• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী

শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি  
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান

বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া জীবন। খবরের কাগজ, আর বইপাঠে অবসর যাপন করেন। দেশের হালচাল, রাজনীতির খোঁজ-খবর আর তরুণদের সঙ্গে গল্প করে উজ্জীবিত হন।  প্রাণীত হন তার কোনো সতীর্থ বা পূর্বসূরীর স্মরণ-আলোচনায়।  উপমহাদেশের অবিসংবাদিত আলেম শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর সাহেবজাদা মাওলানা মুমুনুল হক কে পেয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠেই স্মৃতির ডানা  মেলে উড়ছিলেন। খুলে  বলছিলেন খুব কাছ থেকে দেখা শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.।  এ বিষয়ে তার উপলব্ধির কথা। দীর্ঘ সময়ের বৈঠকে হারিয়ে যাওয়া ৫০-৬০ দশকের পুরনো স্মৃতিও উঠে এসেছে তার আলোচনা থেকে। 
আন্দোলন, সংগ্রাম, রাজপথ, রাজনীতি দেশে-বিদেশে মুসলিম উম্মাহর সংকটকালে শাইখের ঈমানদীপ্ত ভূমিকার কথাও বলছিলেন তিনি। আলোচনা  শুনে মনে হচ্ছিল এক মহীরুহের মুখে হিমালয়ের প্রশংসা। পাঠকের কাছেও আলাপ-আলোচনার চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলÑ 


শাইখুল হাদীসকে যেমন দেখেছি
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান


রাহমানী পয়গাম : আপনি কেমন আছেন? 
মুহিউদ্দীন খান : আছি কোনো রকম। শরীর ভালো না। নানা রকম অসুস্থতায়  ভুগছি।
রাহমানী পয়গাম : কী ধরনের অসুস্থতা  বেশি  ভুগছেন?
মুহিউদ্দীন খান : ডায়বেটিস তো আছেই। এখন আর চলা-ফেরাও করতে পারি না। কোথাও যেতে পারি না। ওপর থেকে নিচেও নামতে পারি না। বিশেষ করে মাথায় এক ধরনের যন্ত্রণার কারণে খুব কষ্ট হয়।
রাহমানী পয়গাম : এখন কীভাবে আপনার সময় কাটে?
মুহিউদ্দীন খান : এখন অবসর সময়ে বই পড়ি। একটু-আধটু লিখতে চেষ্টা করি। এই কাজটার মধ্যেই একটু শান্তি পাই। আর কিছুর মধ্যে শান্তি পাই না।
রাহমানী পয়গাম : এখন কি আর আগের মতো লেখালোখি করতে পারেন?
মুহিউদ্দীন খান : এখনো অনেক কাজ করতে ইচ্ছা করে। খুব নিয়ত করি সব কাজ করে ফেলবো। কিন্তু কিছু করতে পারি না।
রাহমানী পয়গাম : আমরা শাইখুল হাদীস রহ. জীবনী সংকলনের একটা উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা আপনার সহযোগিতা চাই।
মুহিউদ্দীন খান : আমি এমনিতেই এখন কোনো কাজ আর করতে পারি না। কিন্তু শাইখুল হাদীস সাহেবের কাজ, আমার সাধ্যে যতটুকু কুলায় আমি করে দিবো। আপনি আসবেন অথবা আপনার ভাগিনাকে পাঠিয়ে দেবেন। গল্প বলার মতো আমি বলবো আপনারা লিখবেন। আমার লেখা জীবনের খেলা ঘরে দেখেছেন হয়তো। গল্পের পর গল্প বলে গেছি। শেষ না করে ছাড়া যায় না। সে রকম করে বলবো। আর যতটুকু সম্ভব হয় নিজেও লিখবো।
রাহমানী পয়গাম : আমরা জানি, বর্তমান আলেমদের মধ্যে আপনিই এমন আছেন যে শাইখুল হাদীস সাহেবকে একেবারে যুবক অবস্থায় দেখেছেন। তার সাথে অনেক কাজও করেছেন। জানতে চাই শাইখুল হাদীসের সঙ্গে আপনার প্রথম দেখা কবে, কোথায় হলো?
মুহিউদ্দীন খান : ৫০ এর দশকের কথা। আমি তখন ঢাকায় নতুন। মাওলানা আলী নেওয়াজ নামে আমার এক ভগ্নিপতি ছিলেন। তিনি ক’জন বন্ধু বান্ধবসহ ঢাকায় থাকতেন। তিনি ছিলেন জামেয়া কুরআনিয়া লালবাগ মাদরাসার শিক্ষক। সেই সুবাদে লালবাগে আমার অনেক যাতায়াত ছিল। শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের সাথে আমার তখন থেকেই পরিচয়। গ্রাম থেকে ফাজিল পাস করার পর আমার একান্ত ইচ্ছা লালবাগ মাদরাসাতেই ভর্তি হই। কিন্তু সদর সাহেব হুজুর রহ. আমাকে নিষেধ করলেন। বললেন এখানে থাকা-খাওয়া অনেক কষ্ট, তুমি এতো কষ্ট করতে পারবে না। তুমি এক কাজ করো ঢাকা আলিয়ায় ভর্তি হও। সেখানে আমাদের এই মাদরাসার উস্তাদ মাওলানা যফর আহমদ উসমানী রহ. বুখারি শরিফ পড়ান। তুমি তার কাছেই বুখারি পড়ো, আর আমাদের সাথে যোগাযোগ  রেখো। হুজুরের কথামতো আমি ঢাকা আলিয়ায় ভর্তি হই।
রাহমানী পয়গাম : শাইখুল হাদীসের সাথে ওঠাবসার সুযোগ হয় কখন কীভাবে?
মুহিউদ্দীন খান : আমার ভগ্নিপতির মাধ্যমেই মূলত সম্পর্ক হয়। আমি থাকতাম হোস্টেলে। কিন্তু সময় পেলেই চলে যেতাম লালবাগ মাদরাসায়। ঢাকায় তখন মোমেনশাহির লোকজন ছিল না বললেই চলে। একটু কথা বলারও মানুষ ছিল না। তাই মন পড়ে থাকত লালবাগে। তখনই শাইখুল হাদীস সাহেবের কাছাকাছি যাওয়া হয়। তা ছাড়া হুজুরের শ্যালক মাওলানা আমিনুল ইসলাম রহ. ছিলেন আমার সহপাঠি। সেই সুবাদে হুজুর আমার সাথেও বেশ রসিকতা করতেন। ফলে খুব সহজেই হুজুরের সাথে আমার সখ্য গড়ে ওঠে।
রাহমানী পয়গাম : সেই সময়ে বাংলা ভাষায় ইসলামি গ্রন্থ ছিল না বললেই চলে। তখন শাইখুল হাদীসসহ আপনারা এই সংকট দূর করতে অনেক কিছু করেছেন বলে শুনেছি। বাংলা ভাষায় কোনো কাজের কথা কি মনে পড়ে?
মুহিউদ্দীন খান : হ্যাঁ, মনে পড়ে। একটা বাংলা মাসিক পত্রিকাও আমরা করেছিলাম। সদর সাহেব হুজুরের দরবারে সবসময় প্রচুর লোকজন থাকত। হুজুরের ভক্ত-মুরিদরা প্রতিদিনই ভিড় করতেন হুজুরের দরবারে। ওই সময় খুলনার এক ব্যক্তি ছিলেন মুমিনুদ্দীন নামে। তিনি থাকতেন ধানমন্ডি ভূতের গলিতে। ছিলেন সরকারি কর্মচারী। কোনো সন্তানসন্ততি ছিল না। তিনি সদর সাহেব হুজুরের মুরিদ ছিলেন। বড় কাটারা মাদরাসা থেকে তখন নেয়ামত নামে মাসিক একটা পত্রিকা বের হতো। তিনি প্রস্তাব করলেনÑলালবাগ মাদরাসা থেকেও একটা পত্রিকা বের করার। আলোচনা পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত হলো পত্রিকা প্রকাশের। এর সম্পাদনার দায়িত্ব পড়ল শাইখুল হাদীস সাহেবের ওপর।
রাহমানী পয়গাম : পত্রিকায় শাইখুল হাদীস সাহেব কী কাজ করতেন? পত্রিকার নাম কী ছিল?
মুহিউদ্দীন খান : তিনি তখন নওজোয়ান আলেম। খুব কর্মতৎপর। প্রচুর কাজ করতেন। কোনো অলসতা ছিল না। চক থেকে সদরঘাট হেঁটে চলে যেতেন। যাহোক আল ইসলাম নামে পত্রিকাটির ডিক্লারেশন নেয়া হলো। শাইখুল হাদীস সাহেব আমাকে ডেকে বললেনÑ তুমি এই পত্রিকায় কিছু কাজ করো, লেখা দাও।
আমি তখন দৈনিক আজাদে টুকটাক লেখালেখি শুরু করি। আমরা আল ইসলামে কাজ শুরুল করলাম। শাইখুল হাদীস সাহেব হলেন পত্রিকার সম্পাদক। মূল কাজটা হুজুর দেখে দিতেন। আমরা অন্যান্য কাজ করতাম। কিন্তু পত্রিকাটি বেশি দিন নিয়মিত প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
রাহমানী পয়গাম : পত্রিকাটি কেন নিয়মিত প্রকাশ  সম্ভব হয়নি ?
মুহিউদ্দীন খান : পত্রিকাটির মাত্র তিনটা সংখ্যা বের হয়েছিল, তারপর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। তখনকার সমাজে পাঠকের সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। ঢাকায় তখন দুই শ্রেণির লোক বাস করতো এক, সরকারি কর্মচারী। দুই, ঢাকাইয়া। ঢাকাইয়ারা বাংলা হাত দিয়ে ছুয়েও দেখতো না। তাই একটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ   অনেক কঠিন ব্যাপার ছিল।
রাহমানী পয়গাম : পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেল-এরপর কী করলেন?
মুহিউদ্দীন খান : আমি যেহেতু লেখালেখির প্রতি বেশি আগ্রহী তাই শাইখুল হাদীস সাহেব তখন আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন হামিদিয়া লাইব্রেরির মালিক গোলাম আজম সাহেবের সাথে। তিনি লেখালেখির কিছু কাজ করাতেন। এরপর এমদাদিয়া লাইব্রেরির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এমদাদিয়ার সাথে তখন বড় বড় আলেমদের যোগাযোগ ছিল।  যোগাযোগ ছিল মাওলানা আব্দুল জলিল মাজাহিরি রহ.,মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমি রহ.সহ  অনেকের। মাজাহিরি সাহেব ঢাকা আলুর বাজারে ইমামতি করতেন। সারাদিন লিখতেন। মাঝে মাঝে লালবাগ মাদরাসায় আসতেন। বাড়ি ছিল কুমিল্লা। আরেকজন ছিল মৌলভি মুজাফ্ফর হোসেন। তার বাড়ি ছিল নরসিংদি রায়পুরা। আরেকজন বর্তমান এশিয়ান ইউনির্ভাসিটির সাদেক সাহেবের বাবা আব্দুল খালিক। তিনিও প্রচুর লিখতেন। তাদের মাঝে আমার পাত্তা পাওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। তারপরও কিছু কাজ করতাম। 
রাহমানী পয়গাম : ষাটের দশকের শাইখুল হাদীসের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল?
মুহিউদ্দীন খান : শাইখুল হাদীস সাহেব সেই পাকিস্তান আমল থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় । নেজামে ইসলাম পার্টি করেছেন। মাওলানা আতহার আলী রহ. তো শাইখুল হাদীস সাহেবদের নিয়েই রাজনীতি শুরু  করেছেন। আর মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর প্রায় কাজ শাইখুল হাদীসই করতেন। কারণ সদর সাহেব হুজুর রহ. কোনো কাজ সাংগঠনিক পদ্ধতিতে করতেন না। হুজুর হুকুম দিতেন। আর সমস্ত কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল শাইখুল হাদীস সাহেবের ওপর।
রাহমানী পয়গাম : আপনি বললেন সদর সাহেব হুজুরের সমস্ত কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল শাইখুল হাদীসের ওপর। এ কথার দৃষ্টান্ত স্বরূপ কোনো ঘটনা কি মনে পড়ে?
মুহিউদ্দীন খান : একটি ঘটনা এখনো মনে পড়ে। একবার ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে বিতর্ক হল। সরকার বললো আগামী কাল ঈদ হবে। কিন্তু সদর সাহেব হুজুর রহ., শাইখুল হাদীস সাহেব হুজুর বললেন, না। আগামীকাল ঈদ হবে না। আমার স্পষ্ট মনে পড়ে, আমি তখন ঢাকা আলিয়ার হোস্টেলে থাকি। শাইখুল হাদীস সাহেব আমাকে ডেকে হুকুম করলেন, মসজিদে মসজিদে গিয়ে বলার জন্য যে, আগামীকাল ঈদ হবে না। তখন আমি ও জনাব আব্দুর রাজ্জাক নামে একজন মাওলানা সাহেব ছিলেন ফরিদপুরের।  লালবাগ ছাতিওয়ালা মসজিদের ইমাম ছিলেন তিনি। আমরা বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে ঘোষনা করলাম, আগামীকাল ঈদ হবে না। সবাই রোজা রাখবেন। মানুষের মধ্যে বেশ প্রভাব পরলো। পরে  কোনো মানুষই ঈদ করেনি। জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়ানোর মতো লোক তারা খুঁজে পায়নি। অবশেষে কোনো রকম এক লোককে ধরে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছে। সদর সাহেব রহ. শাইখুল হাদীস সাহেবসহ আমরা পরের দিন ঈদ করলাম। ঈদের দিন আমরা ঈদ উপলক্ষে বংশাল থেকে একটা মিছিলও বের করেছিলাম। মিছিলে শীর্ষ  নেতাদের তেমন কেউ ছিল না। বংশাল এলাকায় কিছু নওজোয়ান ছিল। যারা এ সমস্ত ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিল। 
আরও একটা ঘটনা 
মাওলানা আকরাম খাঁ তার তাফসির গ্রন্থে জীনকে অস্বীকার করে বসলেন। যা কুরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কিন্তু কোনোভাবেই সে তার মত থেকে ফিরে আসছে না। তখন শাইখুল হাদীস সাহেব তার প্রতিবাদে লিফলেট প্রকাশ করলেন। তিনি চ্যালেঞ্জ করলেন  মাওলানা আকরাম খাঁ যদি তার এই মত থেকে ফিরে না আসে তাহলে তার ঈমান থাকবে না।  সেসময়ের  কথা।  আইয়ুবখানের ইসলাম বিরোধী কোনো কাজের ব্যাপারে আলেমদের একটা পরামর্শ বৈঠকের আয়োজন হয়েছিল।  বৈঠক  ছিল আজাদ অফিসে। বৈঠকে সদর সাহেব হুজুর রহ. শাইখুল হাদীস সাহেবসহ আমরা ছিলাম। সেখানে মাওলানা আকরাম খাঁও ছিলেন। বৈঠকের এক পর্যায়ে মাগরিবের আজান হলো। সবাই যখন নামাজের জন্য উঠতে যাবেন, এমন সময় মাওলানা আকরাম খাঁ বললেন, কেউ বাহিরে যাবেন না। আমরা এখানেই নামাজ পড়বো। সবাই কাতারবন্দী হলো। কে ইমামতি করবেন?
একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। আকরাম খাঁ বললেন, মাওলানা আজিজুল হক নামাজ পড়াবে। নামাজের পর আকরাম খাঁ বললেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা যদি প্রশ্ন করেন তোমার ঈমান আছে কি না? তাহলে আমি মাওলানা আজিজুল হককে সাক্ষী মানবো। বলবো আমি মাওলানা আজিজুল হকের পিছনে নামাজ পড়েছি। 
রাহমানী পয়গাম : স্বাধীনতার পর তো আপনি শাইখের সাথে রাজনীতি করেছেন। শাইখ ছিলেন জমিয়তের সভাপতি আপনি সেক্রেটারি। সে সময়ের  কোনো কথা মনে পড়ে?
মুহিউদ্দীন খান : স্বাধীনতার পরের সময়টা ছিল বেশ দুর্যোগপূর্ণ। দাড়ি টুপি নিয়ে চলাটাও কঠিন হয়ে গেল।  তখনো শাইখুল হাদীস সাহেব কথা বলতে দ্বিধা করতেন না। তিনি খুব সাহসী মানুষ ছিলেন। তখন শাইখুল হাদীস সাহেব সারা দেশে মাহফিল করে দীনের দাওয়াত দিতেন।
সারা দেশে এমন কোনো মাহফিল হতো না যেখানে তিনি আমন্ত্রিত হতেন না। আমরাও অনেক সময় ভয় পেয়ে যেতাম। যেতে মানা করতাম। শাইখুল হাদীস সাহেব বলতেন, ধুরো মিয়া। আল্লাহ ভরসা। কিছু হবে না।
স্বাধীনতার পর ইসলামি রাজনীতি যখন বন্ধ। আলেমদের মুখ খোলারও জো নেই। প্রয়োজন দেখা দিল নতুন করে কাজ শুরু করার। ইসলামি রাজনীতির হাল ধরার।
এমন সময়ে মাওলানা আব্দুল্লাহ দরখাস্তি ঢাকায় সফরে  আসেন। তিনি আমাদের পরামর্শ দিলেন যে, তোমরা শাইখুল হাদীস সাহেবের কাছে যাও। দেখো ওনাকে নিয়ে কিছু করা যায় কি না। আমি তখন সরাসরি শাইখুল হাদীসকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সদারত তথা সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ করলাম। তিনি এই শর্তে রাজি হলেন যে, আমি সেক্রেটারির দায়িত্ব নিব তার অনুরোধে আমি সেক্রেটারির দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। ৩ বছর দলের সভাপতি ছিলেন। আর আমি সেক্রেটারি। জমিয়তের অফিস তখন পাটুয়াটুলি। অফিস করতে যখনই আসতেন হাতে বুখারি শরিফের পাণ্ডুলিপি থাকত। সময় পেলেই পান্ডুলিপি দেখতেন। সময়ের অনেক গুরুত্ব দিতেন। জমিয়তের কাজে তখন শাইখ সারা দেশে সফর করেছেন। যেখানেই যেতেন সাথে আমাকে নিয়ে যেতেন।
রাহমানী পয়গাম : শাইখুল হাদীস সাহেবের জীবনের অনেক বড় একটি আন্দোলন বাবরি মসজিদ লংমার্চ। এ ব্যাপারে আপনার কোনো স্মৃতি?
মুহিউদ্দীন খান : বাবরী মসজিদ লংমার্চের সময় প্রাথমিক কিছু কাজের সাথে আমি যুক্ত ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে রাবেতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং পড়ে যাওয়ায় আমার সউদি আরবে  চলে যেতে হয়। তাই লংমার্চের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকার আমার সুযোগ হয়নি। কিন্তু সেখান থেকেই আমরা লংমার্চের প্রতিটা পদক্ষেপ প্রত্যক্ষ করেছি।
রাহমানী পয়গাম : বাবরি মসজিদ পুনঃর্নির্মানের দাবিতে শাইখুল হাদীসের এই লংমার্চ আরববিশ্বে কেমন সাড়া ফেলেছিল?
মুহিউদ্দীন খান : শাইখুল হাদীসের এই লংমার্চ সেখানে কী পরিমাণ সাড়া ফেলেছিল তা বর্ণনাতীত। আমরা টিভি নিউজে লংমার্চের প্রতিটা পদক্ষেপ দেখেছি। কাফেলা যখন বীরদর্পে এগিয়ে যাচ্ছিল। সারা মক্কায় তখন উত্তেজনায় হৈ হৈ রব উঠে।  আরববিশ্বে একজন মুজাহিদ আলেম হিসেবে শাইখুল হাদীস পরিচিতি লাভ করেন। লংমার্চের পরে শাইখুল হাদীস সাহেব মদিনা সফরে গিয়েছিলেন। লংমার্চনেতা হিসেবে হুজুরকে সেখানে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়া হয়। জেদ্দার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমিও উপস্থিত ছিলাম।
রাহমানী পয়গাম : বাংলাদেশের এই লংমার্চ সেখানে এতো সাড়া ফেলার কারণ কী ছিল?
মুহিউদ্দীন খান : একে তো সেখানে অনেক বাঙালি ছিল, তাদের মধ্যে ব্যপক উৎসাহ ছিল। তা ছাড়া বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটা কেউই মেনে নিতে পারেনি। সবাই চাইতেন এর ভালো একটা প্রতিবাদ হোক। তাই লংমার্চের প্রতি মানুষের আগ্রহটা অনেক বেশি ছিল।
রাহমানী পয়গাম : শাইখুল হাদীসের জীবনে অনেক বড় একটি অজর্ন বাংলা বুখারি। এ ব্যাপারে আপনার কোনো স্মৃতি বা মূল্যায়ন?
মুহিউদ্দীন খান : বুখারির অনুবাদের কাজ আমাদের সামনেই হয়েছে। প্রথম খণ্ডের কাজ হয়েছে বেগম বাজার মসজিদে বসে। আমিও বুখারি শরিফের প্র“ফ দেখে দিয়েছি। বুখারি শরিফের মতো একটা কিতাব অনুবাদ করা বেশ সাহসের ব্যাপার ছিল। যেটা শাইখুল হাদীসের দ্বারা সম্ভব হয়েছে।
রাহমানী পয়গাম : কাজটা অনেক সাহসের ব্যাপার ছিল কেন?
মুহিউদ্দীন খান : এতো বড় কিতাব লিখে শেষ করা। এতো বড় কিতাব প্রকাশ করার মতো লোক খুঁজে পাওয়া পাঠক পাওয়া তো সবই অনিশ্চিত ছিল। সবই কঠিন ছিল। কাজটা সহজ কোনো ব্যাপার ছিল না।
রাহমানী পয়গাম : ইরাক-ইরান সফরে আপনি শাইখের সফর সঙ্গী ছিলেন। সেই সময়ের কোনো স্মৃতি কি মনে পড়ে?
মুহিউদ্দীন খান : না আমি ইরাক-ইরান সফরে ছিলাম না। ওনারা যাওয়ার সময় মক্কা শরিফ হয়ে যান। তখন সেখান থেকে আমাকে সঙ্গে নেয়া হয়। সেই সফরে হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর মুখপাত্র হিসাবে শাইখুল হাদীস সাহেব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আর মাওলানা আখতার ফারুক রহ. যে ইতিহাস লিখছেন সেখানে কিছু ভুলত্র“টি রয়ে গেছে।
রাহমানী পয়গাম : শাইখুল হাদীসের রাজনৈতিক জীবনের ওপর মূল্যায়ন?
মুহিউদ্দীন খান : বাংলাদেশের রাজনীতির শুরু থেকে এ পর্যন্ত পুরোটাই শাইখুল হাদীসের অবদান। হাফেজ্জী হুজুর যে কাজটা শুরু করেছেন সেটা এ পর্যন্ত পৌঁছানোর পুরো অবদান শাইখুল হাদীস সাহেবের। আলেম ওলামাদের সংসদ পর্যন্ত তিনিই পৌঁছিয়েছেন। তিনি যে এতোগুলো দল নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করেছিলেন সেটা বাংলাদেশের ইসলামি রাজনীতিতে একটা বিশাল ঘটনা। এতোগুলো দলকে এক কাতারে নিয়ে আসা সহজ ব্যাপার ছিল না। এটা শাইখুল হাদীসের ব্যক্তিত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে।
হাফেজ্জী হুজুরকে জমানোর মূল কারিগর ছিলেন  শাইখুল হাদীস সাহেব। আমরা কর্মীরা সবাই ছিলাম শাইখুল হাদীস সাহেবের পেছনে। হাফেজ্জী হুজুরের ইলেকশনের সময় আমরা সারা দেশ সফর করেছি। কখনো গাড়িতে। কখনো পায়ে হেঁটে। খেয়ে-না খেয়ে। আমরা তখন দেখেছি হাফেজ্জী হুজুরের সব কাজের পরামর্শদাতা ও সহযোগী ছিলেন শাইখুল হাদীস সাহেব চাই সেটা মাদরাসার বিষয় হোক, চাই সেটা রাজনৈতিক বিষয় হোক। হাফেজ্জী হুজুরের সকল কাজ গোছানোর দায়িত্ব ছিল শাইখুল হাদীস সাহেবের ওপর। শাইখুল হাদীস সাহেব তখন বলতেন দেশে আলেম ওলামাদের রাজনীতির ব্যাপারে যে ভীতি লক্ষ করা যাচ্ছে, এভাবে যদি চলতে থাকে. তাহলে দেখা যাবে পরবর্তীরা এটাকে নাজায়েজ কাজ মনে করছেন। তাই এখনই আমাদের মাঠে নামতে হবে। আল্লাহর রহমতে সবার মাঝে হাফেজ্জী হুজুরের যে গ্রহণযোগ্যতা আছে তাতে তিনি যদি ডাক দেন তাহলে সবাই সুন্দরভাবে ব্যাপারটা গ্রহণ করবে। শাইখুল হাদীস সাহেবকে আলাদা করা ছিল এ আন্দোলন ধ্বংসের মূল কারণ। এরপর তারা তো কেউ আর জমাতে পারেনি।
রাহমানী পয়গাম : শাইখুল হাদীস সাহেব তো ব্যক্তিগতভাবে সরল প্রকৃতির ছিলেন। কিন্তু রাজনীতির ময়দান তো অনেক জটিল, ওই ময়দানে তিনি কীভাবে সফলতার সাথে কাজ করলেন?
মুহিউদ্দীন খান : আসলে তিনি রাজনৈতিক মানুষ ছিলেন না। ছিলেন বেশি শিক্ষক। তাছাড়া সরল হওয়ার অর্থ তো বোকা হওয়া নয়। তিনি সরল ছিলেন এ কথা সত্য কিন্তু অত্যন্ত বিচক্ষণ  ছিলেন। তাই সফলতার সাথে এই কঠিন ময়দানে সফলতার সাথে কাজ করতে  তেমন সমস্যা হয়নি।
রাহমানী পয়গাম : শাইখুল হাদীসের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি কি ছিল?
মুহিউদ্দীন খান : শাইখুল হাদীসের মধ্যে একটা সম্মোহনী শক্তি ছিল। মারুষদের  আকর্ষণ করার ক্ষমতা ছিল। তিনি যদি কাউকে হুকুমও করতেন তার মধ্যে অনুরোধের সুর থাকত। কাউকে ছোট মনে করতেন না। কারো বিপক্ষে কথা বলতেন না।
রাহমানী পয়গাম : বর্তমান এই সংকটময় মূহূর্তে শাইখুল হাদীসের শূন্যতা অনুভব করেন?
মুহিউদ্দীন খান: কাউকে তো আর দেখি না। এমন কোনো ব্যক্তি এখন আর নাই যার ডাকে সবাই জড়ো হতে পারে।
রাহমানী পয়গাম : দীর্ঘ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মুহিউদ্দীন খান : আপনাদেরও ধন্যবাদ। আপনাদের কাছে দোয়া চাই। আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। যেন ঈমানের সাথে চলে যেতে পারি সেই দোয়া করবেন। আজকে কিছু কথা বললাম। আরেক দিন আসবেন, আরও কথা বলবো ইনশাআল্লাহ।

Powered by Create your own unique website with customizable templates.