তখন আমার খুশির আর সীমা রহে নাই। আল্লাহর শোকর করিয়াছি, মক্কা  শরিফে গিয়া হাতীমে, মাতাফে, মাকামে ইবরাহীমে দোয়া করিয়াছি। মদিনা শরিফের রওজা পাকে দাঁড়াইয়া দোয়া করিয়াছি এই বিরাট খেদমত আল্লাহ পাক তাহার দ্বারা নিন; বাংলার মুসলমানদের জরুরত মিটান। শাইখুল হাদীস রহ. সাহেব লিখিয়া আমাকে দেখাইয়াছেন; অনেক জায়গায় আমি তাহাকে বুঝাইয়া দিয়াছি; অনেক জায়গায় দেখিয়া কিছু কিছু সংশোধন তার দ্বারাই করাইয়াছি। আল্লাহ পাক তাহার দরজা বুলন্দ করুন।’
প্রিয়তম ছাত্রের জন্য একজন মুখলিস উস্তাদের এ দোয়া আল্লাহ তা’য়ালা কবুল করেন। ছাত্র দ্বারা এ খেদমত যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়। বাংলাভাষী লক্ষ লক্ষ মুসলমান এর দ্বারা উপকৃত হন। 
শুধু বাংলাদেশের মুসলিম জনসাধারণই নন, বরং পশ্চিম বাংলার হিন্দু লেখক ও পণ্ডিতেরাও এ বাংলা বুখারি শরিফ দ্বারা প্রভূত উপকৃত হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট লেখক, ‘প্রিয়তম নবী’ গ্রন্থের সংকলক জনাব শিশির  দাস প্রিয়তম নবীর ভূমিকায় লিখেছেনÑ ‘এই প্রিয়তম নবী সংকলন রচনায় অপরিমিত সাহায্য নিয়েছি বাংলাদেশের হামিদিয়া লাইব্রেরি লি. ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত আজিজুল হক  সাহেব অনূদিত সাত খণ্ড বুখারি শরিফ থেকে। এ এক বিস্ময়কর মহাগ্রন্থ। মূল লেখকের ষোল বছরের পরিশ্রমের সঙ্গে তার অনুরাগ, পাণ্ডিত্য, মনীষা, অত্যুচ্চ মননশীলতা মিশে এই গ্রন্থ সম্পন্ন হয়েছে। আজিজুল হক সাহেব অনূদিত ও ব্যাখ্যা সমৃদ্ধ সাত খণ্ড বুখারি শরিফ মুসলমান শাস্ত্র ও ধর্মের এনসাইক্লোপিডিয়া বলা যায়। এই গ্রন্থের কাছে আমার ঋণ অপরিশোধ্য।’
শাইখুল হাদীস সাহেব দুইজন বিশ্ববিখ্যাত বড় আলেমের কাছে দুইবার পূর্ণাঙ্গ বুখারি শরিফ অতি যতœসহকারে অধ্যয়ন করেন। আরবি ও উর্দু ভাষায় তার দক্ষতা ও পারদর্শিতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাভাষায় বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ কেন লিখলেন। অথচ আরবি বা উর্দুতে লিখলে বহির্বিশ্বে  তার পরিচিতি আরও অধিক হতো। এর অন্যতম কারণ হলো, বাংলাভাষী মুসলমান নানা দিক থেকে পিছিয়ে ছিল। বিশেষ করে, বাংলাভাষায় ইসলামি পঠন সামগ্রীর অতীব দৈন্যদশা ছিল। বাংলাভাষার এ শূন্যতা পূরণের জন্যই তিনি এগিয়ে আসেন। আল্লাহর শোকর, তার এ পরিশ্রম কালজয়ী হয়ে রইল। যতো দিন বাংলাভাষা থাকবে ততোদিন তিনি বুখারি শরিফের প্রথম অনুবাদক  ও ব্যাখ্যাকার হিসেবে অমর ও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।  বুখারি শরিফের পর তিনি ‘মুসলিম শরিফ ও অন্যান্য হাদিসের ছয় কিতাব’ নামক  হাদিস শাস্ত্রের অনুপমগ্রন্থ বাংলাভাষায় অনুবাদ ও প্রয়োজন মতো ব্যাখ্যা করে প্রকাশ করা আরম্ভ করেন।  এছাড়াও তিনি মাওলানা রূমীর ফারসী ভাষায় লিখিত অমর কাব্যগ্রন্থ মসনবীর বঙ্গানুবাদ করেন।
এসব অক্ষয় কীর্তি ছাড়াও তিনি বাংলা ভাষায় ছোট-বড় আরও কয়েকখানি পুস্তক পুস্তিকা লেখেন। তন্মধ্যে পুঁজিবাদ সমাজবাদ ও ইসলাম, ভ্রান্তির বেড়াজালে কাদিয়ানী মতবাদ, মাসনূন দোয়া সম্বলিত মুনাজাতে মকবুল এর অনুবাদ অন্যতম।
শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব কর্মজীবনে বুখারি শরিফের তাদরিস ও তাসনিফ ছাড়াও সারা দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সম্মেলনে বয়ান-বক্তৃতা ও ওয়াজ নসিহত করেন। তার জীবনের  শেষ দিকের কিছু মূল্যবান বয়ান বক্তৃতার সংকলন ‘সত্যের পথে সংগ্রাম’ ও ‘সফল জীবনের পথে’ নামে মুদ্রিত হয়েছে। এর মধ্যে সকল শ্রেণীর পাঠকের জন্যই হেদায়েতমূলক মূল্যবান উপদেশ রয়েছে। 
হযরত হাফেজ্জী হুজুর ১৯৮১ সালে খেলাফত আন্দোলন নামক রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। হাফেজ্জী হুজুর এর সংগঠনের আমীর ও হযরত শাইখুল হাদীস রহ. সিনিয়র নায়েবে আমীর মনোনীত হন। সে সময় শাইখুল হাদীস লালবাগ জামিয়ায় ও হাফেজ্জী হুজুর রহ. প্রতিষ্ঠিত কামরাঙ্গীরচরের নূরিয়া মাদরাসায় বুখারি শরিফ পড়াতেন। খেলাফত আন্দোলনের সকল জরুরি মিটিং ও পরামর্শ সভা নূরিয়া মাদরাসাতেই হতো।  পরামর্শ সভায় বসে হাফেজ্জী হুজুর রহ. বলতেন, আজিজুল হক  কোথায়? বলা হতো, তিনি হাদিসের দরসে আছেন। হুজুর বলতেন, তাকে নিয়ে এসো। এভাবে প্রতি সভাতেই পূর্বে জানানো সত্ত্বেও তাকে পুনরায় ডেকে আনতে হতো। একদিন হাফেজ্জী হুজুর নির্বাহী কমিটির সভায় বসে বলেন, মাওলানা আজিজুল হক সাহেবকে দরস থেকে ডেকে নিয়ে আসো। একাধিক ব্যক্তি তখন বললো হুজুর! যাকে এভাবে ডেকে ডেকে আনতে হয়, তাকে দিয়ে আন্দোলনের কী কাজ হবে? হাফেজ্জী হুজুর রহ. তখন বলেন, মেয়ে বিবাহ দিতে অলঙ্কারের প্রয়োজন হয়। অলঙ্কার ছাড়া বিবাহ হয় না। অথচ অলঙ্কার কোনো কাজ করে না, অলঙ্কার দ্বারা কোনো কাজ হয়ও না।  অলঙ্কার সাজিয়ে গেুছিয়ে বাক্সে তুলে রাখা হয়। তেমনি মাওলানা আজিজুল হক তোমাদের অলঙ্কার। তাকে ছাড়া তোমরা সমাজে বিকাবে না। কাজ তোমরাই করবে। তিনি কোনো কাজ না করলেও তোমাদের প্রয়োজনে তাকে সঙ্গে রাখতে হবে। এই হলো শাইখুল হাদীস রহ. সম্পর্কে তার দীর্ঘকালের উস্তাদ হাফেজ্জী হুজুরের মূল্যায়ন। 
শুধুমাত্র এই একটি কথা দ্বারই প্রমাণিত হয়, হাফেজ্জী হুজুর সর্বদা আল্লাহর জিকির আদায়কারী একজন বুযুর্গের  পাশাপাশি একজন প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ বুদ্ধিজীবীও ছিলেন।  এটি একটি দর্শন। হাফেজ্জী হুজুরের এ চিন্তাধারা আমাদের জীবনে বাস্তবায়িত করতে হবে। সকলকে দিয়ে সব কাজ হয় না। সকলকে এক পাল্লায় মাপা যায় না। ইলম, যোগ্যতা, পাণ্ডিত্য ও বিচক্ষণতাকে পৃথকভাবে মূল্যায়ন করতে হয়। তাকে শ্রমের কাতারে ফেলা যায় না ।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে অনুধাবন করা যায়। সেনাবাহিনীর উচ্চাপদস্থ অফিসারগণ বছরের পর বছর কোনো কাজই করেন না। অথচ তাদের পেছনে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। তাদের পেছনে এতো পয়সা খরচ করার উদ্দেশ্য হলো, যুদ্ধ বাঁধলে কঠিন মুহূর্তে তারা যেন তাদের প্রজ্ঞার আলোকে সুপরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধন করতে পারেন। অতএব কোনো অর্বাচীন যদি বলে, যারা বছরের পর বছর কোনো কাজ করে না, তাদেরকে এভাবে পুষে কী লাভÑ তবে তা কূপমণ্ডুকতা ছাড়া আর কিছুই হবে না। 
উনিশ শ তিরাশি সালের জুলাই মাসে আমি লালবাগ মাদরাসায়  নিচের দিকে ভর্তি হয়। তখনই হযরত শাইখুল হাদীস সাহেবকে প্রথম দেখি। তিনি চাঁদতারা মসজিদ সংলগ্ন বাসা থেকে পায়ে হেঁটে লালবাগ মাদরাসায় যেতেন। আবার বুখারি শরিফের দরস দিয়ে হেঁটে বাসায় আসতেন। তখন তার হাঁটাচলা ও পোশাক-আশাকে মনে হতো একজন মর্দে মুজাহিদ হেঁটে যাচ্ছেন। তিনি ছিলেন স্বাস্থ্যবান, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল সুগঠিত। তার ন্যায় মুহাদ্দিসদের জন্য নবী করীম সা.-এর বিশেষ দোয়া রয়েছে। তা হলো, ‘যে ব্যক্তি আমার হাদিস শুনে তা সংরক্ষণ করে অতঃপর যথাযথভাবে তা অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়, আল্লাহ তা’য়ালা তার চেহারা তরতাজা রাখুন। ’
এ হাদিসের বাস্তব নমুনা হযরত শাইখুল হাদীস রহ.-এর চেহারায় পরিলক্ষিত হতো। তার চেহারায় আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নূর ছিল। 
আমরা তখন নিচের ক্লাসে পড়তাম। দূর থেকে তাকে সালাম দিতাম। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে উস্তাদদের উপদেশমূলক বয়ান থাকলে সেখানে তিনিও সংক্ষিপ্তভাবে কথা রাখতেন। তার উপদেশ ছিল মিষ্টি মধুর, হাস্যরসে ভরা। তার আলোচনায় ছাত্ররা খুবই আনন্দ পেত। তিনিও হাসতেন। হাসলে তার দাঁতগুলো মুক্তাদানার ন্যায় চকচক করতো। তখন তিনি লালবাগ কেল্লার ভেতরের মসজিদে জুমার নামাজ পড়াতেন। তার হৃদয়গ্রাহী তিলাওয়াত ও তত্ত্বমূলক আলোচনা শোনার  জন্য ছাত্ররা অধীর আগ্রহে থাকত। জুমার দিন কেল্লার মসজিদে হতো উপচে পরা ভিড়। সে বছরই বায়তুল মুকাররমের দক্ষিণ গেটে খেলাফত আন্দোলনের উদ্যোগে এক সমাবেশ হয়। সে সমাবেশে হযরত শাইখুল হাদীস রহ. জোর চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলেনÑ বাংলাদেশে যে সম্পদ রয়েছে সে সম্পদ যদি সুষ্ঠুভাবে ও ইনসাফের ভিত্তিতে বণ্টিত ও পরিচালিত হয় তবে দেশে কোনো অভাব অনটন বা কোনো দিক থেকে সংকট থাকবে না। তার এ চ্যালেঞ্জ পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রচারিত হয় এবং দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এর ফলে সাংবাদিক ও ইংরেজি শিক্ষিত লোকেরা তাকে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে উল্লেখ করতেন। 
১৪৩৩ হিজরির রমজান মাসের কিছুদিন পূর্বের কথা। একজন রোগী দেখতে গিয়েছি শাহবাগের বারডেম হাসপাতালে। নিচতলায় হযরত শাইখুল হাদীসের বড় ছেলে মাহমুদ ভাইকে দেখতে পেয়ে সালাম মুসাফাহা করি। তিনি বলেন, আব্বা কয়েক দিন যাবত এখানে ভর্তি ছিলেন। এখন নিয়ে যাচ্ছি। মাহমুদ ভাইয়ের পেছনে পেছনে বার  অথবা চৌদ্দ তলায় যাই। রুমের সামনে পৌঁছে দেখি, তাকে হুইল চেয়ারে বেিসয় বের করা হচ্ছে। আমি সালাম দেই। তিনি মাথা নেড়ে জওয়াব দেন। পেছনে পেছনে গাড়ি পর্যন্ত আসি। বিদায়ের সময় মাহমুদ ভাই বলেন, বেশি করে দোয়া করবেন। গাড়ি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন লোক অপলক নেত্রে গাড়ির দিকে তাকিয়ে রইল। এই হযরতকে আমার শেষ দেখা। 
অবশেষে এল রমজান মাস। ১৮ রমজান তিনি মাহবুবে হাকীকির একান্ত সান্নিধ্যে চলে যান। রমজান শরিফে তার বিদায় গ্রহণও আল্লাহর প্রিয়ভাজন হওয়ার আরও একটি নিদর্শন। হাদিসের ভাষ্যমতে রমজানে যাদের মৃত্যু হয় তারা বড়ই সৌভাগ্যশীল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা এই সৌভাগ্য দ্বারাও তাকে আপ্লুত করেন।
পরদিন এগারটায় জাতীয় ঈদগাহে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পৌনে দশটায় পুরান ঢাকার আবদুল হাদী লেন থেকে কয়েকজন মুসল্লিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঈদগাহে উপস্থিত হই। ঈদগাহ তখন লোকে লোকারণ্য। মানুষের ভিড় ঠেলে সামনে অগ্রসর হতে চেষ্টা করি। বাংলাদেশের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম ও রাজনীতিবিদগণ জানাজার পূর্বে তার বৈশিষ্ট্য ও অবদান নিয়ে আলোচনা করেন। 
হযরত শাইখুল হাদীস চলে গেলেও তার নেক আমল বন্ধ হয়নি। তিনি অনেক মাদরাসা কায়েম করেন। এগুলো সদকায়ে জারিয়া হওয়ার কারণে কেয়ামত পর্যন্ত এগুলোর মাধ্যমে তার আমলনামায় নেকি পৌঁছতে থাকবে। এ ছাড়া তার ঔরসজাত এমন অনেক নেক সন্তান ও সন্তানের সন্তান রয়েছে যারা তার জন্য দোয়া করতে থাকবে। এভাবেও তার সওয়াব বাড়তে থাকবে। আর তিনি মুখে ও লেখায় যে দীনী ইলম ছড়িয়ে গেছেন এর দ্বারা কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর কোটি কোটি বান্দা উপকৃত হতেই থাকবে। বিভিন্ন পন্থায় তার নেক আমল চালু থাকর কারণে আল্লাহর মহান দরবারে তার মর্যাদ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে ইনশাআল্লাহ। 
পরিশেষে তার মর্যাদা এতো উন্নীত হবে যে, হাশরের দিন তার এ সম্মান ও মরতবা দেখে তিনি নিজেও অভিভূত হয়ে যাবেন। তখন অস্ফুটে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবেÑ সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর। কবির ভাষায়Ñ
যুগে যুগে এই পৃথিবী গেয়েছে সেই মানবের জয়,   বিলায়ে দিয়েছে মানুষের যারা স্বীয় সব সঞ্চয়।
তুমি আল্লাহর সৃষ্টিরে দিয়ে আল্লাহর নিয়ামত,
তাহার দানের সম্মান রাখিয়াছ, ওগো হযরত! 
 লেখক : মুহাদ্দিস, ফয়জুল উলূম মাদরাসা, আজিমপুর, ঢাকা

Powered by
✕