• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী


শাইখুল হাদীস অনুদিত বুখারি শরিফ

খন্দকার মনসুর আহমদ

শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.- কে আমি সর্বপ্রথম দেখি ১৯৯২ সনের ডিসেম্বরে। বাবরি মসজিদ শহীদ হওয়ার পরের দিনের গণজমায়েতে, যা বায়তুল মুকাররমের উত্তর গেইটে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। আমি তখন জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় ‘শরহে বেকায়া’ শ্রেণীতে পড়ি। দীর্ঘদিন ধরে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের নাম শুনে আসলেও তাকে দেখবার সৌভাগ্য হলো এই প্রথম। কয়েকজন বক্তার বক্তৃতার পর লোকজন খুব উদ্দীপ্ত হয়ে কারোর জন্য অপেক্ষা করছে, এমন সময় শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের নাম ঘোষণা হলে উৎসুক দৃষ্টিতে মঞ্চের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তারপর যখন আমার সন্ধানী চোখ দু‘টো তাকে আবিষ্কার করল, তখন এত বড় মাপের একজন আলেম ও ইসলামি নেতার দৈহিক অবয়ব দেখে আমি খুবই বিস্মিত হলাম। আমি ভেবেছিলামÑ এতো বড় প্রখ্যাত আলেম ও ইসলামি নেতার দৈহিক অবয়ব যেন কেমনই হবে। কিন্তু শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজ রহ. কে দেখে ভাবলাম মানুষের মর্যাদা দেহে নয়; কর্মে। 
শাইখুল হাদীস সাহেবের ভাষণ যখন চলছিল, তখন বায়তুল মুকাররম স্টেডিয়ামে ভারতীয় খেলোয়াড় দলের খেলা হচ্ছিল। প্রতিবাদী জনতা এ ব্যাপারে শাইখুল হাদীসের কোন নির্দেশের অপেক্ষা করছিল। ভাষণের এক পর্যায়ে তারা তাদের মহান নেতার নির্দেশ পেল। আর তখনই উত্তেজিত জনতা স্টেডিয়াম ঘেরাও করে খেলা বন্ধ করে দেয়। সেদিন থেকেই আমি হযরত শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের মাঝে এক আপসহীন দুঃসাহসী নেতার চরিত্র দেখতে পাই। এরপর হযরত শাইখুল হাদীসকে অনেকবার দেখবার এবং তার হৃদয়স্পর্শী বয়ান শোনবার সৌভাগ্য হয়েছে। বিশেষ উপলক্ষে দুয়েকবার সবক পড়ারও সৌভাগ্য হয়েছে। একদিন ছোট্ট একটি খেদমত করারও সুযোগ লাভ করেছি। সেই ঘটনাটি বড় মজার। আমি তখন জামিয়া রাহমানিয়ায় জালালাইন শরিফ পড়ি। আল্লামা আবদুল হাই পাহাড়পুরী দা.বা. তখন জামিয়া মুহাম্মদিয়ার মুহতামিম ও শাইখ। আমি হযরত পাহাড়পুরীর সঙ্গে মুলাকাতের জন্য জামেয়া মুহাম্মদিয়ার মসজিদে গিয়ে আসরের নামাজে শাইখুল হাদীস রহ.- কেও দেখতে পাই। তারপর কাছাকাছি থেকে নামায আদায়ের পর শাইখুল হাদীস সাহেবের জুতা হাতে তুলে নেই। আমাকে জুতা তুলে নিতে দেখে শাইখুল হাদীস সাহেব সরল কণ্ঠে বলে ওঠেন: ‘এগুলো আমার জুতা’। তখন আমি বিনীতভাবে আরজ : জী হুজুর আমি এগিয়ে দিচ্ছি। এই ঘটনায় বোঝা যায় শাইখুল হাদীস রহ. এমনটি ভাবতেন না যে কেউ আমার জুতা বহন করবে। সে কারণে তিনি আমাকে জুতা তুলে নিতে দেখে ভুলবশত তুলেছি ভেবে আমাকে সতর্ক করেন। 
উত্তরা বাইতুস সালাম মাদরসার  খেদমতের জীবনে একাধিকবার শাইখুল হাদীস রহ. কে পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। শেষবার তাকে পাই খতমে বুখারির অনুষ্ঠানে ২০০৭ ই. সালে। শাইখের শুভাগমনের সংবাদ শুনে বিপুল উদ্দীপনায় ছাত্ররা সেবার এই অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আমার সৌভাগ্য ছিলÑ শায়খের অবস্থান ও আপ্যায়নের স্থান নির্ধারিত হয় গ্রন্থাগারে, আমার থাকার স্থানে। বড় আবেগ ও উচ্ছ্বাস নিয়ে আমি সে বছর খতমে বুখারির অনুষ্ঠানটির সঞ্চালন করেছিলাম এবং শায়খের প্রতি আমার অন্তরের কিছু আবেগ ও শ্রদ্ধা প্রকাশের সুযোগ পেয়েছিলাম। হুইল চেয়ারে করে শাইখকে যখন আমার অবস্থানকক্ষে নিয়ে আসা হলো, তখন তো আমার মহাসুযোগ! আমি শায়খের ছোট সাহেবজাদা মামুন ভাইয়ের সহপাঠিত্বের পরিচয় দিয়ে মাথায় শায়খের ফুঁক ও স্নেহাশিস নেয়ার সুযোগ গ্রহণ করেছিলাম, যা আজ মনে করে পুলকবোধ করছি। এরও কয়েক বছর আগে কোনো এক উপলক্ষে শাইখ আমাদের মাদরাসায় পরপর দুইদিন এসেছিলেন। তখনও আমি শায়েখের সাথে কথা বলার এবং বরকত নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করিনি। শায়খ যে চেয়ারে বসা ছিলেন তার পাশের আলমারিতেই সাজানো ছিল তার অনূদিত বুখারি শরিফ। সেদিন শাইখ জানালেন যে, পঞ্চম খণ্ডটি শুধু পবিত্র সীরাতুন নবীর বিষয় দিয়ে সাজানো হয়েছে, সেটিও সংগ্রহ করে নিও। পরবর্তীতে এ খণ্ডটি জোগাড় করার সুযোগ হয়েছে। সীরাতের ওপর একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ এটি। এ খণ্ডটিতে শায়েখের যুগসচেতনতা লক্ষ করে আমি খুবই অভিভূত হলাম। মাওলানা আকরাম খাঁ সুকৌশলে ইসলামি মূল্যবোধ ও ইসলামি আকায়েদের ওপর যে সকল আক্রমণ চালিয়েছেন শায়েখের এ খণ্ডের ভূমিকায় রয়েছে তার উপযুক্ত জবাব। এই ভূমিকা পড়ে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভের পাশাপাশি বুঝতে পেরেছি শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক যুগের নানাবিধ ফেতনা সম্পর্কেও যথেষ্ট সচেতন ছিলেন।  
দুই.  দেশ ও জাতির কল্যাণে ইসলামের যে নানাবিধ খেদমত তিনি করেছেন, তার বিশদ বিবরণ তুলে ধরা খুব সহজ নয়। তার অবদানের যে দিকটি সবকিছুকে ছাপিয়ে ওঠে তা হলো, বুখারি শরিফের অসাধারণ খেদমত এবং এই গ্রন্থের প্রাণবন্ত বাংলা অনুবাদ। এই তুলনাহীন বিশুদ্ধতম গ্রন্থের অধ্যাপনা ও অনুবাদে যে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় তিনি দিয়েছেন তা তার জীবনকে এক অসাধারণ মহিমা দান করেছে। ভালো করে ভেবে দেখলে মনে হয় শাইখুল হাদীস ও বুখারি শরিফ যেন এ দেশে একই সূত্রে গাঁথা। বুখারি শরিফই ছিল তার জীবনসাধনার মূলক্ষেত্র। তিনি যেমন বুখারি শরিফকে ভালোবেসেছিলেন তেমনি বুখারি শরিফও তাকে ভালোবেসেছিল। সে কারণেই তিনি যখন জালিমের জিন্দানে বন্দি হয়েছিলেন, তখন এই বুখারি শরিফই তাকে সেই অন্ধকার কারাগার থেকে বের করে আনে। সেই স্মৃতির কথা না বলে আজ আর পারছিনা। বড় মনে পড়ছে আজ সেই ঘটনাটি। আমি তখন জামিয়া রাহমানিয়ায় জালালাইন শরিফ পড়ি। বাবরি মসজিদ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে বিমানবন্দর ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা করেছিলেন শাইখুল হাদীস রহ.। এই অপরাধে হযরতকে গ্রেফতার করে কারাবন্দি করে রাখা হয়। দীর্ঘদিন যাবত প্রিয় শায়খকে বুখারির দরসে না পেয়ে এক পর্যায়ে ছাত্রদের ধৈর্যের বাধ ভেঙে যেতে চায়। একদিন সকালে জানতে পারি, আজ শাইখুল হাদীস সাহেবের মুক্তির জন্য কেন্দ্রীয় কারাগার ঘেরাও করা হবে। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম। সৌভাগ্যের বিষয় হলো এই আন্দোলনের স্মারকলিপিটি লেখার দায়িত্ব পড়ে আমার ওপর। আমি স্মারকলিপিটি লিখে জমা দেওয়ার পর জামেয়া রাহমানিয়ার তৎকালীন সহকারী অধ্যক্ষ মুফতি মনসুরুল হক দা.বা. তাতে শুধু একটি বাক্য যোগ করেনÑ তা হলো ‘শাইখুল হাদীস সাহেবকে মুক্তি দেওয়া না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে’। যথাসময়ে বুখারি শরিফ হাতে নিয়ে আমরা বিক্ষিপ্তভাবে গিয়ে নির্দিষ্ট একটি স্থানে সমবেত হওয়ার পর একত্রে গিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকের সামনে সমবেত হলাম এবং কেন্দ্রীয় কারাগার ঘেরাও করলাম। এ এক আশ্চর্য ও অভিনব আন্দোলন। সবার হাতে বুখারি শরিফ। শাইখুল হাদীস সাহেবের ছাত্রদের ধৈর্য্যের বাধ বুঝি ভেঙে গেছে। আজ তাকে না নিয়ে আর এখান থেকে তারা ফিরে যাবে না। কিছুক্ষণ ঘেরাও করে রাখার পর এক সময় হঠাৎ দেখতে পেলাম শব্দ করে দরজা খুলে হযরত শাইখুল হাদীস সাহেব হুজুরকে বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে। আর তো শুরু হল আনন্দের ধ্বনি। নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার, শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক জিন্দাবাদ, জেলের তালা ভেঙেছি, শায়খকে মুক্ত করেছি ইত্যাদি। আমাদের মহান নেতা বেরিয়ে এলেন এবং কিতাব হাতে অপেক্ষমাণ ছাত্রদের উদ্দেশ্যে কারা-ফটকের সামনেই বুখারি শরিফের দরস দান শুরু করলেন। এ এক অপূর্ব দৃশ্য, এক অপূর্ব আনন্দ আর আবেগ আমাদের হৃদয়কে উদ্বেলিত করছিল। বাংলাদেশে শুধু নয়, বিশ্বের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। এরপর শাইখ তার প্রাণপ্রিয় জামিয়া রাহমানিয়ার অভিমুখী হলেন। আনন্দ মিছিল করতে করতে আমরা তাকে জামিয়া রাহমানিয়ায় নিয়ে গেলাম। তিনি জামিয়ায় পৌঁছেই বুখারি শরিফের দরস দিতে শুরু করলেন। পুরো মাদরাসা যেন সেই দরসের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। উদ্দীপ্ত আজ জামিয়ার সকল ছাত্র। দরসের আলাপ-আলোচনা প্রসঙ্গে শায়খ জানালেন, কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়েছেন যে, তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফোন করে খুব গুরুতর করে আন্দোলন পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তারা বলেন: বুখারি শরিফ হাতে নিয়ে হাজার হাজার ছাত্র জেলখানা ঘেরাও করে রেখেছে। এভাবে তারা পরিস্থিতির জটিলতা তুলে ধরেন। তখন তৎকালীন বি.এন.পি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন শাইখকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে কারা কর্তৃপক্ষ শাইখকে বাইরে বের করে আনার জন্য একেবারেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শায়খের বক্তব্য থেকে জেনেছিÑ তিনি তার পোশাক-পত্র গুছিয়েও সারতে পারছিলেন না। সত্যি কথা হলো আন্দোলনের সাফল্যের স্বপ্ন থাকলেও এমন তড়িৎ সাফল্য অর্জিত হবে তা আমরা ভাবিনি। কিন্তু মহান আল্লাহ বুখারি শরিফের বরকতে আমাদের এই সামান্য আন্দোলনে এক ঐতিহাসিক সাফল্য দান করেছিলেন।
তিন.  এই বুখারি শরিফই ছিল শাইখের সারা জীবনের সাধনার মূলক্ষেত্র। এই মহাগ্রন্থের অনুবাদে তিনি যে অসাধারণ কৃতিত্ব ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন, তার বিশদ বিবরণ দেওয়া এ নিবন্ধে সম্ভব নয়। এখন তো অনেক প্রতিষ্ঠানই বুখারি শরিফের বঙ্গানুবাদ বের করেছে। কিন্তু এসকল অনুবাদের মূল প্রেরণা ও সহায়ক শক্তি যে শাইখুল হাদীস রহ. এর অনুবাদটিই তা বলাবাহুল্য। বস্তুত এ গ্রন্থের অনুবাদের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাভাষাভাষী মানুষের হৃদয়ে যে অক্ষয় আসন তৈরি করে নিয়েছেন তা সচেতন ব্যক্তিমাত্রই আন্দাজ করতে পারেন। এ অনুবাদের মাধ্যমে এ দেশের মানুষের কাছে তিনি দীনের এক মহা আমানত অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে পৌঁছে দিয়েছেন। আমার ধারণায় এ পর্যন্ত এই অনুবাদের প্রায় বিশটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। হযরত শাইখের এই অনুবাদটির বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে সবচে বড় কথা হলো, তিনি এ গ্রন্থের অনুবাদ করেছেন শুধু শব্দ দিয়ে নয়; বরং হৃদয় দিয়ে, রুহানিয়ত দিয়ে এবং হৃদয়ের গভীর অনুরাগ দিয়ে। বলতে দ্বিধা নেই শব্দের অনুবাদ বিবেচনা করলে এর চেয়ে পাণ্ডিত্যপূর্ণ অনুবাদ হয়ত দুর্লভ নয়। কিন্তু শাইখের যে হৃদয় ও রুহানিয়ত এই অনুবাদের প্রতি পৃষ্ঠায় প্রাণ সঞ্চার করেছে, তা বোধ হয় অন্য অনুবাদে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।
সচেতন ব্যক্তিরা জানেন, হাদিসের সব অনুবাদই সর্বসাধারণের উপযোগী নয়। সর্বসাধারণকে শুধুমাত্র হাদীসের অনুবাদ করে দিলে অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়ে থাকে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে হাদীসের বাহ্য অর্থ উদ্দেশ্য থাকে না। অথবা হাদিসটি বিশেষ কোনো প্রেক্ষাপটের সাথে সীমাবদ্ধ। এসকল ক্ষেত্রে হাদিস বুঝতে হাদিসের ব্যাখ্যা সংযোজনের প্রয়োজন পড়ে। অন্যথায় সাধারণ পাঠকের বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মহান দয়াময়ের অনুগ্রহে শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক রহ. সে কাজটিও অত্যন্ত সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছেন।
হাদীসের অনুবাদের ক্ষেত্রে শাইখুল হাদীস রহ.-এর শব্দানুবর্তিতার বিষয়টিও লক্ষণীয়। তিনি হাদিসের মর্ম উদ্ধার করেছেন আবার শব্দানুগ থাকবার চেষ্টা করেছেন। একটি ছোট্ট উদাহরণ দেই। 
এই বাক্যটির অনুবাদ করেছেন তিনি ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার নিকট অহি কীভাবে আসে’ বলে। এই অনুবাদে ‘অহি কিভাবে আসে’ না বলে ‘কীভাবে নাজিল হয়’ও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু মূল আরবিতে ‘কীভাবে আসে’ এর মূল শব্দই রয়েছে। শাইখুল হাদীস রহ. অনুবাদের ক্ষেত্রে এভাবে মূলানুবর্তী থাকার চেষ্টাও করেছেন।
বুখারি শরিফের জন্য মাওলানা আজিজুল হকের ত্যাগ ও অধ্যবসায় কতটুকু, বাংলাদেশের মহান আলেমে দীন মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর নিম্নলিখিত বক্তব্য থেকেই তা আন্দাজ করা যায়। তিনি লিখেছেনÑ আমার যতদূর জানা আছেÑ বুখারি শরিফ বর্তমানে বাংলাদেশে তার চেয়ে অধিক যতœসহকারে কেউ পড়েন নাই এবং বুখারি শরিফের খেদমতও এতদূর কেউ করেন নাই’। মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর এই মন্তব্যের পর মাওলানা আজিজুল হকের যোগ্যতা ও নিষ্ঠা সম্পর্কে আর কোনো মন্তব্য প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। উপমহাদেশের ইলম ও আধ্যাত্ম জগতের দুই মহান পথিকৃত আল্লামা যফর আহমদ উসমানী এবং আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ.-এর কাছে তিনি বুখারি শরিফ পড়ে নিজের মধ্যে শুষে নিয়েছিলেন ইলম ও ইরফানের এক সমুদ্র। তিনি পেয়েছিলেন বাংলার দুই বটবৃক্ষের ছায়া। তাদের একজন হলেনÑ পরম স্নেহশীল অভিভাবক বাংলার সূর্য হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.। আরেকজন হলেন এ দেশের তাকওয়ার রাজনীতির পুরোধা হযরত মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ.। এসব কিছুই মাওলানা আজিজুল হককে সফলতার সুউচ্চ শিখরে পৌঁছে দেয় এবং বুখারি শরিফের মতো মহান গ্রন্থের খেদমতে অসাধারণ অবদান রাখার পাথেয় যোগায়।
শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর অনূদিত বুখারির এই পরম মকবুলিয়াতের ভেতরগত যে রহস্যের আমরা সন্ধান পাই, তা হলোÑ তাঁর অধ্যবসায় ও উস্তাদের হৃদয় নিংড়ানো দোয়া। তাঁর পরমপ্রিয় উস্তাদ মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরীর নেক দোয়া এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পবিত্র মদীনা তইয়িবায় রওজায়ে আতহারের কাছে ‘রওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নায়’ বসে তাহাজ্জুদের সময়ে মাওলানা ফরিদপুরী রহ. তার জন্য যে দোয়া করেছেন, মাওলানা আজিজুল হক তাকে নিজের জন্য পরম সম্পদ বলে গ্রহণ করেছিলেন। প্রথম খণ্ডের অষ্টম পৃষ্ঠায় শাইখুল হাদীস রহ. প্রসঙ্গে বলেনÑ ‘হযরত রাসূলুল্লাহ সা.-এর দরবারে তাহার পবিত্র মসজিদের বিশিষ্ট স্থানে বসিয়া তাহাজ্জুদের সময়ে তিনি যে দোয়া করিয়াছিলেন সৌভাগ্যক্রমে তাহা লিখিতভাবে পাইয়াছি। ইহা আমার নিকট নিঃসন্দেহে এক অতুলনীয় পরম সম্পদ বিশেষ। তাই বরকতের জন্য নিম্নে উহারই ফটোব্লক দেওয়া হইল’। কৌতূহলী পাঠকের জন্য আমরাও ফটোব্লকটি নিচে তুলে ধারলাম। 
ফটোব্লক
হযরত ফরিদপুরীর এ দোয়াটির পাঠোদ্ধার করে আমরা যা পাই, তা হলোÑ ‘বিসমিল্লাহ ও হামদ-সালাতের পর, আজ তাহাজ্জুদের সময় রওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নাতে বসিয়া দোয়া করার তৌফিক পাইয়াছি। আয় আল্লাহ! মাওলানা আজিজুল হক সাহেবের সীনা খুলিয়া দাও এবং তাহার দ্বারা বুখারি শরিফের খেদমত পুরা করাইয়া নেও। আল্লাহ কবুল করো। তোমার রাসূলে পাকের এই পবিত্র মহান রওযায়ে মদিনায় কবুল করো’।
এখন তো আমরা যারা লেখালেখি করি দু‘চার কলম লেখার পর গরিমায় আমাদের কণ্ঠরস্বর বদলে যায়। কিন্তু শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হকের লিখিত ভূমিকায় তার বিনয় লক্ষ্য করুন- ‘বুখারী শরিফ অনুবাদের মহান কার্য একমাত্র তাঁহার [শামছুল হক ফরীদপুরী রহ.] ফয়েজ ও বরকতের অছিলায়ই সম্ভব হইয়াছে। প্রথম অধ্যায় ঈমান ও দ্বিতীয় অধ্যায় এলম প্রায় সম্পূর্ণই তাঁহার দৃষ্টিগোচরে আসিয়াছে। অপরাপর অধ্যায়েও তাঁহার এই রূপ দান রহিয়াছে যে, বস্তুত এই অনুবাদকে কলমের ন্যায় আমার হাতে তাঁহারই অবদান বলা চলে। অনুবাদ কার্যে যাহা কিছু কৃতিত্ব রহিয়াছে উহার সবটুকু তাঁহারই ফয়েজ। ভুল-ভ্রান্তি ও ত্র“টি-বিচ্যুতি সবটুকু এই নরাধমের অজ্ঞতা ও অযোগ্যতাপ্রসূত। আমার দ্বারা কোনো ত্র“টিবিহীন বিষয়বস্তু প্রকাশ পাইয়া থাকিলে তাঁহারই দোয়ার ফল’। বর্তমান সময়ে আমাদের ‘কর্মযজ্ঞ’ আর মাওলানা আজিজুল হকের বুখারি অনুবাদের পার্থক্য এখানেই স্পষ্ট হয়ে যায়। আর সেই সাথে ধরা পড়ে তার অনুবাদের মকবুলিয়াতের আরেক অন্তর্গত রহস্য। 
শাইখের এই অনুবাদটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সাবলীলতা ও প্রাঞ্জলতা। ভাবতে খুবই অবাক লাগেÑ শাইখুল হাদীস রহ. যে সময়ে বুখারি শরিফের অনুবাদ করেন, তখন এদেশের আলেমদের মধ্যে বাংলাভাষার চর্চার প্রচলন ছিল না বললেই চলে। সে সময়ে এবং সে পরিবেশে তিনি বুখারি শরিফের এমন প্রাঞ্জল ও সাবলীল অনুবাদ কী করে করলেন? অনুবাদটি পাঠ করতে গেলে কোথাও কোনো হোঁচট খেতে হয় না। একজন সাধারণ শিক্ষিত ব্যক্তিও তার অনুবাদের ভেতর দিয়ে অনায়াসে হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন এই মহাগ্রন্থের ভাবসুষমা। এখানে শব্দের কোন আড়ম্বর নেই, ভাষার কোনো লৌকিকতা নেই। প্রথাগতভাবে ভাষাচর্চা না করেই বাংলা ভাষায় এভাবে বুখারি শরিফের অনুবাদ করা এবং এমন দক্ষতার স্বাক্ষর রাখা আমার কাছে একটি কারামত বলেই মনে হয়। খোদাপ্রদত্ত বিশেষ দান বলেই এমনটি সম্ভব হয়েছে। জামিয়া রাহমানিয়া‘র সহপাঠিত্বের জীবনে শাইখুল হাদীস রহ. সম্পর্কে মামুন ভাইও বারবার আমার কাছে এই অনুভূতি ব্যক্ত করতেন। আগেও বলেছি যে, মাওলানা আজিজুল হকের অনূদিত বুখারি শরিফের ওপর যথাযথ আলোকপাত করা সহজসাধ্য নয়। আমরা এ নিবন্ধে এ বিষয়ে কিঞ্চিত আলোকপাত করলাম মাত্র। তবে অনুবাদটি কোনো ব্যক্তি হৃদয় দিয়ে পাঠ করলেই তিনি এ মহান খেদমতের তাৎপর্য ও সৌন্দর্য যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন।
আশা করি হযরত শাইখুল হাদীস রহ. এর অনুদিত বুখারি শরিফ ততদিন পর্যন্ত মানুষের চোখ ও হৃদয় শীতল করবে, যতদিন এদেশে বয়ে যাবে পদ্মা, মেঘনা আর যমুনার বিস্তৃত জলরাশি। শাইখুল হাদীস রহ.-এর অনুবাদের প্রতি পৃষ্ঠায় মেশানো আছে প্রিয় রসূলে পাকের প্রতি গভীর প্রেম আর শ্রদ্ধার আকুতি। পবিত্র রওজায়ে আতহারে নিবেদিত তার ছাব্বিশশত আরবী পঙক্তির যে অংশটুকু ৫ম খণ্ডের দুই স্থানে সংযুক্ত রয়েছে, সেটুকু পাঠ করলেই পাঠক তার রাসূলপ্রেম আন্দাজ করতে সক্ষম হবেন। মহান আল্লাহ শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক রহ. কে তার এ অনন্য খেদমতের উত্তম বদলা দান করুন এবং তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করুন, আমিন।  লেখক : শিক্ষকÑ বাইতুস সালাম মাদরাসা, উত্তরা, ঢাকা

Powered by Create your own unique website with customizable templates.