• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী

রাহমানিয়া ও শাইখুল হাদীস রহ.

মাওলানা মুফতি আশরাফুজ্জামান 
হযরত শাইখুল হাদীস রহ.-এর বহুমুখী  খেদমতের মধ্য থেকে একটি উল্লেখযোগ্য  খেদমত হলো, মাদরাসা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা। হুজুর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা আমাদের এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। আমরা এখানে দেশের ঐতিহ্যবাহী দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার পেছনে হযরত শাইখের অবদান নিয়ে আলোচনা করবো।
ইলমি ময়দানে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তার সরব উপস্থিতি এবং অবদানের কোনো উদাহরণ আমার ক্ষুদ্র  ইলমে নেই। কুরআনি তালীম সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার আন্দোলন করে গেছেন জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত। শেষ সময়ের কয়েক বছর ওয়াজ মাহফিলের আলোচ্য বিষয় ছিল, কুরআনী শিক্ষা। অতি সাধারণ মানুষদেরকেও সহজ-সরল ভাষায়, গ্রাম্য দৃষ্টান্ত দিয়ে কুরআন ও হাদীসের বাণী ইখলাসের সাথে দেশের আনাচে-কানাচে পৌঁছে দেয়ার নিরলস মেহনতে তিনি ছিলেন তার সমকালীন সময়ে অদ্বিতীয়। দীনী শিক্ষা হাসেল করে শিক্ষা প্রদানের কাজে নিয়োজিত হওয়ার তালীম দিতেন নিজ ছাত্রদেকে খুব গুরুত্বসহকারে। তার কোনো ছাত্র দীনী তালীম ব্যতীত অন্য কোনো দুনিয়াবি কাজে নিয়োজিত হলে খুব কষ্ট পেতেন। তার প্রতিটি ছাত্র তালীম ও তায়াল্লুমের সাথে সাথে উন্নত আমল-আখলাক, সকল বাতিলের মোকাবালায় ইখলাসের সাথে যথাযথ ভূমিকা রাখার চেতনায় উদ্বুদ্ধ, আমরে বিলমারুফ, নাহি আনিলমুনকারের দায়িত্ব পালনে অনমনীয় হোকÑ এই ছিল তার একান্ত ইচ্ছা। কুরআনিশিক্ষার যোগ্য শিক্ষক তৈরির জন্য তিনি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মনের সবটুকু আবেগ-ভালোবাসা উজাড় করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া।
যদি এমন একজন নায়েবে নবী অনুসন্ধান করা হয় যিনি দীনের সকল ক্ষেত্রে সমান অবদান রেখে গেছেন, তাহলে সমকালীন ইতিহাসে নিঃসন্দেহে হযরত শায়খুল হাদীসের নাম বলতে হবে। ক্ষণজন্মা এই মহানসাধক একদিকে যেমন ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ শাইখুল হাদীস, ওলিয়ে কামেল, ক্ষুরধার কলমসৈনিক, বিস্ময়কর বাগ্মী, বেমিছাল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী আলেমেদীন। অন্যদিকে ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ মর্দেমুজাহিদ, সিপাহসালার, রাজনীতিবিদ, সমাজসংস্কারক এবং দীনের অতন্দ্রপ্রহরী। দেশ, জাতি ও সমাজের সর্বস্তরে তিনি তার কীর্তির ছাপ রেখে গেছেন। এই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য মাদরাসা মসজিদ প্রতিষ্ঠায় যেমন প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন, তেমনি শীর্ষস্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে তিনি অসামান্য অবদানও রেখেছেন।
৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়। হযরত শায়খুল হাদীস তখন হাদীসে নববীর  আকাশে সুরাইয়া নক্ষত্র। জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগের মসনদে হাদিসে তখন তিনি মুকুটহীন সম্রাট। পাশাপাশি খেলাফত প্রতিষ্ঠার উত্তপ্ত রাজপথে তিনি আপোসহীন সিপাহসালার। হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর একান্ত আস্থাভাজন শাইখুল হাদীসকে ঘিরে জাতির আশা-আকাক্সক্ষা যখন আকাশচুম্বি। তখনই হঠাৎ ছন্দপতন ঘটল। এ যেন ইমাম বুখারির হুবহু অনুকরণ। ইমাম বুখারির সৌরভে যখন মাতোয়ারা বুখারা-সমরকন্দ ঠিক তখনি ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মেনে নিয়ে তাকে বুখারা ত্যাগ করতে হয়েছিল। বাংলার বুখারির বেলায়ও তাই ঘটল। হুজুরের দুজন স্নেহের ছাত্রের কিছু ঘটনাপ্রবাহের সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্বশীল হিসেবে একপর্যায় হুজুরের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র শুরু হলো। কলহবিমুখ শাইখুল হাদীস ধৈর্য্যরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে লালবাগ জামিয়ার নবীন উস্তাদ মুফতি মনসুরুল হক ও মাওলানা হিফজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে প্রাণপ্রিয় লালবাগকে আল-বিদা জানালেন। হুজুরের মহব্বতে আরো কিছু আসাতিযায়ে কেরাম হুজুরের সঙ্গে চলে আসলেন। ছাত্রদ্বয়কে হুজুর নিজের বাসায় স্থান দিলেন। ১৯৮৬ সাল। রমজান ও শাওয়াল শেষ হয়ে এলে হুজুর বুঝে ফেললেন এ আগুন সহজে  নেভার নয়। অগত্যা হুজুর মোহাম্মাদপুরস্থ কিছু আপনজনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেখানে হাজির হলেন। ছাত্রদ্বয়ও সঙ্গে আছেন। এখানে আসার পেছনে এক বিরাট স্বপ্ন ক্রিয়াশীল ছিল। কিন্তু দিন যতো বাড়তে লাগলো স্বপ্ন ততোই ফিকে হয়ে আসলো। হযরত শায়খুল হাদীসের হৃদয় ক্যানভাসে আঁকা স্বপ্নের জামিয়ার জন্য স্থায়ী জায়গার যে পিপাসা নিয়ে তিনি এখানে এসেছেন, তিনি যখন নিশ্চিত হলেন যে, এখানে পড়ে থাকলে তার সে পিপাসা বাড়বে ছাড়া কমবে না, এদিকে লালবাগ ত্যাগের কারণের অনুরূপ ছোটোখাট কিছু কারণ এখানেও ঘটল। তখন তিনি তার মেজবানের (হাজী সিরাজুদদৌলা রহ. ওপর ভরসা না করে নিজ উদ্যোগে জায়গা দেখতে আরম্ভ করলেন। ১৯৮৭ এর রমজানের পূর্বেই শাইখ জামিয়া মুহাম্মাদিয়া থেকে বিদায় নিয়ে নিলেন। জায়গা দেখাদেখির কাজ পূর্ণোদ্যমে চলতে লাগলো এবং আল্লাহর রহমতে ঐতিহাসিক সাতমসজিদ সংলগ্ন একটি জায়গা পছন্দও হলো। হুজুর ওই দুই ছাত্রসহ নবীন-প্রবীণ একঝাঁক নায়েবেরাসূল সঙ্গে নিয়ে চলে আসলেন। ১৯৮৮ র সূচনালগ্নে এক নতুন ইতিহাসেরও সূচনা হলো। পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত হলো। শাইখুল হাদীসের বরকতময় হাতে স্থাপিত হলো ঐতিহ্যবাহী জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া। 
প্রিয় পাঠক! জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া কোনো গতানুগতিক মাদরাসার নাম নয়। এ জামিয়ার প্রতিষ্ঠা হয়েছে দীন ও ইসলামের প্রত্যেকটি শাখায় যোগ্য ও মুখলিস কর্মবীর তৈরির জন্য। জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. স্বরচিত  উর্দু কাব্যে উল্লেখ করেছেন-
ইহা ইলম ও আমলের একটি সুন্দর চিত্র / ইহা পূর্ববর্তী আলেমগণের ইতিহাসের দৃশ্য।
হেরা পর্বত হতে যে অনাদি (কুরআনের) নূর চমকেছিল / ইহা সেই নূরের সুরক্ষণকেন্দ্র।
ইহার পাতায় পাতায় সদা বিরাজমান পবিত্র মদিনার সৌরভ / ইহার ডালায় ডালায় রয়েছে মদিনার বুলবুল।
এই বাগানের মালি কাসেম নানুতুবী রহ. আশরাফ আলী থানবী রহ. / পানি সিঞ্চনকারী  শামছুল হক ফরিদপুরী ও হাফেজ্জী হুজুর রহ.।
এই বাগানের প্রত্যেকের অন্তরে জিহাদের জজবা / এবং প্রত্যেকের চোখে অগ্নিশিখা।
কখনো যেন কোনো ক্ষয়-ক্ষতি ইহাকে নাগালে না পায় / ইহা ইসলামি শরীয়তের দুর্গ।
আল্লাহর তরবারি যেন ইহার পাহারায় থাকে / ইহা অসংখ্য সুন্দরের সমাবেশ ক্ষেত্র। (সংক্ষেপিত)
শাইখুল হাদীস রহ. যে চেতনা নিয়ে রাহমানিয়া নামক বৃক্ষ রোপণ করেছিলেন। নিজ হাতে তাকে ফুলেফলে, পত্রপল্লবে সুশোভিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রমও করে গেছেন। নিজ হাতে পানি ঢেলেছেন সে গাছের গোড়ায়। আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখেছেন। নিজ স্নেহ ছোঁয়ায় বড় করেছেন। তাকে রাঙিয়েছেন আপন রঙে। নিজে যেমন সর্বমুখী ব্যক্তিত্ব ছিলেন তেমনিভাবে জামিয়াকেও সর্বমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিচিত করেছেন সারাবিশ্বে।
শাইখের এ জামিয়ার প্রতিটি ছাত্র ইলম-আমল, তাকওয়া-পরহেজগারির সাথে সাথে ওয়াজ-নসিহত, সাহিত্য-সাংবাদিকতা ও বাতিলের মোকাবিলায় ভূমিকা পালন করছে দেশ থেকে দেশান্তরে। যারাই হযরতের ছোঁয়া পেয়েছে, তারা যে খেদমতেই নিয়োজিত হয়েছে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলছে। নিজ হাতে গড়া এ বৃক্ষের ছায়ায় শীতলতা লাভ করতেন তিনি। হাজারো কর্মবস্ততা সত্ত্বেও এখানে সময় কাটিয়ে প্রশান্তি লাভ করতেন। জীবনের একেবারে শেষ সময় যখন বার্ধক্য হযরতকে কর্মতৎপরতা থেকে অক্ষম করে ফেললো এবং তিনি পরিবারের নিয়ন্ত্রণে বেষ্টিত হয়ে গেলেন, তখনো বেষ্টনী ফাঁকি দিয়ে চলে আসতেন নিজের প্রিয় প্রতিষ্ঠানে। ফয়েজ ও বরকত দিয়ে ধন্য করতেন আমাদের।  ইন্তেকালের  বেশ কিছুদিন পূর্বে  যখন হযরত চলাফেরা করতে পারেন না। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া কোথাও যেতেও পারেন না। এমন মুহূর্তে হুজুরের বাসা থেকে আমার মোবাইলে কল আসল, হুজুর মাদরাসায় এসেছেন কি-না? বাসা থেকে সবার অজান্তে বের হয়ে গেছেন। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা পেরেশান হয়ে ছাত্রদের বিভিন্ন দিকে পাঠিয়ে দিলাম। কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না। হন্যে হয়ে ছোটাছুটি করছিলাম। হঠাৎ জামিয়ার এক প্রাক্তন ছাত্র কলাবাগানের মাওলানা আব্দুল আজিজ হুজুরকে নিয়ে উপস্থিত হলো। আমরা হুজুরকে পেয়ে চিন্তামুক্ত ও আনন্দিত হলাম। রিকশাচালক থেকে জানতে পারলাম, হুজুর বাসার গেটে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন, রিকশাচালককে বলেছেন আমাকে মাদরাসায় নিয়ে চলো। রিকশাচালক হুজুরকে প্রথম লালবাগ নিয়ে গেলো হুজুর তাকে অন্য মাদরাসার কথা বলেন। এভাবে বিভিন্ন মাদরাসায় ঘুরতে ঘুরতে একসময় কলাবাগান এলাকায় চলে আসেন। আর তখনি ভাগ্যক্রমে দেখা হয় মাওলানার সঙ্গে। মাও. আব্দুল আজিজ বিষয়টি বুঝতে পেরে হুজুরকে মাদরাসায় নিয়ে আসে। মাদরাসার প্রতি কেমন ভালোবাসা থাকলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মূলত শাইখুল হাদীস রহ.-এর প্রতিচ্ছবি। তার চেতনা। তার ভালোবাসা। তার রেখে যাওয়া আমানত। এ জাতির জন্য তার দেওয়া উত্তম তুহফা। সঙ্গত কারণেই শাইখের অস্তিত্ব থেকে জামিয়া রাহমানিয়াকে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। মা-বাবার ভূমিকাকে বাদ দিয়ে- কে পাত্রী দেখেছিল, আর কে বিবাহ পড়িয়েছিল, সন্তান দুনিয়াতে আসার ক্ষেত্রে এদের  ভূমিকাকে বড় করে দেখানোর চেষ্টাকে যেমন হাস্যকর  মনে হবে, জগৎ আলোকময় হওয়ার ক্ষেত্রে সূর্যের ভূমিকাকে খাটো করতেÑ কে পর্দা সরিয়েছিল আর কে গাছপালা কেটে আলো চলাচলের রাস্তা অবাধ করেছিল এসব নিয়ে আলোচনা যেমন অর্থহীন, তেমনি শায়খুল হাদীসকে বাদ দিয়ে বা তার ভূমিকাকে অপরিহার্য সাব্যস্ত না করে জামিয়া রাহমানিয়াকে কল্পনা করা তেমনি অর্থহীন-মূল্যহীন। ব্যাপারটি এমনই প্রমাণিত সত্য যে, জামিয়া রাহমানিয়ার প্রতি সামান্য ধারণা রাখা একটি বাচ্চাও বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে। সত্যি কথা বলতে কি- সূর্যের সাথে যেমন দিনের সম্পর্ক, চাঁদের সাথে যেমন রাতের সম্পর্ক শায়খুল হাদীসের সাথে তেমনি জামিয়া রাহমানিয়ার সম্পর্ক। মহান আল্লাহ তা‘য়ালা তার রেখে যাওয়া এ আমানতকে কেয়ামত পর্যন্ত আবাদ। রাখুন। আমিন  
লেখক : শিক্ষাসচিব, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া ঢাকা 

Powered by Create your own unique website with customizable templates.