• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
মুফতি এনায়েতুল্লাহ

কওমি মাদরাসা অঙ্গনের পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত যে ক’জন ক্ষণজন্মা অভিভাবক ছিলেনÑ শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. তাদের অন্যতম। আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে মাদরাসা শিক্ষা সম্প্রসারণে তার ভূমিকা ছিল প্রবাদতুল্য। লেখালেখি ও হাদিসের দরসদানের পাশাপাশি কওমি মাদরসাসমূহের যেকোনো ধরনের সঙ্কট ও সমস্যায় তিনি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করে গেছেন কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির দাবিতে। রাজনৈতিকভাবে পদ-পদবী বা ক্ষমতা প্রাপ্তিকে তিনি রাজনীতির লক্ষ্য বানাননি। তার রাজনৈতিক অভিলাষ ছিল; উচ্চাকাক্সক্ষাও ছিল- কিন্তু তা ছিল কওমি মাদরাসার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। যেমনটি ছিল তার শাইখ ও মুরশিদ মোজাহেদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী সদর সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহির।
২০০৬ সাল। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায়। জোটবদ্ধ হওয়ার কারণে ইসলামী ঐক্যজোট বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। জোটের শীর্ষ নেতা হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. ছিলেন পরম শ্রদ্ধার পাত্র। বিশেষ করে কওমি অঙ্গনের ছাত্র-শিক্ষকের কাছে তিনি ছিলেন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। দেশে তার অসংখ্য ছাত্র বিদ্যমানÑ শুধু এ হিসেবেই নয়; বরং একজন দক্ষ, দূরদর্শী ও কৌশলী নেতা হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটে তিনি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিভাবক হিসেবে। এক্ষেত্রে বলা যায় তার উপমা তিনিই। 
‘কওমি মাদরাসার কারিকুলাম ও শিক্ষা ব্যবস্থা’ শিরোনামে ২০০৬ সালে ‘সমকাল’ পত্রিকায় ষোলো কিস্তির একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছিলাম। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিবেদনের পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া আসছিল। প্রতিবেদনের শেষ দিকে ‘কওমি মাদরাসার সংস্কার ও স্বীকৃতি’ বিষয়ে দেশের শীর্ষ আলেমদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর কাছে যাই রাহমানিয়া মাদরাসায়। শাইখ তখন দরসে ছিলেন। আগে যোগাযোগ করে যাইনি বিধায় কিছু সময় বসে থাকতে হয়। ক্লাস শেষ করে তিনি এলেন অফিসে। যাবেন মিরপুরে দরস দিতে; হাতে সময় কম। তাও সময় দিলেন। মনোযোগ দিয়ে শুনলেন আমার কথাগুলো। সব শুনে বললেন, আজই ইন্টারভিউ নেবেন? আমি বললাম, হযরত! আপনার মর্জি। কিছু সময় চুপ থেকে বললেন ঠিক আছে, বলেন। এরপর শুরু হয় আলাপচারিতা। একসময় শেষ হয় সাক্ষাৎকার পর্ব। সাক্ষাৎকার শেষে তিনি বললেন, সময় পেলে আসবেন। আপনার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগল। এভাবেই শাইখের সঙ্গে আমার পরিচয়। শুধু পরিচয় বললে ভুল হবে। হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা। এরপর ২০০৬ সালের আগস্টের মাঝামাঝিতে যখন কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির দাবিতে তিনি মুক্তাঙ্গনে অবস্থান ধর্মঘট করেন তখন প্রতিদিন পালা করে শাইখের সঙ্গে দেখা করে আসতাম। সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ।
শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল কওমি মাদরাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি আদায়। অনেকেই বিভিন্নভাবে এ দাবির পক্ষে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন ও করে যাচ্ছেন। কিন্তু তার ভূমিকা ছিল অন্যদের তুলনায় একটু ব্যতিক্রম। তিনিই একমাত্র ব্যক্তিÑ যিনি দেশের লাখ লাখ কওমি অঙ্গনের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে স্বীকৃতির দাবীতে বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয় দলের কাছে এই দাবি পেশ করে দেন-দরবার করেছেন। চারদল ক্ষমতায় থাকাবস্থায় মুক্তাঙ্গনে তিনি টানা পাঁচ দিন অবস্থান ধর্মঘট করেছেন। আবার তিনিই ভিন্ন ঘরানার রাজনৈতিক শক্তি বলে পরিচিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দেওয়া হবে মর্মে চুক্তি করে তাদের সমর্থন দিয়েছেন। সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে তার এই অবস্থান সত্যিই অভাবনীয়। বৈষয়িক স্বার্থ ত্যাগ করার কারণেই তিনি এই অবস্থানে যেতে পেরেছিলেন। 
শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. জানতেন, সময়ের প্রেক্ষাপটে সনদের স্বীকৃতিটা অতীব জরুরি। সনদহীনতাকে তিনি অস্তিত্বের সঙ্কট বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি বলতেন, সব রাজনৈতিক দলই সনদের স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক নেতার স্বার্থজনিত দ্বন্দ্বের কারণে এটা বিলম্বিত হচ্ছে। রাজনৈতিক টানাপড়েনের এক পর্যায়ে তিনি হয়ে ওঠেন দেশের কওমি মাদরাসাগুলোর জন্য একমাত্র মুখপাত্র। সনদের স্বীকৃতির আন্দোলনকে তিনি রূপ দিয়েছেন নতুনভাবে। এটাকে তিনি নিয়েছিলেন জীবনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে। স্বপ্ন দেখিয়েছেন আলেম-উলামা ও ছাত্রদের। কিন্তু স্বপ্নের সেই ফেরিওয়ালা দেখে যেতে পারেননি তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি ও সংস্কার। শব্দগুলো বেশ কঠিন মনে করে বিভিন্নজন এটাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে থাকেন। কিন্তু এ বিষয়ে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর চিন্তাধারা ছিল খুব স্পষ্ট। সেদিনকার সাক্ষাৎকারে তিনি এটা বেশ খোলামেলাভাবেই আলোচনা করেছিলেন। নিচে পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ উল্লেখ করা হলোÑ
প্রশ্ন : কওমি মাদরাসায় বিদ্যমান অবস্থার কোনো রকম পরির্বতন প্রয়োজন আছে বলে কি আপনি মনে করেন?
শাইখুল হাদীস : আমাদের শতকরা নব্বইভাগ মুসলমানের এই দেশে নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞানের যে ব্যাপক দৈন্য তা রীতিমতো বিস্ময়কর। প্রচলিত সাধারণ শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারীদের ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভ্রান্তি দেখে তাদের প্রতি বড় করুণা হয়। তাই বিশাল এ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় নির্দেশনা ও নেতৃত্বের দায়িত্ব মূলত কওমি মাদরাসার শিক্ষিতদেরই পালন করতে হয়। এজন্য ইসলামি জ্ঞানে পারদর্শিতা অর্জনের চাপটা অনেক বেশি। এরপরও আমি মনে করি, ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মাতৃভাষা বাংলা, আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিসহ প্রয়োজনীয় সাধারণ শিক্ষার সীমিত পরিমাণ কওমি মাদরাসা শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের অপরিহার্য দাবি।
প্রশ্ন : বিদ্যমান অবস্থায় এর মূল সমস্যাগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?
শাইখুল হাদীস : সারাদেশের মাদরাসাগুলোর মধ্যে এককেন্দ্রিক দৃঢ় সমন্বয় না থাকায় এর কারিকুলামে প্রয়োজনীয় পরিমার্জন যথাযথভাবে হচ্ছে না। যুগ চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে গবেষণামূলক সংস্কারও তেমন একটা হয়নি। এ ছাড়া সনদের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন না থাকাও অগ্রগতি না হওয়ার অন্যতম কারণ।
প্রশ্ন : এসব সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আপনার চিন্তাভাবনা একটু বলুন।
শাইখুল হাদীস : কওমি মাদরাসা শিক্ষার কারিকুলাম বিষয়ে গবেষণামূলক কাজ হওয়া প্রয়োজন। বৈজ্ঞানিক ও সুবিবেচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই সংস্কার করতে হবে, যাতে এর ধর্মীয় ঐতিহ্য ক্ষণœ না হয়।  সম্প্রতি (২০০৬) ‘জামিয়াতুল আযীয আল ইসলামিয়া’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমি এ প্রচেষ্টা শুরু করেছি।
প্রশ্ন : বলা হয় যে, আসল সমস্যা এর শিক্ষাব্যবস্থার ভেতর। এখানে মননশীলতা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে না পারলে কোনো সমস্যারই সমাধান হবে না। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
শাইখুল হাদীস : কুরআন-সুন্নাহই প্রকৃত জ্ঞানের আধার। কাজেই মননশীলতা বলেন আর সৃজনশীলতাই বলেন তার উৎসও কুরআন এবং সুন্নাহই। তবে সমকালীন সমাজ, পরিবেশ ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখা-প্রশাখা সম্পর্কেও ধারণা থাকা চাই। এগুলো কুরআন-সুন্নাহর পরিপূর্ণ শিক্ষারই সহায়ক। কাজেই সমস্যা খুব প্রকট নয়, সহজেই এর সমাধান সম্ভব।
প্রশ্ন : কওমি মাদরাসার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রশ্নটি সামনে আসছে। আপনারা কি সম্মিলিতভাবেই এ স্বীকৃতি চান? নাকি এ প্রশ্নে বিভক্তি আছে?
শাইখুল হাদীস : এ প্রশ্নে এখন আর তেমন কোনো বিভক্তি নেই। সম্মিলিতভাবেই আমরা এ স্বীকৃতি চাই। স্বীকৃতিটা কারও কোনো করুণা নয়, এটা আমাদের অধিকার। যতদিন স্বীকৃতি না হবেÑ ততদিন আমাদেরকে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিতই করা হবে। 
প্রশ্ন : আপনারা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কেন চান? যারা চায় না তাদের বক্তব্যটা কী?
শাইখুল হাদীস : দেশ, জাতি ও সমাজের প্রতি আমাদের কর্তব্য পরিপূর্ণ পালন এবং রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে আমাদের প্রাপ্য অধিকার আদায়ের জন্য স্বীকৃতি চাই। চায় না এমন উল্লেখযোগ্য কেউ নেই। তবে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে কেউ কেউ কোনো কোনো মহলের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করেনÑ সেটাও অমূলক নয়। তবে স্বীকৃতির প্রশ্নে সবাই একমত। এখানে কোনো বিভক্তি নেই। থাকলে আমাদের আন্দোলনে এমন সাড়া ফেলত না। 
প্রশ্ন : রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া গেলে কওমি মাদরাসা থেকে ফারেগ শিক্ষার্থীরা চাকরি ও পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবে বলে মনে করেন কি?
শাইখুল হাদীস : এ বিষয়টি শুধু স্বীকৃতির ওপরই নিভর্রশীল নয়। এক্ষেত্রে উন্নতির জন্য গঠনমূলক আরো কিছু কাজ আমাদের করতে হবে। তবে স্বীকৃতি পেলে সেটা ত্বরান্বিত হবে। আগে তো স্বীকৃতি হোক। আর দক্ষতার কথা যেটা বললেন, তার জন্য তো দরকার সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদানের। আপনি আলেমদের আগে সুযোগ দেন। এরপর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। কাজের মূল্যায়ন তখনই হয়Ñ যখন কাজের ক্ষেত্র থাকে, প্রতিযোগিতা থাকে।
প্রশ্ন : ধর্মীয় শিক্ষার মূল কথা হওয়া উচিত শিক্ষার্থীকে উত্তম মানুষ হওয়ার যোগ্য করে তোলা। এ ক্ষেত্রে কওমি মাদরাসার শিক্ষা কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পারছে বলে মনে হয়?
শাইখুল হাদীস : এ ক্ষেত্রে কওমি মাদরাসার সাফল্যের হার তুলনামূলক অনেক অনেক গুণ বেশি। আমাদের সমাজে জরিপ চালালে যে কেউ এ কথার সত্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হবে। আমি তো প্রায়ই সাংবাদিকদের বলি, ভাই! আপনারা শুধু কওমি মাদরাসার দোষ খুঁজেন, একটি ভালো কাজও কি আপনাদের নজরে আসে না? জোর করছি না, পারলে সত্যটাও লিখেন!
প্রশ্ন : বিদ্যমান বিশ্ব সমাজ ও জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভ ছাড়া উন্নত মূল্যবোধ, উত্তম জীবনবোধ, ন্যায়বিচার, সুশাসন, আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিকতা, জবাবদিহি, গণতন্ত্র ইত্যাদি সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে আজকের যুগে কুরআন-সুন্নাহর মর্ম উপলব্ধি করা বা ধর্মীয় শিক্ষক হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন কি?
শাইখুল হাদিস : না। এসব বিষয়ে অজ্ঞ থেকে কুরআন-সুন্নাহর যথার্থ মর্ম উপলব্ধি করা খুব কঠিন। বিশ্ব সমাজ ও জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যেমন এটা সম্ভব নয়, তেমনি কুরআন-সুন্নাহ তথা আদর্শিক জ্ঞান ও আল্লাহ ভীতি অর্জন ছাড়াও উন্নত মূল্যবোধ, উত্তম জীবনবোধ, ন্যায়বিচার, সুশাসন ও জবাবদিহিতার অনুশীলন সম্ভব নয়। আজকের অশান্ত, অমানবিক সমাজ ও বিশ্ব পরিস্থিতি তারই প্রমাণ বহন করে। দেখুন, কওমি মাদরাসার সিলেবাসে কিন্তু এসবই বেশি বেশি পড়ানো হয়। এটা আমি জোর গলায় বলতে পারি, নৈতিকতার দিক দিয়ে কওমি মাদরাসার ফারেগরা অন্য যে কারো তুলনায় এগিয়েই আছে। 
প্রশ্ন : কওমি মাদরাসার সংস্কারের ব্যাপারে কোনো কোনো বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন?
শাইখুল হাদীস : আমূল কোনো সংস্কার শুধু অপ্রয়োজনীয়ই নয়, অবাঞ্ছিতও। তবে নিয়মিত গবেষণার মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে এর আধুনিকায়ন এবং মূল কাঠামো ঠিক রেখে সমাজ ও বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে পরিমার্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
সাক্ষাৎকারটি ২০০৬ সালের ১৬ জুন শুক্রবারে ছাপা হয়। শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর সাক্ষাৎকার সনদের স্বীকৃতির আন্দোলনকে নতুনভাবে আন্দোলিত করে। তরুণরা এগিয়ে আসে দলে দলে। বিশ্ব মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয় কওমি অঙ্গনের এ দাবির কথা।
শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. আজ আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি যে স্বপ্ন এ দেশের আলেম সমাজকে দেখিয়ে গেছেন তারও বাস্তবায়ন হয়নি। আশা করি শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাই আন্তরিক হবেন। এগিয়ে নিয়ে যাবেন তার মিশনকে। আল্লাহ তায়ালা শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর কবরকে জান্নাতের বাগানে পরিণত করুন। আমিন

লেখক : সহ-সম্পাদক, দৈনিক সমকাল

 

Powered by Create your own unique website with customizable templates.