• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী

ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
সমর ইসলাম

বিনয় প্রকাশের জন্যে নয়; সত্যি বলছি, শাইখুল হাদীস  আল্লামা আজিজুল হক রহ. সম্পর্কে লেখার কোনো যোগ্যতা আমার নেই। ইলমে হাদিস বিষয়ে আমার মতো মূর্খ তাঁর মতো হাদিসবিশারদ সম্পর্কে লিখতে বসে শংকায় ভয়ে কলম থেমে আসে। কি লিখতে কী লিখে ফেলি! কোনোভাবেই আড়ষ্টতা কাটাতে পারছিলাম না। তিনি একজন ক্ষণজন্মা কর্মবীর জ্ঞানতাপস। এমন মানুষের জন্ম শতাব্দীতে খুব কম হয়। তাঁকে নিয়ে কিছু লিখতে হলে বিশ্বাস ও চিন্তার যে গভীরতা, বিদ্যা ও জ্ঞানের যে দখল থাকা দরকার তার কোনো কিছুই আমার মাঝে নেই। জ্ঞানের ক্ষেত্রে আমার দীনতা আমাকে দগ্ধ করে, নিজে উপলব্ধি করি; কিন্তু অন্যকে বোঝাই কী করে!
আমার আল্লাহ আমাকে হয়তো অনেক ভালোবাসেন। তাঁর করুণা আমি উপলব্ধি করি মর্মে মর্মে। যাঁদের পায়ের কাছে বসার যোগ্যতা আমার ছিল না, তাঁদের মতো মনীষীদের সঙ্গে এক দস্তরখানে বসার সুযোগ আমার অনেকবার হয়েছে। যাঁদের ক্লাসে বসে দরস নেয়ার সুযোগ আমার হয়নি কোনোদিন, তাঁদের অমূল্য অনেক বক্তৃতা আমিই নোট করে ছেপেছি পত্র-পত্রিকায়। নিয়মিত না হলেও কালের অভিভাবক, দেশ-বিদেশের বরেণ্য আলেমদের কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি পেশাগতভাবেই। খুব কাছ থেকে তাঁদের দেখা, তাঁদের সম্পর্কে জানা এবং তাঁদের মূল্যবান কথা শুনতে পেরেছি। সে কারণেই হয়তো প্রিয়বর হুমায়ুন আইয়ুব এ মহান মনীষীর ওপর বিশেষ সংখ্যায় প্রাজ্ঞ বিজ্ঞ লেখকদের সঙ্গে আমার নামটিও জুড়ে দিতে চেয়েছেন। হতে পারে, আল্লাহ তায়ালার প্রিয় এসব মনীষী সম্পর্কে দু’চার কথা লেখাটাও আমার জন্যে আখেরাতের সম্বল হয়ে যেতে পারেÑ এ লোভেই কলম হাতে নেয়া। পাঠক আমাকে ক্ষমা করবেন।
এক.
১৯৯২ সালের ৫ ডিসেম্বর। পত্রিকায় কাজ নিয়ে প্রথম ঢাকায় আসা। দিনটি ছিল শনিবার। সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ তরুণ। প্রথম ঢাকা আসার উত্তেজনা চাপা পড়ে যায় অন্য একটি কারণে। শুধু আমি নই, কেবল এই ভারতবর্ষের মুসলমানরাই নয়; গোটা পৃথিবীর মানুষের দৃষ্টি ছিল তখন অযোধ্যার দিকে। কী হবে, কী হতে যাচ্ছে সেখানে! সবার চোখ কান খোলা। অবশেষে খবর এলো। ঢাকায় প্রথম রাতটি কাটালাম। রাতটি দুঃস্বপ্নময় ছিল। ৬ ডিসেম্বর রবিবার। কম্পিত হাতে খবরের কাগজগুলোর পাতা দেখছিলাম। তখনও দেশে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার যাত্রা শুস্ত হয়নি। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম ছাড়া বিবিসি ভরসা। অনুমান করতে পারি, অযোধ্যায় আল্লাহর ঘরে হামলা হচ্ছে না, বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের কলিজায় হাতুড়ি শাবল গাঁইতি আর ত্রিশূলের বিষাক্ত আঘাত পড়ছে। এইদিন শত শত বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয় উগ্র হিন্দুরা। পুলিশ প্রহরায় তারা নির্বিঘেœ এ ঘৃণ্য কর্মটি সম্পন্ন করে। মুসলমানদের আটকে রাখা হয়, সরিয়ে রাখা হয়।-এরপরও যারা অগ্রসর হয়েছে, ফিরেছে লাশ হয়ে।
কী আজব ব্যাপার! তখন ভারতের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ধর্মনিরপেক্ষ ধ্বজাধারী কংগ্রেস সরকার। বিজেপি আরএসএস-এর নেতৃত্বে এই বর্বরতা সংঘটিত হয়। ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর অসভ্য হিন্দুত্ববাদী শক্তি গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে দাঙ্গা ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট হয়েছিল। মুসলমানরা দাঁতে দাঁত চেপে সময়টা পার করে। আমাদের বাংলাদেশে তখন স্বৈরাচার হটিয়ে সদ্য গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানানোরও সুযোগ পায়নি সরকারি পুলিশ বাহিনীর ভয়ে। কাঁদছিল কোটি মানুষের অন্তর। কী করলে মনের যন্ত্রণা লাঘব হতে পারে! আহা, আমরা কি কিছুই করতে পারবো না? মনের মধ্যে জ্বলতে থাকা এই ক্ষোভের অনল প্রশমণের কোনো উপায় কী তাহলে নেই?
ঠিক এই সময় একটি প্রতিবাদী কণ্ঠ সবার আগে গর্জে উঠলো। না, আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। প্রতিবাদ জানাতে হবে। শুধু কাগজে বিবৃতি দিয়ে নয়। জান-মাল ব্যয় করে ঈমানের তেজ প্রমাণ করতে হবে। তিনি ঘোষণা করলেন ঐতিহাসিক লংমার্চের। শরিক হতে বললেন সবাইকে। শত বাধা উপেক্ষা করে সেদিন সমুদ্রের ফেনায়িত তরঙ্গের মতো বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল লক্ষ লক্ষ তোহিদি জনতা। আর-এর নেতৃত্বে যিনি ছিলেন, তিনি হলেন বাংলার ইমাম বুখারিখ্যাত আল্লামা আজিজুল হক রহ.।
এই প্রথম আমি তাঁকে চিনি। আমি তাঁকে জানি। তাঁর কথা শুনি। তাঁর লংমার্চ-পূর্ব সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহ করি। তারপর কতবার তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে! কত মিটিং-মিছিল, সভা-সমাবেশ, সাংবাদিক সম্মেলন, ঘরোয়া মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি তার কোনো শুমার নেই।
দুই.
বিগত শতকের শেষ দশকটা ছিল ইসলামবিরোধী নানা আন্দোলন সংগ্রামে মুখরিত। বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে লংমার্চ ছাড়াও ইসলাম ও রাষ্ট্রদ্রোহী নানা ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় এ দেশের আলেম সমাজ যে গৌরবময় ভূমিকা রেখেছিলেন, মাত্র কয়েকজন অভিভাবক আলেমের অনুপস্থিতিতে এ শূন্যতা আজ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে জাতি। এসময় ক’জন নাস্তিক এক সঙ্গে আল্লাহদ্রোহিতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছিল। তারা ইসলাম ও মুসলমানদের অনগ্রসর, প্রাচীন ও মৌলবাদী চেতনাসর্বস্ব হিসেবে চিহ্নিত করতে থাকে। তাদের মতে, ইসলাম মুক্তচিন্তা ও প্রগতির পথে বাধা; নারীমুক্তি ও নারী স্বাধীনতার অন্তরায়। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে নানাভাবে নানা মাধ্যমে কুৎসা রটনা ও বিষোদগার করতে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন মৃত অধ্যাপকÑ যিনি নিজের লাশটি শকুন- কুকুরের খাবার বানানোতেও আগ্রহী ছিলেন; অবশ্য তার সে ইচ্ছা অনেকটাই পূর্ণ হয়েছিল। মৃত্যুর আগে লাশটি মেডিকেল ছাত্রদের কাটা-ছেঁড়ার জন্যে দান করে গিয়েছিলেন; কিন্তু মেডিকেলের ছাত্ররাও তার লাশটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অন্য একজন কুলাঙ্গার নারী; যিনি জনরোষের শিকার হয়ে প্রায় এক যুগ ধরে নির্বাসনে জীবন কাটাচ্ছেন। সেখানেও খুব শান্তিতে নেই। মৃত্যু-আতঙ্ক তাকে তাড়া করে ফিরছে। এসব নাস্তিক-মুরতাদের পাশাপাশি চলছিল কাদিয়ানিদের অপতৎপরতা। সে সময় নাস্তিক-মুরতাদ, দেশ ও খোদাদ্রোহীদের বিস্তদ্ধে দেশের মানুষকে সচেতন করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। দেশের মানুষ জ্বলন্ত বারুদের মতো তেতে উঠেছিল। নাস্তিক-মুরতাদ, দেশ ও আল্লাহদ্রোহীদের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়েছিল। তারা কেউ দেশ ছেড়েছিল; কেউ বা আত্মগোপন করেছিল, আবার কেউ বোলও পাল্টে ফেলেছিল। আর এ আন্দোলনের অন্যতম নায়ক ছিলেন শাইখুল হাদীস  আল্লামা আজিজুল হক। তাঁরই নেতৃত্বে পরবর্তীতে ইসলামী ঐক্যজোট গঠিত হয়। ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ইসলামবিরোধী সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।-এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোট বেশ কয়েকটি আসনে নির্বাচিতও হয়েছিল। কিন্তু শায়খের বয়সজনিত দুর্বলতা, অসুস্থতা ও স্বার্থবাদী কিছু ব্যক্তি বিশেষের অসহযোগিতা এবং পরবর্তীতে সহযোদ্ধা সংগ্রামী আলেম খতিব মাওলানা উবায়দুল হকের ইন্তেকালÑ সব মিলিয়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা আর ধরে রাখা যায়নি। জাতি এখন অনেকটাই হতাশ। এমন অভিভাবকের জন্যে আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে কে জানে!
আমরা শাইখকে দেখেছি রাজপথে লড়াকু সৈনিক হিসেবে। মিথ্যা মামলা খেয়েছেন, জেল খেটেছেন, জুলুমের শিকার হয়েছেন; কত ভয়, হুমকি, অত্যাচার-নির্যাতন সয়েছেন; কিন্তু নীতি ও আদর্শের জায়গা থেকে তাঁকে এক চুলও নড়াতে পারেনি কেউ। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ তৌহিদী জনতা তাঁর ডাকে রাস্তায় নেমেছেন। সকল ধরনের দেশ, জাতি ও খোদাদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে এক দুর্ভেদ্য ঐক্য গড়ে তুলে তিনি মুসলমানদের স্বকীয় জাতিসত্তা বিকাশে গৌরবময় অবদান রেখেছেন। তিনি কেবল রাজপথের লড়াকু সৈনিক ছিলেন না; ছিলেন জাতি গঠনের মহান উস্তাদ। সিহাহ-সিত্তার অন্যতম হাদিস গ্রন্থ বুখারি শরিফের প্রথম বাংলা তরজমা তিনিই করেছেন। তাঁর তরজমার উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে অনেকে বুখারি শরীফ বাংলায় প্রকাশ করেছেন। তাঁর ঋণ এ জাতি কোনোদিন শোধ করতে পারবে না।
  তিন.
আল কুরআনে উল্লিখিত চির অভিশপ্ত ইহুদিরা যে মুসলমানদের চির দুশমন এ কথার অত্যন্ত খোলামেলা প্রমাণ পেশ করলো আবারও এক ইহুদি পিশাচ। বারবারই-এরা পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে মুসলমানদের ঈমানের কঠিন পরীক্ষায় ফেলে।-এরা জানে মুসলমানদের কাছে তাঁদের নবী কতটা প্রিয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইজ্জত রক্ষার্থে জীবন দিতে কখনও কোনো মুসলমান পিছ পা হয় না। আর সেই সুযোগটাই তারা কাজে লাগায় অত্যন্ত কৌশলে। সেখানেই তারা আঘাত করে যেখানে আঘাত করলে কোটি কোটি মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। তাই তারা কখনও রাসূলের ব্যঙ্গ কার্টুন আঁকে। কখনও উস্কানিমূলক মন্তব্য করে তাঁর চরিত্র হননের অপপ্রয়াস চালায়। আবার কখনও বা নির্মাণ করে কুৎসিত চলচ্চিত্র। মুসলমানদের ক্ষেপিয়ে দিয়ে তারা প্রমাণ দিতে চায় মুসলমানরা হিংস্র।
কত জঘন্য ও নিষ্ঠুর খেলা তারা খেলে চলেছে। সম্প্রতি প্রখ্যাত মার্কিন বিশ্লেষক ড্যানকফ ইরানের ইংরেজি ভাষার নিউজ চ্যানেলে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ইসরাইলই ৯/১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। তিনি এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছেন। বোকারও বুঝতে বাকি নেই, পরিকল্পিতভাবে ৯/১১ ঘটিয়ে বিনা প্রমাণে দোষ চাপিয়ে একাধিক মুসলিম দেশে ভৌগোলিক আক্রমণ করে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে ওরা। তাদের এই রক্তরঞ্জিত হাত আড়াল করতেই আবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কার্টুন এবং নোংরা চলচ্চিত্র নির্মাণ। সেয়ানা ইহুদি, মার্কিনীদের কোলে বসে উস্কানিমূলক ফিল্ম বানায় এবং সেখানেই মুক্তি দেয়। মুসলমানদের ক্ষোভের আগুন আর ঘৃণার থুতুতে শরিক করে তাদের।
মুসলমানদের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়া ঘৃণ্য এ কর্মের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড ক্ষোভ নিন্দা ও প্রতিবাদ হতে থাকে। রাসূলপ্রেমের প্রমাণ দিতে গিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশে জীবনের নজরানাও পেশ করেছেন অনেকে। বিশ্বময় প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে তৌহিদী জনতা। কিন্তু সেই তুলনায় রাসূলের শানে এত বড় বেয়াদবির পরও বাংলাদেশের আলেম সমাজ কেন জানি অতীতের মতো গর্জে উঠতে পারেননি। এখানেই শাইখুল হাদীস  আল্লামা আজিজুল হক ও খতিব উবায়দুল হক রহ.-এর অভাব স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। তাঁদের অভিভাবকত্বের শূন্যতা টের পাওয়া যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা এ শূন্য স্থান পূরণ করার তাওফিক দান করুন।
  চার.
এবার সংক্ষিপ্তভাবে শাইখুল হাদীস  আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ, দেশের শীর্ষ আলেম, বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ বুখারি শরিফের প্রথম বাংলা অনুবাদক, ইসলামী আন্দোলনের আপসহীন জননেতা, খেলাফত মজলিশ ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ইলমে দীনের শিক্ষাগার। তৈরি করেছেন হাজার হাজার আলেম, হাফেজ ও ইসলামি শিক্ষাবিদ। ইসলামের বিরুদ্ধে যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রণী সৈনিক। যদিও তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে অনেক দিন থেকেই অচল অক্ষম, তবুও তাঁর ইন্তেকালে জাতি বড় ধরনের অভিভাবক শূন্যতায় পড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। কেননা, এই মাপের আলেমদের অভিভাবকত্ব কেবল শারীরিক সক্ষমতার উপর নির্ভর করে না; বরং-এর সঙ্গে রূহানি সম্পর্কও জড়িত থাকে। এটা কেবল তাঁরাই বুঝতে পারবেন, যাদের অন্তরে ন্যূনতম হলেও আধ্যাত্মিক বোধ-চিন্তা জাগ্রত রয়েছে। তিনি দেশ-বিদেশে হাদিসবিশারদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ৬০ বছরেরও বেশি সময় হাদিসের চর্চা ও পাঠদানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ১৩২৬ বাংলা সনের পৌষ মাস মোতাবেক ১৯১৯ সালে এ মহান মনীষীর জন্ম তৎকালীন ঢাকা জেলার মুন্সিগঞ্জ মহকুমার বিক্রমপুর পরগনার লৌহজং থানার ভিরিচ খাঁ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে। তাঁর বাবার নাম আলহাজ-এরশাদ আলী ও মা হাজেরা বেগম। তিনি মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মাকে হারান। ফলে নানাবাড়িতে নানি ও খালার কাছে লালিত-পালিত হন।
কিছুদিন গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করেন তিনি। তারপর সাত বছর বয়সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামেয়া ইউনুসিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর তত্ত্বাবধানে চার বছর লেখাপড়া করেন। ১৯৩১ সাল থেকে ঢাকা বড় কাটারা মাদরাসায় ১২ বছর লেখাপড়া করে কৃতিত্বের সঙ্গে মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ধাপ দাওরায়ে হাদিস  পাস করেন। এ সময় আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী, আল্লামা রফিক কাশ্মিরী, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী, মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. প্রমুখ বিজ্ঞ হাদিসবিশারদের কাছে কুরআন ও হাদিসের জ্ঞানলাভ করেন। ১৯৪৩ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতের ডাভেল জামেয়া ইসলামিয়ায় ভর্তি হন। সেখানে মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ., মাওলানা বদরে আলম মিরাঠী রহ. প্রমুখের কাছে শিক্ষালাভ করেন। শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ. বুখারি শরিফের যে আলোচনা করেন, তা তিনি নোট করে রাখেন। পরবর্তী জীবনে এ ব্যাখ্যাই তার জীবনের বিশেষ সম্বল হয়ে ওঠে। সর্বশেষ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে মাওলানা ইদরিস কান্ধলবী রহ.-এর তত্ত্বাবধানে তাফসির বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। পরে তাঁর উস্তাদ মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.-এর নির্দেশে ঢাকায় চলে আসেন তিনি।
শুরু হয় ঢাকার জীবন। ভারতের অধ্যাপনা শেষ করে বড় কাটারা মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। লালবাগ মাদরাসায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বুখারি শরিফ পাঠ দান করেন।-এর মধ্যে তাঁর রচিত বুখারি শরিফের প্রথম বাংলা অনুবাদ প্রাকাশিত হয়। এ ছাড়া তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে, বরিশাল জামিয়া মাহমুদিয়া, জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া মোহাম্মদপুর, মিরপুর জামেউল উলুম, উত্তরা দারুস-সালাম, লালমাটিয়া জামেয়া ইসলামিয়া, সাভার ব্যাংক কলোনি ও বনানী জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় বুখারি শরিফের পাঠদান করেন। ১৯৭৮ সালে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের [বেফাক] প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ স¤পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি লালবাগ কেল্লা জামে মসজিদ, মালিবাগ শাহী মসজিদ ও আজিমপুর স্টেট জামে মসজিদের খতিব ছিলেন। জাতীয় ঈদগাহেও ঈদের ইমামতি করেছেন কয়েক বছর। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শরিয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাতমসজিদের পাশে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া গড়ে তোলেন মালিবাগ জামিয়া শরিয়ায়ও প্রিন্সিপাল হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন।
বড় মানুষদের ছোটবেলাটাও ব্যতিক্রম থাকে। ছাত্রজীবনেই ইংরেজ খেদাও আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন তিনি। শিকার হন ইংরেজদের জুলুম-নির্যাতনের। রাজনৈতিক জীবন শুরু নেজামে ইসলাম পার্টির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতির দায়িত্ব পান, ১৯৮১ সালে হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর ডাকে খেলাফত আন্দোলনে যোগদান করেন এবং দলের নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। এ সময় তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর খেলাফত মজলিস প্রতিষ্ঠা করে রাজনীতির ইতিহাসে এক ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসেন তিনি। ১৯৯১ সালে সমমনা ইসলামী কয়েকটি দল নিয়ে গঠন করেন ইসলামী ঐক্যজোট। তিনি-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে একটি আসন [সিলেট-৫] লাভ করেন। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে বাবরি মসজিদ ভাঙা হলে-এর প্রতিবাদে শাইখুল হাদীস  মিছিল, মিটিং ও আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯৯৩ সালের ২-৪ জানুয়ারি বাবরি মসজিদ পুনর্ণিমাণের উদ্দেশে ঢাকা থেকে যশোরের বেনাপোল হয়ে অযোধ্যা অভিমুখে লংমার্চের নেতৃত্ব দেন। এ লংমার্চে পাঁচ লক্ষাধিক লোক স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।
এই সাহসী মানুষটিই বাবরি মসজিদ ভাঙার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওকে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন এবং বিমানবন্দর ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেন। ক্ষেপে গিয়ে তৎকালীন সরকার ১৯৯৩ সালের ৯ এপ্রিল তাঁকে গ্রেফতার করে। জনগণের বিক্ষোভের মুখে অবশেষে ৮ মে ১৯৯৩ সালে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইসলামি রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব। চারদলীয় জোট প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন তিনি।
হযরতের ছাত্রজীবনে রচিত  বুখারি শরিফের উর্দু ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফজলুল বারি শরহে বুখারি’ পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত হয়। আল্লামা জালাল উদ্দিন রুমির মসনবি শরিফের বাংলা অনুবাদ করেছেন তিনি। সত্যের পথে সংগ্রাম, পুঁজিবাদ, সমাজবাদ ও ইসলাম, কাদিয়ানি মতবাদের খণ্ডন, মাসনূন দোয়া সংবলিত মুনাজাতে মাকবূল প্রভৃতি তাঁর অনবদ্য গ্রন্থ। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে প্রকাশিত বাংলা ভাষায় ধর্মীয় পত্রিকা ‘মাসিক রাহমানী পয়গাম’ তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন।
শাইখুল হাদীস  আল্লামা আজিজুল হকের খেদমত শুমার করার মতো নয়। উপরে যা তুলে ধরা হয়েছে নিতান্ত মোটা দাগের একটি তালিকা মাত্র। এ মহান পুরুষের ছাত্রদের ছাত্র দ্বারা এদেশে লক্ষ লক্ষ আলেম তৈরি হচ্ছে। মোহাম্মদপুর সাতমসজিদ জামেয়া রাহমানিয়া মাদরাসাসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তুলেছেন। দেশ-বিদেশে তাঁর হাতেগড়া হাজার হাজার ছাত্র হাদিসের চর্চা ও গবেষণায় রত আছেন। তার পাঁচ ছেলে, আট মেয়ে ও অনেক নাতি-নাতনি রয়েছে। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, পরিবারের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিসহ শতাধিক সদস্য কুরআনে হাফেজ।
পরিশেষে বলতে হয়, বড় মানুষরা শতায়ু হলেও ক্ষণজন্মা। শাইখুল হাদীস  আল্লামা আজিজুল হকদের প্রয়োজন শতাব্দীর পর শতাব্দীর। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাই শেষ কথা। তবে তাঁর রেখে যাওয়া কাজ ও আদর্শ থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম নানাভাবে উপকৃত হতে থাকবে। ৯৩ বছর বয়সে তিনি রাজধানীর আজিমপুরে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শেষ বয়সে নানা রোগ বাসা বেঁধেছিল তাঁর শরীরে। তাই মৃত্যুর বেশ ক’বছর আগে থেকেই তিনি আর কর্মক্ষম ছিলেন না। ইন্তেকালের পরদিন ৯ই আগস্ট মহান এ মনীষীর জানাজা জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য ছিল। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র হাইকোর্ট এলাকা থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে দু’পাশের রাস্তাগুলো বন্ধ করে রাখতে হয়।
 শেষ কথা
আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর জীবন সম্পর্কে আমার জানা সামান্য কিছু তথ্য দিয়ে অগোছালো এ লেখাটির ইতি টানছি। তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন ৮ই আগস্ট [২০১২ ইং] বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। প্রথম সংবাদটি পাই অনুজ সহোদর সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বইঘরের প্রধান নির্বাহী আমিনুল ইসলামের কাছে। তখন আমি অফিসে। খবরটি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে ফোন করি প্রাজ্ঞ লেখক অনুবাদক বন্ধুবর মাওলানা যাইনুল আবিদীনের কাছে। অফিসে আমার ডিএনইকে জানালে তিনি নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে নিশ্চিত হতে বলেন। যাইনুল ভাই শুনেছেন, তবে তিনিও টেলিভিশনে খবর প্রচারের জন্যে আরও নিশ্চিত হতে পরামর্শ দিলেন। অবশেষে হুমায়ুন আইয়ুবকে কয়েকবার ফোন করে পাওয়া গেল। তিনি কাঁদছিলেন। ফোনে তাঁর কণ্ঠ জড়িয়ে আসছিল। শুধু বললেন, হ্যাঁ, শাইখ আর নেই। তারপর বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশনের স্ক্রলে আমিই প্রথম খবরটি অন-এয়ার করতে সমর্থ হই।
মনে পড়ে, এমনই এক রমজানের শেষ দশকে [৬ অক্টোবর ২০০৭, শনিবার মোতাবেক ২৩ রমজান] ইন্তেকাল করেছিলেন বাংলার আরেকজন সংগ্রামী আলেম খতিব মাওলানা উবাদুল হক। খতিব সাহেবের ইন্তেকালের ক’দিন আগে একজন গায়িকা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন চিকিৎসা করাতে। হায়রে! কি ব্যস্ততা আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলোর! প্রতিদিন তার খবর বড় বড় শিরোনামে এবং কে কত আকর্ষণীয়ভাবে প্রচার করতে পারে তার যেন প্রতিযোগিতা চলছিল। অথচ খতিব সাহেবের মৃত্যুর খবরটা নিতান্ত দায়সারাভাবে প্রচার ও প্রকাশ পেয়েছিল। ঠিক শাইখুল হাদীসের ইন্তেকালের ক’দিন আগে পার্বত্য অঞ্চলের বোমাং রাজা মারা যায়। পার্বত্য জেলার একটি সার্কেল প্রধানের মৃত্যুতে আমাদের মিডিয়াগুলোর মাতামাতি ছিল চোখে পড়ার মতো।-এরও কিছু দিন আগে জনপ্রিয় একজন সাহিত্যিকের মৃত্যু নিয়ে মিডিয়া যা করেছে তার একশ’ ভাগের এক ভাগও লক্ষ্য করা যায়নি কোটি মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র শাইখ আজিজুল হকের মৃত্যুর খবরটি নিয়ে। এটাকে আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলোর চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির দীনতা আর জাতীয় জীবনের দুর্ভাগ্য ছাড়া কী-ই-বা বলা যায়?
পরিশেষে এতটুকু বলে শেষ করতে চাই, শাইখুল হাদীস  আজিজুল হকের মত জাতির অভিভাবক ও মুসলমানদের দরদি বন্ধুর জীবন থেকে নতুন প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে। তাঁর মতো এমন মহান ব্যক্তিত্বকে আমাদের মিডিয়া উপেক্ষা করে বরং নিজেদের দীনতারই প্রমাণ দিয়েছে।-এরহুম শাইখ এদেশের ইসলামপ্রিয় সকল শ্রেণীর মানুষের হৃদয়ে চির জাগরুক থাকবেন তাঁর কর্মের দ্বারা। গণমানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় যাঁর স্থান সেখানে মিডিয়ার এই উপেক্ষাতে কিছুই যায় আসে না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে আমাদের আকুল প্রার্থনাÑ হে প্রভু! কোটি মানুষের প্রিয় এই মানুষটিকে তুমিও তোমার প্রিয় করে নাও। তাঁকে জান্নাতে উচ্চ মর্তবা দান করো। আমীন!  লেখক : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক; নিউজ রুম এডিটর, একুশে টেলিভিশন।

Powered by Create your own unique website with customizable templates.