• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী

একান্ত সাক্ষাৎকারে  হযরত শাইখুল হাদীস রহ.
সাক্ষাৎকারটা জীবনীমূলক।  জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সমুদ্রে তাকে গভীর মনে হলেও হাসিখুশি মুখে অনবরত  কথা বলে  যেতেন। মূলত শাইখুল হাদীসের বেড়ে ওঠা, শৈশব, শিক্ষাজীবন ও কর্মমূখর ব্যস্ত জীবনই গ্রন্থিত হয়েছে এ সাক্ষাৎকারে। ২০০৩ সালে শাইখের ৫০ সালা দস্তারবন্দী সমম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থের জন্য সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছিলেনÑ মাওলানা লিয়াকত আলী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা কামরুল হাসান রাহমানী। সাক্ষাৎকারটি ইতিহাসের এক অমূল্য পাঠ।  তাই ভুল হয়নি  রাহমানী পয়গামের পাঠক  দরবারে উপস্থাপনে।  সহযোগী সম্পাদক

প্রশ্ন : আপনার জন্মতারিখ জানতে চাই?
শাইখুল হাদীস : সম্ভবত ১৩২৬ বাংলা মোতাবেক ১৯১৯ ইং সনে। 
প্রশ্ন : আপনার জন্মস্থান? 
শাইখুল হাদীস : তৎকালীন ঢাকা জেলার মুন্সীগঞ্জ মহকুমার বিক্রমপুর পরগনাস্থ লৌহজং থানাধীন ভিরিচখা নামক গ্রামে।  
প্রশ্ন : পিতা ও পিতামহ সম্পর্কে কিছু বলুন।
শাইখুল হাদীস : পিতা আলহাজ এরশাদ আলী, দাদা আসগর আলী, পর দাদার নাম ছিল মোনাওয়ার আলী। 
প্রশ্ন : মাতা ও মাতামহ সম্পর্কে কিছু বলুন। 
শাইখুল হাদীস : বর্তমান লৌহজং থানাধীন কলমা গ্রামে আমার মাতুল বাড়ি। উক্ত বাড়ি এখনো বিদ্যমান আছে। সেখানে আম্মাজান ও নানিজান পাশাপাশি শায়িত আছেন। মুরব্বিদের মুখে শুনেছি যে, মাতুলালয়েই আমার জন্ম হয়েছে। আমার নানিজান দুই কন্যা নিয়ে অকালে বিধবা হন। আমার আম্মা ছিলেন তার ছোট কন্যা। 
প্রশ্ন : প্রাথমিক শিক্ষা কীভাবে শুরু হয়?
শাইখুল হাদীস : আমার পাঁচ বছর বয়সে আম্মা মারা যান। নানিজান তখনও জীবিত ছিলেন। আমি তার হেফাজতে থাকতে আরম্ভ করি। আগেই বলেছি নানিবাড়ি ছিল কলমা গ্রামে। সেই গ্রামেই পাঁচ বছর বয়সে মসজিদের ইমামের নিকট কায়দায়ে বাগদাদির সবক আরম্ভ করি। 
প্রশ্ন : বাল্যকালের বিশেষ কোনো স্মৃতি মনে পড়ে কি?
শাইখুল হাদীস : বাল্যকালের একটি স্মৃতি আমার খুব মনে পড়ে। ছোট সময়ে মা মারা গেলে আমি নানির লালন-পালনে গেলাম। কিছু দিন পর নানিও মারা গেলেন। আব্বা যেহেতু ব্যবসার প্রয়োজনে বি.বাড়িয়া থাকতেন, তাই আমাকে দাদার তত্ত্বাবধানে আসতে হলো। আমার এক দাদিও ছিলেন। তিনি আমার সপ্তম দাদি। আমার দাদা দীর্ঘ হায়াত লাভ করায় পূর্ববর্তী দাদিগণ অতীত হয়ে গেছেন। আমরা পূর্ববর্তী কোন দাদির দৌহিত্র! নিঃসন্তান এই দাদি আমাকে সন্তানের অনেক ঊর্ধ্বে নিজের গলার মালা বানিয়ে নিলেন। এই দাদির স্নেহ মমতায় আমি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়লাম। ইতিমধ্যে আব্বা আমার মরহুমা আম্মার চাচাতো বোনকে বিবাহ করে নতুন সংসার জুড়লেন। কিন্তু দাদা-দাদির স্নেহ-মমতা আমাকে সেখানেই আবদ্ধ করে রাখল। এমনকি নতুন আম্মা বা আব্বার প্রতিও আমার কোনো আকর্ষণ ছিল না।
একদিন আব্বা কোনো এক কারণে গোস্বা করে দাদা-দাদি থেকে আমাকে ছিনেয়ে আনলেন। তিনি আমাকে দাদা-দাদির নিকট যেতে দেবেন না। আমি সারাটি দিন কেঁদে কাটালাম। রাত্রে আব্বা আমাকে তার পাশে শোয়ালেন। আব্বার ভয়ে চিৎকার থামালাম ঠিকই কিন্তু ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কান্নার কোনো সীমা থাকল না। অবশেষে আব্বা ক্রোধভরে আমাকে ফেলে দেয়ার ন্যায় দাদা-দাদির ঘরে নিক্ষেপ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি তো মহা খুশি। যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। 
প্রশ্ন : শুনেছি বাল্যকালে আপনার নাম অন্য কিছু ছিল, এ ব্যাপারে কিছু বলবেন কি?
শাইখুল হাদীস : হ্যাঁ, বাল্যকালে আমার নাম ছিল আয়াতুল হক। আব্বাজান সাত বছর বয়সে যখন আমাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাদরাসায় হযরত সদর সাহেব হুজুরের নিকট নিয়ে যান তখন সদর সাহেব হুজুর আমার নাম পরিবর্তন করে আজিজুল হক রাখলেন এবং বললেন, আয়াতুল হক নামটা বেশি সুন্দর নয়। 
প্রশ্ন : আপনার উচ্চশিক্ষা কখন কীভাবে শুরু হয়?
শাইখুল হাদীস : দেখুন, উচ্চশিক্ষা বলতে বর্তমানে যা বোঝায় এ রকম নিয়মতান্ত্রিক উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা তখন ছিল না বললেই চলে। আমার বাŸার বড় আশা ছিল আমাকে হাফেজ বানাবেন। কিন্তু তখন কোনো হিফজখানা ছিল না বললেই চলে। ফলে আমার আর হাফেজ হওয়া হলো না। তবে আমার বাŸার নিয়ত ও দীনি ইচ্ছা ছিল খুবই প্রশংসনীয়। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়ই আমার জন্য ডাভেল, দেওবন্দ ইত্যাদি এলাকায় গিয়ে ইলমেদীন শিক্ষার রাস্তা প্রশস্ত হয়। তিনি পণ করেছিলেন যে, মানুষেরা নিজের ছেলেদের বিলাতে লেখাপড়ার পেছনে যত টাকা খরচ করে আমার পেছনেও তিনি সেই পরিমাণ খরচ করবেন এবং তা করেছিলেন। 
প্রশ্ন : বাংলাদেশের কোন মাদরাসায় আপনার কিতাব বিভাগের পড়া আরম্ভ হয়?
শাইখুল হাদীস : ৭ বছর বয়সে ব্রাহ্মবাড়িয়া জামিয়া ইউনুসিয়ায় আমার পড়া আরম্ভ হয়। সেখানে হযরত সদর সাহেব হুজুর খুসুসীভাবে আমাকে প্রাথমিক কিতাব-পত্র পড়ান। 
প্রশ্ন : বড়কাটরা মাদরাসায় কবে  এলেন এবং কত দিন পড়লেন। 
শাইখুল হাদীস : মীযান জামাতে এসে ভর্তি হই এবং মাওলানা জফর আহমদ উসমানী রহ.-এর বিশেষ তত্ত্বাবধানে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করি। 
প্রশ্ন : মাওলানা যফর আহমাদ উসমানীর নিকট কী কী পড়লেন? 
শাইখুল হাদীস : হযরত ওসমানী রহ. এর নিকট আমি বায়যাবী শরিফ, তিরমিজী ১ম খণ্ড ও বুখারি শরিফ পড়েছি। 
প্রশ্ন : আপনার প্রিয় উস্তাদদের তালিকায় কারা আছেন? 
শাইখুল হাদীস : আসলে সদর সাহেব  হুজুর আমার নাম পবির্তন করে আজিজুল হক রাখার সুফল আমি সারা জীবন পেয়েছি। ‘আজিজ’ মানে প্রিয়। আমি জীবনে এই দীর্ঘ সময়ে যেখানে যার কাছেই গিয়েছি, তারই একান্ত প্রিয় পাত্র হয়েছি। এ অর্থে আমার সকল উস্তাদই আমার প্রিয় উস্তাদ। বিশেষতঃ মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. মাওলানা সৈয়দ রফিক কাশ্মীরি রহ. মাওলানা যফর আহমাদ উসমানী রহ. মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ. মাওলানা আসআদুলা­হ রহ. ও মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. প্রমুখ। 
প্রশ্ন : ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কোথায় ও কখন ঢাকা আসলেন?
শাইখুল হাদীস : ব্রাহ্মবাড়িয়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে পীরজি হুজুরের একটি বিরোধকে কেন্দ্র করে পীরজি হুজুরের অপর দুই সাথী সদর সাহেব হুজুর ও হাফেজ্জী হুজুর  এই তিনজন খুলনার গজালিয়ায় চলে গেলেন। সেখানে কিছু দিন অবস্থানের পর ঢাকা এসে বড়কাটরা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সদর সাহেব হুজুর ঢাকা আসার পর আমি বড়কাটারা চলে আসি এবং মীযান জামাতে ভর্তি হই। 
প্রশ্ন : যফর আহমদ উসমানী রহ. ঢাকার  কোন মাদরাসায় কত বছর ছিলেন? 
শাইখুল হাদীস : হুজুর ঢাকায় থাকাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় হাদিসের দরস দেন। বড়কাটরা মাদরাসায় এবং পরে লালবাগ মাদরাসায়ও মুহাদ্দিস হিসেবে শিক্ষকতা করেন। 
প্রশ্ন : আপনি ডাভেলে কত সনে যান?
শাইখুল হাদীস : হযরত থানভী রহ. যে বছর ইন্তেকাল করেন অর্থাৎ ১৯৪৩ সালে। 
প্রশ্ন : দেওবন্দ কখন গেলেন?
শাইখুল হাদীস : ডাভেল থাকাকালীন শাব্বীর আহমদ ওসমানী রহ.-এর যে তাকরীর লিখেছিলাম সেটা কপি করে রাখার জন্য হুজুর আমাকে সাথে করে দেওবন্দস্থ হুজুরের বাড়িতে নিয়ে আসেন। ঐ বছরই আমি দাওরায়ে তাফসির জামাতে দেওবন্দ মাদরাসায় পড়ি। 
প্রশ্ন : ডাভেলে কয় বছর ছিলেন?
শাইখুল হাদীস : ডাভেলে ১ বছর ছিলাম। 
প্রশ্ন : ডাভেলের উল্লেখযোগ্য উস্তাদদের নাম বলবেন কি?
শাইখুল হাদীস : শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ. ও বদরে আলম মীরাঠী রহ. 
প্রশ্ন : ছাত্র কতজন ছিল?
শাইখুল হাদীস : দাওরায়ে হাদিসে প্রায় ৫০ জনের মতো ছিল। 
প্রশ্ন : শাব্বীর আহমদ উসমানীর সঙ্গে কি পূর্বেই পরিচয় ছিল? 
শাইখুল হাদীস : না, পরিচয়ও ছিল না এবং পূর্বে কখনো দেখিও নাই। 
প্রশ্ন : তাহলে তার প্রতি এতো আগ্রহ কী করে সৃষ্টি হলো?
শাইখুল হাদীস : হযরতের মুসলিম শরিফের শরাহ ফতহুল মুলহিম আর তাফসীরে উসমানী পড়ে আমি এক প্রকার হযরতের আশেক হয়ে গিয়েছিলাম। 
প্রশ্ন : উসমানীর রহ. নিকট কি শুধু বুখারিই পড়েছেন? 
শাইখুল হাদীস : হ্যাঁ, শুধু বুখারিই পড়লাম। 
প্রশ্ন : দেওবন্দ মাদরাসায় কী পড়লেন?
শাইখুল হাদীস : ইদ্রীস কান্ধলভী রহ. -এর নিকট তাফসিরুল কুরআনের ওপর তাখাসসুস পড়লাম। 
প্রশ্ন : দেওবন্দ থেকে  কী বড়কাটরা চলে আসলেন? 
শাইখুল হাদীস : হ্যাঁ, বছর শেষ না করেই দেওবন্দ থেকে চলে আসলাম। দেশে এসে সর্বপ্রথম বড়কাটরা মাদরসায় সাক্ষাৎ করতে গেলাম আমার মুর্শিদ সদর সাহেব হুজুরের সঙ্গে। হুজুর আমাকে বললেন বাড়িতে যাওয়ার আগেই তা‘লীমি খেদমত শুরু করো। এরপর হুজুর একটা সবক পড়াতে বললেন কয়েক দিন সবক পড়িয়ে বাড়ি গেলাম। 
প্রশ্ন : প্রথম বছর কী কী কিতাব পড়ালেন? 
শাইখুল হাদীস : কাসিদা বুরদা, ইলমুস সীগাহ অতঃপর অন্যান্য কিতাবের সাথে মিশকাত শরিফও পড়ালাম। 
প্রশ্ন : বিয়ে-শাদি কবে হলো? 
শাইখুল হাদীস : যে বছর পূর্ণাঙ্গ শিক্ষকতা শুরু করলাম সে বছরই। হযরত যফর আহমদ উসমানী রহ. এক প্রোগ্রামে কুমিল্লা গেলেন। সেখানে মেহমান হলেন আমার শ্বশুর বাড়িতে। আমার শ্বশুর ছিলেন মাওলানা আমিনুল ইসলামের পিতা। তিনি খুব নেক মানুষ। বিবাহযোগ্য মেয়ের জন্য আলেম পাত্রের খোঁজ করছিলেন। হযরত যফর আহমদ উসমানীর রহ-এর নিকট এ কথা ব্যক্ত করলে হযরত বললেন, আমার তো এক ছেলে আছে। তার বিবাহ প্রয়োজন। একথা শুনে তারা খুবই আগ্রহী হলেন। বিশেষ করে মাওলানা আমীনুল ইসলাম সাহেবের বড় ভাই তো আমার একেবারে পাগল হয়ে গেলেন। এভাবেই সেখানে বিবাহ সম্পন্ন হলো।  
প্রশ্ন : আয়-রোজগার বলতে কি শুধু মাদরাসাই ছিল?
শাইখুল হাদীস : হ্যাঁ, আয় রোজগার বলতে তখন মাদরাসা থেকেই ছিল। সর্বপ্রথম আমি চল্লিশ টাকা বেতনে খেদমত আরম্ভ করি।
প্রশ্ন : প্রথম জীবনে জীবিকার কোনো সমস্যা ছিল কি?
শাইখুল হাদীস : না, তেমন  কোনো সমস্যা ছিল না। বাসাভাড়া লাগত না। বড়কাটারা মাদরাসার কাছে আমার লেখাপড়ার সুবিধার জন্য আমার ছাত্রকালেই বাবা মাদরাসার কাছে সোয়ারী ঘাটে একটি বাড়ি কিনেছিলেন। অন্যান্য অনেক খরচই আব্বা বহন করতেন। 
প্রশ্ন : দ্বিতীয় বিবাহের প্রেক্ষাপট বলবেন কি?
শাইখুল হাদীস : আমার প্রথম স্ত্রী দাম্পত্য জীবনের ১৯ বছরে ইন্তেকাল করলেন। ছয় সন্তান রেখে মা মারা যাওয়ার পর কোলের ছেলেটাও মারা গেল। তখন দ্বিতীয় বিবাহের প্রয়োজন দেখা দিল। মাওলানা আব্দুল মজিদ ঢাকুবী হুজুর লালবাগের পূর্বে উদয়পুর মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছিলেন। তিনিই সেখানকার মেয়ের সন্ধান দিয়েছিলেন। আর হাফেজ জামীল আহমদ সাহেব যিনি আমার বড় ভায়রা তিনিও বিশেষ উৎসাহী ছিলেন। আমার বড় সম্বন্ধি (আমার ছাত্র) তিনিও আগ্রহী ছিলেন। আমার শ্বশুর মাওলানা আজিজুর রহমান রহ. খুব আল্লাহওয়ালা লোক ছিলেন। 
প্রশ্ন : দেওবন্দ থাকাবস্থায় হযরত মাদানীর দরসে বসেছেন কি?
শাইখুল হাদীস : নিয়মতান্ত্রিক কোনো কিতাব তো তার কাছে পড়তে পারিনি। তবে কখনো কখনো দরসে বসেছি । 
প্রশ্ন : আপনি হাদিস পড়ানো কখন থেকে শুরু করেন?
শাইখুল হাদীস : দেওবন্দ থেকে আসার পরই বড়কাটরায় আমার পড়ানোর যামানা শুরু হয় এবং ১ম  মেশকাত পড়াই। 
প্রশ্ন : বুখারি শরিফ কখন থেকে পড়ানো আরম্ভ করেন?
শাইখুল হাদীস : ২৯ শাওয়াল ১৩৭২ হিজরি লালবাগ মাদরাসায় সর্বপ্রথম বুখারি শরিফ পড়ানোর সৌভাগ্য অর্জন করি। 
প্রশ্ন : মুহাদ্দিস সাহেব (মাও: হেদায়াতুল্লাহ রহ.) কী পড়াতেন?
শাইখুল হাদীস : মেশাকত শরিফ ১ম খণ্ড ও তিরমিজি ১ম খণ্ড পড়াতেন। মাঝখানে এক বছর সদর সাহেব হুজুর মেশকাত শরিফ ১ম খণ্ড পরিবর্তন করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। মুহাদ্দেস সাহেবের কিতাব অন্য কেউ নিতে আগ্রহী না হওয়ায় আমি বললাম, হুজুর যদি আমার বুখারি ১ম খণ্ডটা নেন তাহলে আমি মেশকাত ১ম খণ্ড পড়াতে পারি। এভাবে আমি মেশকাত ১ম খণ্ড পড়াই আর মুহাদ্দেস সাহেব হুজুর বুখারি শরিফ ১ম খণ্ড পড়ালেন। 
প্রশ্ন : বড়কাটরা মাদরাসায় কত বছর পড়ালেন? 
শাইখুল হাদীস : প্রায় ১০ বছর। 
প্রশ্ন : এ পর্যন্ত মোট কতগুলি মাদরাসায় পড়িয়েছেন?
শাইখুল হাদীস : অনেক মাদরাসায় তো পড়িয়েছি এবং বর্তমানে পড়াচ্ছি। মোট কতগুলো হিসেব করলে হয়তো পাওয়া যাবে। 
প্রশ্ন : উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মাদরাসার নাম জানতে পারি কি?
শাইখুল হাদীস : ঢাকার মধ্যে বড়কাটারা, লালবাগ, জামিয়া ইসলামিয়া তাঁতীবাজার, কামরাঙ্গীচর, জামিয়া মোহাম্মাদিয়া, জামিয়া রাহমানিয়া, দারুর রাশাদ, মালিবাগ মাদরাসা, লালামাটিয়া মাদরাসা, জামেউল উলূম মাদরাসা উল্লেখযোগ্য। ঢাকার বাইরে মাহমুদিয়া মাদরাসা বরিশাল, জামিয়া নূরিয়া টঙ্গী, বেতুয়া মাদরাসা সিরাজগঞ্জ, দত্তপাড়া মাদরাসা নরসিংদী ইত্যাদি। 
প্রশ্ন : মাদরাসা ছাড়াও আর কোথাও অধ্যাপনার কাজ করেছেন কি?
শাইখুল হাদীস : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে  হাদিস পড়িয়েছি। 
প্রশ্ন : পড়ানো বাদ দিলেন কেন?
শাইখুল হাদীস : দেখুন, এ প্রশ্নের জওয়াব এক কথায় দেওয়া মুশকিল। প্রথম দিকে যখন পড়ানো আরম্ভ করলাম, তখন আমি নিয়ম করে দিলাম যে, ছেলেরা আমার সামনে বসবে আর মেয়েরা এক কোণে যথাসম্ভব দৃষ্টির আড়ালে শালীনতার সঙ্গে বসবে এবং কোনো প্রশ্ন করতে হলে ছেলেরাই করবে।  প্রথম দিকের ছাত্র-ছাত্রীরা এ নিয়ম পুরোপুরি মেনে চলতো। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে শিথিলতা লক্ষ করে পড়ানো বাদ দিলাম। 
প্রশ্ন : দরস ও তাদরিসের পর কোন কাজ বেশি ভালো লাগে?
শাইখুল হাদীস : বিভিন্ন কিতাবপত্র মুতালা’আ এবং প্রয়োজনীয় সকল কাজই ভালো লাগে, বিশেষতঃ বুখারি শরিফের লেখার কাজে খুবই তৃপ্তি পাই। 
প্রশ্ন : রাজনৈতিক জীবনের সূচনা কখন থেকে?
শাইখুল হাদীস : মূলত : বৃটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। তখন বৃটিশ-বিরোধী সভা-সমিতির পাশাপাশি মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করতাম। সদর সাহেবের রহ.-এর সঙ্গে বিভিন্ন মঞ্চে বক্তৃতা করতাম। 
প্রশ্ন : পাকিস্তান গঠনের পক্ষে কী কী যুক্তি জনসম্মুখে পেশ করতেন?
শাইখুল হাদীস : সঠিক দীন নিয়ে চলতে হলে মুসলামানদের আলাদা আবাসভূমি দরকার। কুরআন-হাদিস  মোতাবেক দেশ পরিচালনা দরকার। 
প্রশ্ন : প্রথমে যখন রাজনীতিতে গেলেন তখন কী মনে করতেন যে, ভবিষ্যতে বড় রাজনীতিবিদ হবেন?
শাইখুল হাদীস : না, তা কখনো ভাবিনি এবং ভবিষ্যতে কোনো বড় নেতা হবÑ এমন আশাও ছিল না; বরং দীন ও মিল্লাতের প্রয়োজনে শক্তি-সামর্থ অনুযায়ী ঈমানি দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যেই বিভিন্নভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছি।। 
প্রশ্ন : তখনকার রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র কেমন ছিল?
শাইখুল হাদীস : তখনকার দিনে যে যেটাকে ভালো বলে মনে করতেন, সেটাকে যতদূর সম্ভব ততোটুকুই বাস্তবতার নিরিখে তুলে ধরার চেষ্টা করতেন। বর্তমানের মতো আদর্শগত  দুর্বলতা তখন এতোটা বিদ্যমান ছিল না। 
প্রশ্ন : জিন্নাহ সাহেবের সঙ্গে কি সরাসরি আপনার কথা হয়েছে?
শাইখুল হাদীস : না। 
প্রশ্ন : জিন্নাহ সাহেব কেমন ছিলেন?
শাইখুল হাদীস : জিন্নাহ সাহেব ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি খুবই দরদি ছিলেন। 
প্রশ্ন : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ওলামাদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
শাইখুল হাদীস : আসলে এ ব্যাপারে সার্বজনীন কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না। বরং মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। অনেকেই রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাভাষার স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা প্রকটভাবে অনুভব করতেন। কেউ কেউ ততোটা মনে করতেন না। 
প্রশ্ন : যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হলো এবং কেন হলো? 
শাইখুল হাদীস : মুসলিম লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে যুক্তফ্রন্টের জন্ম হয়। 
প্রশ্ন : যুক্তফ্রন্ট কি তাহলে ইসলামের পক্ষে ছিল?
শাইখুল হাদীস : হ্যাঁ, পক্ষে ছিল মানেÑ বর্তমান যেমন চারদল ইসলামের পক্ষে আছে এমন ছিল। মৌলিক কোনো বিষয়ে মুসলিম লীগের সাথে তাদের পার্থক্য ছিল না। 
প্রশ্ন : মরহুম শেখ মুজিবের সঙ্গে কি আপনার বৈঠক হয়েছিল?
শাইখুল হাদীস : হ্যাঁ, হয়েছিল। 
প্রশ্ন :  কী সম্পর্কে আলোচনা হয়েছিল?
শাইখুল হাদীস : আলোচনা তো তখনকার প্রেক্ষাপট নিয়েই হয়েছিল। তিনি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত আমার সঙ্গে আলোচনা করলেন এবং আমার চিন্তাধারার প্রশংসাও করেছিলেন।
প্রশ্ন : এই সাক্ষাৎ কত সালে হয়েছিল?
শাইখুল হাদীস : সাল মনে নেই। তবে পাকিস্তানের শেষ দিকে বলে মনে হয়। 
প্রশ্ন : তাহলে ৬ দফা কি এর আগেই ঘোষিত হয়?
শাইখুল হাদীস : হ্যাঁ, ৬ দফা এর পূর্বেই ঘোষিত হয়েছিল। 
প্রশ্ন : শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে পরিচয় ছিল কি? 
শাইখুল হাদীস : কোনো ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল না। 
প্রশ্ন : জীবনে তিনি কেমন ছিলেন?
শাইখুল হাদীস : ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য তিনি অনেক কিছু করেছেন। 
প্রশ্ন : মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে কখনো কথা হয়েছে কি?
শাইখুল হাদীস : সরাসরি কোনো কথা হয়নি। 
প্রশ্ন : মরহুম জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
তেমন ঘনিষ্ঠভাবে মেশার তো সুযোগ হয়নি। এমনিতেই বিভিন্নভাবে দূরে থেকে যতটুকু জেনেছি বা দেখেছি ভালোই পেয়েছি। 
প্রশ্ন : শহীদ জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগতভাবে কেমন ছিলেন?
শাইখুল হাদীস : ব্যাক্তিগত জীবনে খুবই বিনয়ী ও নিরহংকারী ছিলেন । তখন পল্টন ময়দানে আমি ঈদের জামাতে ইমামতি করতাম। 
প্রশ্ন : জেনারেল এরশাদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ছিল?
শাইখুল হাদীস : জেনারেল এরশাদের আমলেই প্রথম জেলে যাই। জেলে নিলেও আলেম ওলামার প্রতি তার একটা শ্রদ্ধাবোধ ছিল। তিনি যখন প্রেসিডেন্ট হন, তখন হাফেজ্জী হুজুরের কাছে গিয়েছিলেন দোয়া নেওয়ার জন্য। তিনি ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ধর্ম ঘোষণা করেছিলেন। 
প্রশ্ন : ১৯৯১-৯৬ পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তখন তো তারা আপনাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছিল। আবার গত আওয়ামী সরকারের আমলেও জেলে গেলেন, এ ব্যাপারে কিছু বলুন। 
শাইখুল হাদীস : প্রত্যেক সরকারই নিজেদের প্রয়োজনে জেলে নিয়েছে। কেউ এই  মন্দের মধ্যে  কিছুটা ভালোর পরিচয় দিয়েছে অর্থাৎ শ্রদ্ধাবোধের পরিচয় দিয়েছে। আর কেউ দেয়নি বা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। তবে সে যাই হোক যার আমলেই হোক দীনের কথা বলার কারণে জেলে গেছি। সেজন্য নিজেকে ধন্যই মনে করি। সত্য কথা বলার অপরাধে জেলে যাওয়া কোনো নতুন কথা নয়। এমন হবে এটাই বাস্তবতা। 
প্রশ্ন : ৯৪ তে জেলে গেলেন বাবরী মসজিদ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। বাবরী মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে এবং পুনর্নির্মাণের দাবিতে সর্ববৃহৎ আন্দোলন হয় বাংলাদেশে এবং আপনার নেতৃত্বে লংমার্চের মাধ্যমে। লংমার্চ আন্দোলনের মূল ইস্যু ছিল বাবরী মসজিদ পুনর্নির্মাণ। কিন্তু বাবরী মসজিদ তো অদ্যাবধি পূণঃনির্মিত হয়নি, এমতাবস্থায় লংমার্চ আন্দোলনকে কি সফল বলা যায়?
শাইখুল হাদীস : দেখুন হাদিসে আছে, অন্যায় কাজে বাধা দেওয়ার শক্তি থাকলে  হাতে বাধা দিয়ে সেই কাজ বন্ধ করে দাও। আর সে শক্তি না থাকলে মুখে  তার প্রতিবাদ কর এবং সে ব্যাপারে জনমত গঠন কর আর সেই শক্তিও না থাকলে অন্তরে অন্তরে সেই কাজকে ঘৃণা করো। বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার পর পরই আমরা ঘোষণা দিয়েছি, যেদিন যখনই আমাদের হাতে শক্তি আসবে সাথে সাথেই আমরা বাবরী মসজিদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করব। আর তখন আমাদের যতটুকু সামর্থ্য ছিল তার সবটুকুই আমরা খরচ করে ঈমানী দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। সবচেয়ে বড় কথা হল, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং আলামতের মাধ্যমে দিবালোকের মতো  স্পষ্ট ছিল যে, বাবরী মসজিদ ছাড়াও তৎকালীন কট্ররপন্থী হিন্দু মৌলবাদী বি,জে,পি সরকার অসংখ্যা মসজিদকে টার্গেট করেছিল।  বাবরী মসজিদ আন্দোলন মজবুত হওয়ায় বিশ্ব জনমতের ভয়ে তারা আর সে পথে অগ্রসর হওয়ার সাহস পায়নি। এ সব দিকে লক্ষ করলে অবশ্যই বলতে হবে বাবরী মসজিদ আন্দোলন তথা লংমার্চ সফল হয়েছে। 
প্রশ্ন : প্রচলিত নির্বাচনের অধীনে আপনাদের রাজনৈতিক দর্শন প্রতিফলিত হবে বলে মনে করেন কি?
শাইখুল হাদীস : প্রচলিত নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামি রাজনীতির নীতি-আদর্শের প্রতিফল ঘটানো খুবই কঠিন। মানবতার সত্যিকার মুক্তি ও মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটা নিশ্চিত করার একমাত্র গ্যারান্টি হচ্ছে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা। 
প্রশ্ন : এ দেশে ইসলামি আন্দোলনের ভবিষ্যত সম্পর্কে কিছু বলেন। 
শাইখুল হাদীস : এ দেশে ইসলামি আন্দোলনের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। কারণ মানুষ বিভিন্ন তন্ত্র-মন্ত্রে অতিষ্ঠ হয়ে এখন একমাত্র ইসলাম ও ইসলামি রাষ্ট্র্যবস্থাকেই মুক্তির একমাত্র সনদ মনে করছে। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যা ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ডিঙিয়ে ইসলামি আন্দোলন অগ্রসর হতে পারছে না।
প্রশ্ন : ইসলামি দলগুলোর ঐক্যের ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
শাইখুল হাদীস : ঐক্যের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। শুধুমাত্র সাময়িক ফায়দা লোটার জন্য ঐক্যের নামে নিছক নাটকের অবতারণা দ্বারা ব্যক্তি বিশেষের মতলব হাসিল হয় ঠিক। কিন্তু স্থায়ী বিবেচনায় ইসলামি আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
প্রশ্ন : ভবিষ্যতে ঐক্যের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তখন আপনার ভূমিক কী হবে?
শাইখুল হাদীস : দেখুন, আমি তো সব সময়ই ঐক্যের পক্ষেই ছিলাম এবং আছি। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ঐক্যের নামে বিভিন্ন সময় মতলববাজি হাসিল না হলে বিভিন্নভাবে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এরূপ ঐক্য হওয়ার থেকে না হওয়াটা ভালো। 
প্রশ্ন : ইসলামি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাকে কতটুকু জরুরি মনে করেন?
শাইখুল হাদীস : আল্লাহর জমিনে আল্লাহর হুকুমত প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রচেষ্টা চালানো প্রতিটি মুসলামানের জরুরি। প্রতিটি এলাকা থেকে কিছুৃ লোক এ দায়িত্ব যদি পালন করে তাহলে ফরজে কেফায়ার দায়িত্ব পালন হবে। আর বিেেশষ পরিস্থিতি যেমন ইসলামে কোনো মৌলিক বিষয়কে যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করার পায়তারা করা হয় তখন সকল মুসলমানের জন্য নিজ নিজ সামর্থ্য মুতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা ফরজে আইনের পর্যায় চলে আসে। 
প্রশ্ন : যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ৪ দলীয় জোটে অংশগ্রহণ করেছিলেন, সে উদ্দেশ্য অর্জিত হয়েছে বলে কি আপনি মনে করেন?
শাইখুল হাদীস : খুঁটিনাটি সব উদ্দেশ্য অর্জিত না হলেও আমি মনে করি মৌলিক উদ্দেশ্য আর্জিত হয়েছে। যার ফলে আমরা স্বাধীনভাবে শান্তিতে দীনের কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। 
প্রশ্ন : হাফেজ্জী হুজুর রহ. রাজনীতিতে নামার পূর্বে আপনাদের সঙ্গে কি পরামর্শ করেছিলেন?
শাইখুল হাদীস : হ্যাঁ, পরামর্শ করেছিলেন। 
প্রশ্ন : খেলাফত আন্দোলনে আপনার পদমর্যদা কী ছিল?
শাইখুল হাদীস : নায়েবে আমীর ছিলাম। 
প্রশ্ন : বর্তমান ইসলামী ঐক্যজোটের শরিক দলগুলোর অধিকাংশই তো ব্যক্তি বা নির্ধারিত এলাকা কেন্দ্রিক। শুধু বাংলাদেশে খেলাফত মজলিসের সংগঠন ও কর্ম তৎপরতা প্রায় সব জেলাতেই আছে। এমতাবস্থায় খেলাফত মজলিসকে বাদ দিয়ে ঐক্যজোটের অস্তিত্বকে অনেকেই হাস্যকর মনে করেন। আপনার এ ব্যাপারে অভিমত কী?
শাইখুল হাদীস : যেটা আসলেই হাস্যকর ব্যাপার, সেটা তো হাস্যকর মনে হওয়াই স্বাভাবিক। শুধু হাস্যকরই নয়, বাস্তবতাও তাই। আসলে রাজনীতি তো এমন কোনো বিষয় নয় যে, কাগজ-কলমে একটা সুন্দর হিসাব দিয়ে দিলাম আর সব কিছুই হয়ে গেল। নিছক কাগজের হিসাবে অন্য কিছু হলেও অন্তত রাজনীতি হয় না। এই সত্যটা অনেকেই বুঝতে বা মানতে চায় না। 
প্রশ্ন : তত্ত্ববধায়ক সরকার সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
শাইখুল হাদীস : এই ব্যবস্থার নির্বাচন মহল বিশেষের প্রভাবমুক্ত থাকে এবং জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে। 
প্রশ্ন : তার মানে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা মোটামুটি একটা ভালো ব্যবস্থা?
শাইখুল হাদীস : হ্যাঁ, শুরাভিত্তিক খেলাফত শাসনব্যবস্থা যতক্ষণ পর্যন্ত চালু করা না যাচ্ছে, ততোদিন পর্যন্ত এ ছাড়া আর উপায় কী। 
প্রশ্ন : দীর্ঘ দিন ধরে তো রাজনীতির ময়দানে আছেন, এই দীর্ঘ সময়ের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তের কিছু অভিজ্ঞতা বলুন।
শাইখুল হাদীস : রাজনীতির ময়দানটাই একটা কঠিন ময়দান। তারপরও আপেক্ষিক একটা ব্যাপার থাকেই। সে হিসাবে বিগত সরকারের পুরো সময়টাই বেশি কঠিন ছিল। আর দুই হাজার এক সালের শুরুতে সেই ভয়াবহ অবস্থাটা ষোলকলায় পূর্ণ হয়েছিল। 
প্রশ্ন : সর্বপ্রথম কত সনে হজ্জে যান?
শাইখুল হাদীস : ১৯৫০ সনে। 
প্রশ্ন : প্রথম দিকের হজ্জের কিছু স্মৃতির কথা বলবেন কি?
শাইখুল হাদীস : আসলে তখনকার অনুভূতিটা এখন ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। প্রথম দিকে হজ্জে গিয়ে নবীজি সা.-এর যুগের এবং সাহাবিদের রা.-এর যুগের অনেক স্মৃতিই অক্ষত পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে সরকারগুলো বিভিন্ন কারণে সেগুলি নিশ্চিহ্ন  করে দিয়েছে। কোনো কোনোটা নিশ্চিহ্ন করার আসলেই প্রয়োজন ছিল। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে  এতো কঠোরতার দরকার ছিল না। 
প্রশ্ন : তখন জেদ্দা থেকে মক্কা যাওয়ার কী ব্যবস্থা ছিল?
শাইখুল হাদীস : আমি যখন গেলাম তখন অবশ্য বাসের প্রচলন শুরু হয়ে গিয়েছিল। এর দু’এক বছর পূর্বেও উটে করেই যেতে হতো।
প্রশ্ন : হুজুর সা. এর ঘর-বাড়ি সংক্রান্ত কোনো স্মৃতি পেয়েছিলেন কি?
শাইখুল হাদীস : তেমন কোনো স্মৃতি পাইনি। 
প্রশ্ন : মদিনায় উম্মাহাতুল মুমিনীনের কোনো হুজরা বিদ্যমান পেয়েছিলেন কি না?
শাইখুল হাদীস : না। অনেক আগেই সেগুলি মসজিদে নববীর সাথে শামিল হয়ে গিয়েছিল। 
প্রশ্ন : বিভিন্ন সময় বহুবার দেখেছি যে, মক্কা-মদিনা শরিফের আলোচনা আসলে আপনি আবগাপ্লুত হয়ে যান, চক্ষু অশ্র“সিক্ত হয়ে ওঠে। প্রথম যখন মক্কা-মদিনা গেলেন, তখনকার কোনো অনুভূতির কথা বলবেন কি?
শাইখুল হাদীস : আবেগ-অনুভূতি তো ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। এটা শুধু অনুভব করা যায়। সত্যি কথা বলতে কি, মক্কা-মদিনার জন্য মাঝে মাঝে এমনভাবে মন উতলা হয়ে যায়, তখন মনে চায় সব কিছু ফেলে দিয়ে চলে যাই। আবার দরস ও তাদরীস ছাড়া কী করে বাঁচব এসব চিন্তা করে যেতে পারি না। শেষ ইচ্ছা যেন মদিনা শরিফে মরতে পারি। এ ব্যাপারে একটা দোয়া বর্ণিত আছে, সেই দুআটা খুব বেশি বেশি পড়ি। 
প্রশ্ন : ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় শান্তি মিশন নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
শাইখুল হাদীস : হ্যাঁ গিয়েছিলাম। হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর নেতৃত্বে এবং সে মিশন খুবই সফল হয়েছিল। ইরানের প্রেসিডেন্ট খোমেনি ও ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনসহ উচ্চ পর্যায়ের অনেকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। সকলেই আমাদের যথেষ্ট সমাদর ও মূল্যায়ন করেছিলেন। 
প্রশ্ন : নিয়মতান্ত্রিকভাবে কারও নিকট বাইয়াত হয়েছেন কি?
শাইখুল হাদীস : আমার প্রধান মুর্শিদ তো ছিলেন যিনি আমাকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। অর্থাৎ শামসুল হক ফরিদপুরী রহ., এরপর হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর বায়আত হয়েছিলাম। মীর সরাইতে হযরত গাঙ্গুহী রহ.-এর এক খলীফা ছিলেন হযরত মুয়াজ্জম হোসাইন রহ.। তার হাতে বায়আত হয়েছিলাম এবং তিনি আমাকে  খেলাফতও দান করেছিলেন। 
প্রশ্ন : বিশেষ কোনো তাসবীহ আছে কি?
শাইখুল হাদীস : তাসবীহে ফাতেমী এবং বুখারি শরিফের শেষ হাদিস ‘সুবহানাল্লাহী ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আজীম, এই দোয়া বেশি বেশি পড়ার চেষ্টা করি। 
প্রশ্ন : নামাজের মধ্যে দেখি, প্রতি রাকাতে প্রথমে সূরা ইখলাস পড়েন এরপর নিয়মতান্ত্রিক ভাবে অন্য সূরা মিলান, কারণ কী?
শাইখুল হাদীস : দেখুন, এটা আমার একটা বিশেষ আমল। এ ব্যাপারে একটি রেওয়াতেও আছে। এক সাহাবী এভাবে আমল  করতেন। কিছু সাহাবী এ ব্যাপারে রাসূল সা.-এর কাছে অভিযোগ করলে হুজুর সা. তাকে ডেকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন যে, হুজুর আমি এই সূরাকে ভালোবাসি এ জন্য এ সূরা ছাড়তে পারি না। রাসূল সা. বললেন, এই সূরার মহব্বত তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। 
প্রশ্ন : দরসি কিতাবের বাইরে কোনো কিতাব সবচেয়ে ভালো লেগেছে?
শাইখুল হাদীস : পড়েছি তো অনেক কিতাবই। এত কি মনে আছে? তবে তার মধ্যে ছুগরা, কুবরা, মোল্লাহ হাসান, হামদুল্লাহ, সুল্লাম ইছাগুজি, ইছাগুজির শরাহ আছে একরুজি এগুলির নাম খুব মনে পড়ে। 
প্রশ্ন : কোনো প্রিয় কবি আছে কি?
শাইখুল হাদীস : এককভাবে কোনো প্রিয় কবি নেই। তবে সাহাবী হযরত হাসসান বিন সাবিত রা.-এর কবিতা খুব ভাল লাগে। এতে অল্প শব্দে সুন্দরভাবে অধিক ভাব প্রকাশ অন্য কারও ক্ষেত্রে খুব কমই দেখা যায়। ফার্সী কবি মাওলানা রুমী এবং উর্দু কবি আল্লামা ইকবালও ইসলামকে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। 
প্রশ্ন : আপনার শুভাকাক্সক্ষী ভক্তবৃন্দ ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কিছু বলুন। 
শাইখুল হাদীস : বদদীনের সয়লাব চতুর্দিক থেকে বন্যার পানির ন্যায় ধেয়ে আাসছে। এমতাবস্থায় ঈমান আমল নিয়ে বাঁচতে হলে কুরআন-হাদিসকে শক্তভাবে ধারণ করে পথ চলতে হবে। আমি নিজেও সকলের জন্য দোয়া করি ও নিজের জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ যেন সুস্থ শরীরে বাকি দিনগুলো দীনের খেদমত করে যাওয়ার তওফিক দান করুন।    আমাদের আপনার মূল্যবান সময় থেকে অনেকখানি সময় দেয়ার জন্য অসংখ্য শুকরিয়া। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।  

Powered by Create your own unique website with customizable templates.