• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী

দীনের সফল মহানায়ক
মাওলানা মুহাম্মদ শফীকুল ইসলাম


ইসলাম শাশ্বতকালের পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। উসওয়াতুন হাসানার মূর্তপ্রতীক ও মশালবরদার রাসূলে আরাবি  সারা জীবনে তা বাস্তবায়ন করে অনুপম আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাই তো হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে ‘তাঁর চরিত্র হলো পবিত্র কুরআন। হাদীসের কিতাবগুলো তাঁর সোনালি জীবনের অমর সাক্ষী হয়ে আছে। সাহাবায়ে কেরাম তাঁর পবিত্র পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদেরকে রাসূলের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে তোলেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত তাবৎ মানব গোষ্ঠীর অনুকরণীয় আদর্শে পরিণত হন। খাইরুল কুরুন তথা ইসলামের সোনালি যুগ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। অতপর ধীরে ধীরে তা সংকচিত হতে থাকে এবং এক এক ব্যক্তি এক এক কাজ বেছে নেন এবং ঐ কাজেই তিনি পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। ইলম চর্চার ক্ষেত্রে কেউ ইলমে ফিকহ, কেউ হাদীস শাস্ত্র,  কেউ আকাঈদ ইত্যাদি চর্চায় লিপ্ত হন। কেউ আধ্যাত্মিকতায় পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। কেউ জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ ও খেলাফত প্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তবে তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিত্বও ছিলেন যাদের মধ্যে সবগুলো গুণ পূর্ণমাত্রায় বিরাজ করতো। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম। আস্তে আস্তে এলো আমাদের যুগ। আমাদের যুগ হলো শতধা বিভক্তির যুগ। একজন আলেমও সবদিকে পারদর্শী হন না। একেক জন একেক বিষয়ের আলেম এবং তাদের কর্মক্ষেত্রও শতধা বিচ্ছিন্ন। কিন্তু ইলমের সকল বিষয়ে যিনি সমান পারদর্শী ও রাজমুকুটের অধিকারী,  খেদমতে দীনের সকল শাখায় যার অবাধ বিচরণ এবং পরিপূর্ণ দীনের যিনি বাস্তব প্রতিচ্ছবি তিনি হলেন আমাদের নয়ন প্রীতিকর হারানো মানিক হৃদয়ের শান্তনা হাদীস সম্রাট শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে কী দিয়েছেন? তার চেয়েও বড় কথা হলো আল্লাহ তাকে কী দেননি? আমার ক্ষুদ্র ধারণা মতে একজন আলেমে দীনকে আল্লাহ তা’য়ালা যা যা দিতে পারেন তার সবকিছুই দিয়েছেন আমাদের শাইখ রহ. কে। এ বিষয়ে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
জন্ম ও শৈশব  জন্মে কারও হাত নেই তবে এর ফল অত্যন্ত সুদূর প্রসারী। তিনি একটি দীনদার, স্বচ্ছল ও আদর্শ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অতি শৈশবে মাকে হারান। শৈশব থেকে অত্যন্ত মেধার অধিকারী। আমার মনে হয় শৈশবে মাকে হারিয়ে তার উপলদ্ধি ক্ষমতা বহুগুণে বেড়ে গিয়েছিল এবং মেধা-বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্র খুঁজে পেয়েছিল যা ঘটেছিল রাসূলের জীবনে। দরসে হাদীসে ও বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে তিনি যে উপমা ও মিছাল পেশ করতেন তা থেকে সহজেই তা অনুমান করা যায়। 
হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর সান্নিধ্যে    শুধু মেধা থাকলেই জীবনে বড় হওয়া যায় না। মেধাকে বিকশিত করতে প্রয়োজন হয় সচেতন আদর্শ ও শফিক রাহবারের। আমাদের শাইখ রহ.-এর জীবনের পরম সৌভাগ্য যে, তিনি অতি শৈশবে মক্তব জীবন থেকে হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর বিশেষ নেক সোহবতে ধন্য হয়েছেন। আমি শাইখ রহ.-এর মুখে শুনেছিÑ আমি জামিয়া ইউনিসিয়ায় মক্তবে পড়ার সময় ছদর সাহেব হুজুর আমাকে ইমাম বানিয়ে নামাজের প্রশিক্ষণ দিতেন এবং তিনি ঘুরে ঘুরে দেখতেন। ছাত্র জীবনের পুরোটাই কেটেছে ছদর সাহেব হুজুরের তত্ত্বাবধানে। তিনি তাকে সেভাবে যোগ্য করে গড়ে তোলেন এবং তাকে নিয়ে গৌরব বোধ করতেন। ছদর সাহেব হুজুরের ইন্তেকালের পর এক আলোচনা সভায় তৎকালীন খতীবে আযম সিদ্দীক আহমদ রহ. সকলের সামনে বলে ফেলেন। শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. বলতেন, আল্লাহ তা’য়ালা যদি হাশরের ময়দানে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, হে! শামছুল হক! তুমি কি নিয়ে এসেছো? তখন আমি এক হাতে হেদায়াতুল্লাহ  রহ. ও অপর হাতে আজিজুল হককে ধরে বলবো, এ দু’জনকে নিয়ে এসেছি। 
উপযুক্ত শিক্ষকদের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন, কিতাবের ব্যবস্থা করেছেন। তা ছাড়া হযরত মাও: মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব পীরজি হুজুরের নেক তাওয়াজ্জুহ তো রয়েছেই। শাইখ বড়কাটারা থেকে দাওরায়ে হাদীস ফারিগ হওয়ার পরে ছদর সাহেব রহ.-এর পরামর্শেই তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ. এর নিকট হাদীস অধ্যয়ন করার জন্যে ডাবেল চলে যান। গভীর মনোযোগের সাথে এক বছর তার নিকট হাদীস শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং ১৬০০ পৃষ্ঠাব্যাপী উদূভাষায় ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখেন যা দেখে উসমানী রহ. অত্যন্ত খুশি হয়ে ছিলেন। তাই পরবর্তী বছর তাকে নিয়ে এসে দারুল উলূম দেওবন্দে তাফসীর বিভাগে ভর্তি করে দেন এবং হযরত মাওলানা ইদরীস কান্দলভী রহ.-এর নিকট তাফসীর শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ উসমানী রহ. কে দেখাতেন। তিনি তা সংশোধন করে দিতেন। 
একজন মানুষের জীবনে উপযুক্ত উস্তাদ পাওয়া আল্লাহ তা’য়ালার নিয়ামতসমূহ থেকে অনেক বড় নিয়ামত, এ দিক থেকে আল্লামা আজিজুল হক রহ. অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। এজন্যে উলূমে ইসলামিয়ার সকল বিষয়ে তিনি অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন।
হাদীস শাস্ত্রে তিনি তো শাইখুল হাদীস। যার নাম বলার কোনো প্রয়োজন নেই। একটি কথা বুঝা উচিত, কোনো দেশে করো নাম না বলে শুধু গুণবাচক নামটি বললে সবাই তাকে চেনে এমনকি দেশের বাইরের এক বিরাট জনসমষ্টি ঐ গুণবাচক নামেই চেনে তাহলে ঐ বিষয়ে তিনি মামুলি কোনো ব্যক্তি নন। এদেশে হাজারো শাইখুল হাদীস আছে। তবে কেউ যদি বলে, শাইখুল হাদীস একথা বলেছেন তাহলে সকল স্তরের আলেমসহ সাধারণ মানুষও বুঝবে যে, তিনি হলেন শাইখুল হাদীস আজিজুল হক সাহেব। সত্যিই দাউদ আ. নিকট লোহা যেমন মোমে পরিণত হয়েছিল তেমনি শাইখুল হাদীস রহ.-এর নিকট বুখারি তথা সকল হাদীস তেমনই হয়েছিল। উপমার মাধ্যমে অত্যন্ত কঠিন বিষয়গুলো তিনি এমনভাবে বুঝাতেন যে, মেধাহীন দুর্বল ছাত্ররাও তা সহজেই বুঝতে পারতো। আবার এমন আকর্ষণীয় যে, অতি মেধাবী ছাত্ররাও কোনো বিরক্তিবোধ করতো না। দরসগা,  থাকতো অত্যন্ত প্রাণবন্ত।
তিনি যে কতো বড় শাইখুত তাফসির ছিলেন কোনো বিজ্ঞ মুফাসসীর তার তাফসিরের ক্লাসে বসলেই অনুধাবন করতে পারতেন তাফসির শাস্ত্রে তার কতো পাণ্ডিত্ব। একবার ২০০১ সালে জামিয়া রাহমানিয়ার কাফিয়া জামাতের ছাত্ররা শাইখের নিকট কুরআন তরজমা শেষ করতে চাইল। তাদের শুধু সূরা ফালাক ও নাস বাকি ছিল। শাইখ দরস শুরু করলেন। ঐ দরসে অনেক আলেম উলামা শরিক হয়েছেন দেখে আমিও অংশগ্রহণ করলাম। আমি উপলব্ধি করলাম যে, যদি পনের বিশটা বিশাল তাফসীর থেকে এ দুটো সূরার তাফসির পড়তাম তাহলেও ততোটুকু উপকৃত হতাম না যতোটুকু শাইখের তাৎক্ষণিক দরসের দ্বারা উপকৃত হয়েছি। দরস শেষে আল মারকাজুল ইসলামির বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা সাঈদ নূর সাহেব আমাকে বললেন, দেখলেন শাইখের তাফসিরের কী অবস্থা? আমি বললাম, সত্যিই আমি অভিভূত হয়েছি।
তিনি যে কতো বড় ফকীহ ছিলেন নিুের দুটো ঘটনা দ্বারা সহজেই তা অনুমান করা যায়।
আমার শ্বশুর হযরত মাওলানা আবদুর রহমান হাফেজ্জী দা.বা. তখন লালবাগ মাদরাসায় মেশকাত জামাতের ছাত্র। মুফতি ফজলুল হক আমিনী সাহেবও তখন ঐ জামাতের ছাত্র। শাইখুল হাদীস রহ. মেশকাত শরিফ প্রথম খণ্ড পড়ান। ফিকাহ সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে বললেন- তোমরা মনে করো আমি এমনিতেই হানাফি? সমস্ত মাযহাবের ফিকহের কিতাব অধ্যয়ন করে কুরআন সুন্নাহর মানদণ্ডে বিচার বিশ্লেষণ করে আমি হানাফি।
আরেকটি ঘটনা। তখন তিনি মালিবাগ জামিয়ার প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদীস। একটি মাসআলা নিয়ে ওখানকার মুফতিয়ানে কিরাম ও কতিপয় আসাতিযা কোন স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছিলেন না, আলাপ আলোচনা চলছিল। ইত্যবসরে শাইখুল হাদীস রহ. গাড়ি থেকে নেমে মাদরাসার অফিসে প্রবেশ করলেন। কেউ কেউ মনে করলেন হুজুর তো শাইখুল হাদীস এ মাসআলা হুজুরকে জিজ্ঞেস না করাই ভালো। কেউ কেউ মনে করলেন, বড় আলেম তো, জিজ্ঞেস করে দেখি। জিজ্ঞেস করা মাত্র হুজুর ঐ মাসআলার এমন বিশদব্যাখ্যা দিলেন ও আলোচনা করলেন যে, কারো মনে আর কোনো প্রশ্ন থাকেনি এবং তাদের মনে হলো এইমাত্র হুজুর ফিকহের কিতাবগুলো মুতালা করে পরিষ্কার জবাব দিচ্ছেন। অথচ তখন তিনি কোনো কিতাবই দেখেননি।
আরবি ভাষায় ছিল শাইখের অসাধারণ দক্ষতা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা এমনকি অসাধারণ কবিত্বপ্রতিভাও। রাসূল সা. কে নিয়ে রচিত কবিতাগুলোই তার অমর স্বাক্ষী ও জাজ্বল্য।
মিরপুর দারুস সালাম মাদরাসার মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা সালেহ নোমানী সাহেব বলেনÑ তার শ্বশুর হযরত মাওলানা আকরাম আলী সাহেব তখন জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগের দাওরায়ে হাদিসের ছাত্র। শাইখুল হাদীস সাহেব বুখারি শরিফ পড়াচ্ছেন। ইত্যবসরে দুইজন আরবি লোক ভেতরে প্রবেশ করলেন এবং দরসে বসে গেলেন। অমনি শাইখুল হাদীস রহ. ও তৎক্ষণাৎ আরবিতে তাকরীর শুরু করলেন। এতে বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জলভাষা যা ইতিপূর্বে আমরা কখনো কল্পনাও করিনি এবং এতে তার কোনো বেগ পেতেও হলো না। 
আমার মতো লোকের শাইখুল হাদীস রহ. এর মতো লোকের ইলমী কামাল বর্ণনা করা হাস্যস্পদ বৈ অন্য কিছু নয়। মহব্বতের সাথে শুধু বরকত লাভের নিয়তে লেখা।
শাইখের ইলমি খেদমত 
দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর বড়কাটারা মাদরাসায় শিক্ষকতার  ভেতর দিয়ে তার ইলমি খেদমতের সূচনা। অল্প কিছুদিন পরই ছদর সাহেব রহ. পীরজি হুজুর ও হাফেজ্জী হুজুরকে নিজে গিয়ে দাওয়াত দিয়ে বললেনÑ আজ আজিজুল হককে হাদীসের কিতাব দিচ্ছি। শরীক হয়ে দোয়া দিবেন। লালবাগ মাদরাসায় দরসে বুখারির মাধ্যমে হাদীস শাস্ত্রে কালজয়ী  খেদমতের সূচনা  তাকে সারা পৃথিবীতে মাকবুলিয়াতে আম্মা দান করেছে। শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. তার বুখারির দরসে মাঝে মধ্যে বসতেন এবং বলতেন এতে আমারও ফায়েদা হয়। এক হজ্জের সফরে মদীনা মুনাওয়ারায় রওজায় বসে শাইখুল হাদীস রহ.-এর জন্যে দোয়া করলেন। হে আল্লাহ মাওলানা আজিজুল হকের দ্বারা বুখারি শরিফের খেদমত পুরা করিয়ে নিয়ো। আমি সরাসরি শাইখের মুখে শুনেছি  হজ্জ থেকে সদর সাহেব হুজুর এসে আমাকে বললেন, আমি তোমার জন্যে রিয়াজুল জান্নাতে অনেক দোয়া করেছি এবং কিছু দোয়া লিখেও এনেছি। দেখো তো কোনো কাগজ আছে কি না। তখন একটি ছোট কাগজে উক্ত লেখাটি দেখতে পেলাম। 
তৎকালীন বিশ্বের এ দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ মাদরাসায় আল্লাহর কিতাবের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব বুখারি শরিফের অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করা আল্লাহর কতো বড় নিয়ামত এবং রাসূলের সাথে সম্পর্কের কতো বড় উপায়। তাও আবার জীবনের শেষ পর্যন্ত প্রায় সুদীর্ঘ ৬০ বছর। এটা কোনো মানুষের জীবনে পরম পাওয়া। 
 লিখনীর জগতে 
ইলমে দীনের খেদমতের একটি স্থায়ী মাধ্যম হলো লিখনীর মাধ্যমে ইলমকে প্রাণবন্ত করে রাখা শাইখুল হাদীস রহ. এক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তিনিই হলেন বুখারি শরিফের প্রথমও সার্থক অনুবাদক। এ সম্পর্কে এদেশের আলেমকুল শিরোমণি আল্লামা শামছুুল হক ফরিদপুরী রহ. বুখারি শরিফের অনুবাদ গ্রন্থের শুরুতে  লেখেনÑ ‘আল্লাহ দর্জ্জা বুলন্দ করিয়া দিন আমার পরম দোস্ত মাওলানা আজিজুল হক সাহেবের যে, তিনি এতো বড় বিরাট কাজে হাত দিতে সাহস করিয়াছেন। তিনি জওয়ানে ছালেহ, তিনি বাস্তবিকই এই কাজের যোগ্যতা রাখেন। যতদূর আমার জানা আছে বুখারি শরিফ বর্তমান যুগে বাংলাদেশে তাহার চেয়ে অধিক যতœসহকারে এবং আদ্যোপান্ত বুঝিয়া আর কেহ পড়েন নাই এবং বুখারি শরিফের খেদমত ও এতাদূর কেহ করেন নাই।’ তা ছাড়া মসনবী শরিফের অনুবাদসহ অনেক লেখনীর কাজ তিনি আঞ্জাম দিয়েছেন। অথচ তিনি বাংলায় শুধু বাল্যশিক্ষা বই অধ্যয়ন করেছিলেন।
 ওয়াজের ময়দানে শাইখুল হাদীস রহ. 
ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে ইলমে দীনের খিদমত করা নবীয়ে করীম সা. এর যুগ থেকে অদ্যাবধি চলে আসছে। তিনি সারাদেশে ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে দীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। আমরা শৈশব কাল থেকে বিভিন্ন মাহফিলে হুজুরের ওয়াজ-নসীহত শুনে আসছি। আমাদের ঐ সমস্ত উত্তরাঞ্চলে কোনো পোস্টারে শাইখুল হাদীসের নাম শোভা পেলে লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতো। শ্রোতারা চাতকের ন্যায় হুজুরের সাদাসিদে ইলমী নসিহত শুনে ধন্য হতো। দাওয়াতের ময়দানে শাইখুল হাদীস রহ. তার এ সকল কর্মকাণ্ড সবই দীনী দাওয়াতে অর্ন্তভুক্ত। তবু তিনি বর্তমান দাওয়াত ও তাবলীগের কাজকে খুবই ভালোবাসতেন মাঝে মধ্যে সময় দিতেন। আগে কাকরাইল মসজিদে  অনেক সময় বয়ান করেছেন। টঙ্গী ইজতিমার মঞ্চে আসীন হয়েছেন। বিদেশি মেহমানদের কামরায়  শাইখকে অনেক সময় দেখা যেতো এবং তাবলীগের মুরুব্বীদের পক্ষ থেকে হুজুরের জন্যে বিশেষ সিট বরাদ্দ থাকতো। বাবরি মসজিদ হেফাজতের উদ্দেশ্যে লংমার্চ আন্দোলনের কিছুদিন পরে তিনি কিছু আলেম উলামা নিয়ে তাবলীগ জামাতে বের হলেন। এক আলেম রসিকতা করে বললেন, হুজুর লংমার্চ ও করলেন আবার তাবলীগেও আসলেন। হুজুর বললেন, লংমার্চ করেছি কাফিরদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করার জন্য। আর তাবলীগে এসেছি  আল্লাহর ভয়ে।
 তাযকিয়ার অতি উচ্চ সোপানে তিনি আসীন ছিলেন 
তাযকিয়াতুন নফস তথা আত্মশুদ্ধি প্রতিটি মুমিনের জন্য জরুরি। আলেমদের জন্য আরো জরুরি। নবী রাসূলের বিশেষ কাজের মধ্যে এটি অন্যতম। নবী করীম সা. কে বিশেষভাবে এ কাজের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছেÑ ‘তিনি তাদেরকে পবিত্র করবেন।’
আমাদের শাইখ তাযকিয়া তথা সকল বিষয়ের দীক্ষা নিয়েছেন শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. থেকে। অতপর নিয়মিত বাইয়াত গ্রহণ করেন হযরত মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর নিকট। দীর্ঘ রিয়াযত-মুজাহাদা শেষে তরীকতের ইজাযত লাভ করেন। তাছাড়া হারদুঈর হযরত মাওলানা আবরারুল হক রহ.-এর সুহবতেও তিনি বহুবার গিয়েছেন। মাওলানা হাকীম আখতার সাহেবের ইসলাহী মাহফিলেও বহুবার গমন করেছেন। হুজুরের শত ব্যস্ততার পরও দাওয়াতুল হকের প্রোগ্রামে তিনি নিয়মিত হাজির হতেন এবং তার প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রাহমানিয়ার ওপরের জামাতের ক্লাসগুলো বন্ধ রেখে ছাত্র-শিক্ষক সকলকে অংশগ্রহণ করার জন্য উদ্বুব্ধ করতেন।
তিনি নিজেকে এমনভাবে ভুলে যেতেন, যেনো তিনি একেবারে সাধারণ মানুষ। একবার তিনি ময়মনসিংহের জারিয়ার কারী সাহেব হুজুরের সান্নিধ্যে আসলেন এবং তার আধ্যাত্মিকতা ও গুণে মুগ্ধ হয়ে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। কিন্তু কারী সাহেব হুজুর তাকে বাইয়াত করলেন না এবং বললেনÑ আপনি কোথায়? আমি কীভাবে আপনাকে মুরিদ করব? 
একজন নায়েবে নবী কতো মুখলিস ও সহজ সরল হলে এমনটি প্রকাশ করতে পারেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের শাইখ আধ্যাত্মিকতারও অনেক উঁচু সোপানে আসীন ছিলেন। তার কারণ হলো মানুষের যখন স্মৃতি বিভ্রাট ঘটে তখন একান্ত আসল বস্তু ছাড়া তার নিকট অন্য আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। কিন্তু আমাদের শাইখকে দেখা গেছে সে অবস্থায়ও সর্বদা জিকির করতেন। নিজের ছেলেকেও চেনেন না, কিন্তু মুখে সর্বদা জিকির লেগেই আছে। সুস্থ অবস্থায়ও যখন গাড়ি দিয়ে চলতেন সর্বদা যিকির করতেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজীমÑ সবচেয়ে বেশি বলতেন।   একদিন বলছিলেনÑ রিকশার চেয়ে গাড়িতে বসলে বেশি জিকির মনে আসে। একবারে শেষের দিকে আল্লাহ আল্লাহ জিকির বেশি করতেন। শেষ দেখা হুজুরকে বারডেম হাসপাতালের বেডে দেখে আসলাম। এতো অসুস্থতার পরও চেহারা কতো উজ্জ্বল। যারা বেশি পান খায় তারা যেমন মুখ বেশি নাড়াচাড়া করে হুজুরের মুখ জিকিরের সাথে সাথে তেমন নড়াচড়া করছেন। এটা অনেক উচ্চস্তরের মাকাম। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের শাইখকে তা দান করেছিলেন। সাধারণ স্তরের বুজুর্গগণ এ অবস্থায়  সবকিছু ভুলে যান। আল্লাহ তা’য়ালা তার মর্যদা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। 
ইলম ও আমলের অপূর্ব সমন্বয় 
একদিকে তিনি যেমন বড় আলেম তেমনি তিনি সুন্নতের একনিষ্ঠ পাবন্দ। কখনো সুন্নতের খেলাফ কোনো কাজ তাকে করতে দেখা যেতো না। যা আমলি ময়দানের সর্বশেষ কথা। আর আমলের প্রাণ হলো ইখলাস। তার প্রতিটি কথা ও কাজ থেকে ইখলাস টপকে পড়তো। ইখলাস কোনো দেখার বিষয় না। কিন্তু বড়দের সুহবতে তার ইখলাসের এমন স্তর হাসিল হয়েছিল বাইরে থেকেও তা বোঝা যেতো। সকল মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্যতা তার অন্যতম প্রমাণ।
খেলাফত তথা সর্বস্তরে দীন প্রতিষ্ঠায় শাইখুল হাদীস রহ. এদেশেই অনেক আলেম রয়েছেন যারা ভালো আলেম আমল ও ভাল আখলাকও ভাল কিন্তু ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠায় তাদের কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু আমাদের শায়খ এ বিষয়ে সিংহ পুরুষ ও বীরবিক্রম সিপাহসালার। বাতিলের সামনে তিনি কোনদিন মাথানত করেননি। বহুবার জেল খেটেছেন কিন্তু বাতিলের সাথে আপোস করেননি। একাই নেমে গেছেন জেহাদের ময়দানে। বাতিল সদা তার ভয়ে কম্পমান থাকতো। শাইখুল হাদীস রহ. সুস্থ থাকতে আমরা এমনটি কখনো দেখিনি। এর চেয়ে অনেক কম কিছু হলেও বাংলার শার্দুল গর্জে ওঠতেন। আজ দীন নিয়ে দীনি শিক্ষা নিয়ে রাসূল নিয়ে কতো কি হচ্ছে? শায়খুল হাদীসের যুগে তার সিকিভাগও হতে পারেনি। যে কোনো ইস্যুতে সচেতন দীনদাররাও তাকিয়ে থাকতো শাইখুল হাদীস সাহেব কী বলেন? তারাও তাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতো।
জীবদ্দশায় শায়খুল হাদীসের মূল্যায়ন 
অনেক বড় বড় আলেমে দীন তাদের জীবদ্দশায় মূল্যায়ন পান না। কিন্তু শাইখুল হাদীস রহ. ব্যতিক্রম। আজীবন তিনি শাইখুল হাদীস নামে খ্যাত। বহু আগে তিনি নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি হয়েছিলেন। তিনি কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি হাফেজ্জী হুজুরের জীবদ্দশায় খেলাফত আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর নিয়োজিত হয়েছিলেন। সর্বদলীয় ওলামা পরিষদের সদর নির্বাচিত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ছিলেন। খেলাফত মজলিসের আজীবন আমির ছিলেন। চারদলীয় ঐক্যজোটের ইসলামী ঐক্যজোটের শীর্ষনেতা। জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও শাইখ। আরও কতো দায়িত্ব তা আমাদের জানারও বাইরে। তাকে মানুষ যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার সময় সরকার, বিরোধীদল ও সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিকট সর্বজন স্বীকৃত কথা শাইখুল হাদীসকে জেলে আটক করার কারণেই বিগত সরকারের ভরাডুবি ও চারদলীয় জোটের উত্থান। সকল মহলেই তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ট নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি খণ্ডকালীন সফল শিক্ষক ছিলেন। অনেক আলেমে দীন আর্থিক দৈন্যেতায় কষ্ট ভোগ করেন কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা তাকে আবু হানিফা রহ.-এর মতো অজস্্র সম্পদও দান করেছেন। কিন্তু তার এ সম্পদ আল্লাহর প্রাপ্তিতে সহায়ক হয়েছে এবং পরিবার বিনির্মাণে সহজ হয়েছে। 
বিশ্বস্তসূত্রে শুনেছি যে, লালবাগ মাদরাসায় অধ্যাপনাকালে ব্যবসার দেখাশোনা নিজেই করতেন। কিন্তু কিতাবের মুতালায় কোনোদিন ত্র“টি দেখা দিতো না এবং সময়মতো দরসে হাজির হতেন এবং তা নিয়ে ছাত্রদের সাথে কোনোরূপ আলোচনাই করতেন না। এবং নিজের মধ্যে সম্পদের কোনো ভাব পরিলক্ষিত হতো না। যেটাকে হাদীসে আত্মরক্ষার ঢাল নামে অভিহিত করা হয়েছে।
আল্লাহ তা’য়ালা তাকে ঐ দোয়ার পূর্ণ প্রতিচ্ছবি বানিয়েছেনÑ হে আল্লাহ! আমার মাল ও সন্তান বৃদ্ধি করে দিন। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে অনেক সন্তান-সন্ততি দান করেছেন এবং তিনি তাদেরকে যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। এ কারণেই তার ঔরসজাত সন্তানদের মধ্যে থেকে প্রায় ৮০ জনেরই বেশি হাফেজে কুরআন এবং প্রায় ৪০ জন আলেম। এটি একজন মানুষের জীবনের বড় সফলতা। এমনটি আমাদের দেশে আর শোনা যায় না। আমাদের দেশে অনেকে দীনি কাজে ব্যস্ত থাকার দরুন পরিবার পরিজনের খোঁজ খবর নিতে সময় পান না। ফলে অনেকেই হারিয়ে যায়। কিন্তু শাইখুল হাদীস তার ব্যতিক্রম। তার পরিবারের সকলেই মেধাবী ও ভালো আলেম এবং সুন্নাহর অনুসারী। তার পরিবার এদেশের সকল আলেমদের মহব্বতের পাত্র এবং অনুসরণীয়।
সুঠাম দেহের অধিকারী ও দীর্ঘ হায়াত 
আমরা আমাদের জীবনে বৃদ্ধ বয়সেও শাইখুল হাদীস রহ. কে সুস্থ দেখতাম এবং মাশাআল্লাহ আল্লাহ তা’য়ালা তাকে যেমন নিয়ামত দিয়েছিলেন তেমন খেতেও পারতেন এবং শরীরও সর্বদা সুস্থ থাকতো। এক হাদীসের দৃষ্টিতে এটিও আল্লাহর এক বড় নিয়ামত। হাদীসে এসেছে নেক আমল হায়াত বৃদ্ধি করে। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের শাইখ রহ. কে প্রায় শত বর্ষ হায়াত দান করেছেন। মৃত্যুর পরও তার সমান মাকবুলিয়াত সারা দেশের আলেম উলামা, জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ  সারা দেশের মানুষের এমন উপচে পড়া ভিড় যা ইতিপূর্বে আর দেখা যায়নি। 
কিন্তু মৃত্যুর পর সমাহিত হলেন জনমানবশূন্য আটি বাজারের প্রান্ত সীমায়। সারা জীবনের সরব মানুষটি আর সেখানে নীরব থাকবেন কী ভাবে? সেখানেও শুরু হয়েছে জাগরণ। তাকে ঘিরে সেখানেও গড়ে উঠবে দীনি মারকাজ এটাই তো স্বাভাবিক।
আমি যখন নীরবে চিন্তা করি, শাইখুল হাদীস রহ.কে আল্লাহ তা’য়ালা কোন বিষয়টি দেননি? অন্তরের শ্রদ্ধাবিজড়িত জবাব আসেÑ আল্লাহ তা’য়ালা শাইখুল হাদীস রহ. কে ভালো সবকিছুই দান করেছেন এবং তার দ্বারা পূর্ণাঙ্গ দীনের পরিপূর্ণ খেদমত নিয়েছেন। আমরা আল্লাহর কাছে আশা করব, আল্লাহ তা’য়ালা জান্নাতেও যেন সকল নিয়ামত দ্বারা তাকে বেষ্টন করে রাখেন এবং তার পরিবারবর্গ ও আমাদেরকে তার অনুসরণ করার তাওফিক দান করেন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকা

Powered by Create your own unique website with customizable templates.