• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী

অধমের মাথায় হযরত থানভী রহ.-এর পাগড়ি
সদর সাহেব হুজুর কর্মজীবনের প্রথমে বেশ কিছু সময় ব্রাহ্মবাড়িয়ায় ছিলেন। তখন আমি সেখানে ছিলাম। তিনি বড়কাটারা চলে আসলে আমিও এখানে চলে আসলাম। শেষ জীবনে হুজুর চলে গেলেন তার দেশের বাড়িতে।  সেখানে গওহর ডাঙ্গায় হুজুর  মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করলেন, খাদেমুল ইসলাম গওহর ডাঙ্গা মাদরাসা। সে মাদরাসা উদ্বোধন উপলক্ষে বিশাল দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হলো। 
মাদরাসার পাশেই ছিল বিশাল মসজিদ। সে মসজিদেই অনুষ্ঠান হবে। আশপাশের সকল অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ সেখানে সববেত হলো। ঢাকা থেকে আমরাও বেশ কয়েকজন গেলাম। আমার  একান্ত আকাক্সক্ষা ছিল, হুজুরের মাদরাসার উদ্বোধন, নিশ্চয় তিনি আজকে অত্যন্ত মূল্যবান বয়ান রাখবেন। আগত মানুষদেরও তাই ছিল ধারণা। কিন্তু আমার সে আশা পূরণ হলো না। জুমার বেশ আগে হুজুর মাদরাসার মুহতামিম সাহেবকে ডেকে বলে দিলেন, এলান করে দিন মাওলানা আজিজুল হক আজ নামাজ পড়াবেন। চারিদিকে এলান হয়ে গেলো। খবর পেয়ে আমি একেবারে হতবাক। হুজুর আমাকে ডেকে বললেন, আপনি আজকে জুমা পড়াবেন এবং খুতবা মুখস্ত দেবেন। আমি নানা ওজরখাহি করতে লাগলাম। খুব বিনয়ের সাথে বললাম যে, যেহেতু আজকেই এখানে প্রথম জুমার নামাজ হচ্ছে, তাই বরকতের জন্য হলেও আপনি জুমাটা পড়ালে ভালো হয়। কিন্তু তিনি আমার কোনো কথাই শুনলেন না; বরং আমাকে বললেন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও, জুমা পড়াতে হবে। 
জুমার কিছুক্ষণ আগে হুজুর তার একটি বহু পুরাতন বক্স থেকে একটি সুন্দর পাগড়ি বের করলেন এবং আমাকে নিজ হাতে তা পরিয়ে দিলেন। কত অমায়িক ছিল হুজুরের আচরণ। মমতাময়ী মা যেমন তার সন্তানকে সাজিয়ে গুছিয়ে দেয়, তেমনি হুজুর আমাকে তৈরি করে দিলেন গওহর ডাঙ্গার প্রথম জুমার জন্য। পরে জানতে পেরেছি এ পাগড়িটি ছিল হাকীমুল উম্মত হযরত শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর। হযরত থানভী রহ. এর মৃত্যুর পর তার ব্যবহৃত জিনিসগুলো হযরতের প্রিয় সাগরেদদের সংগ্রহে আসে। হযরত যফর আহমদ উসমানী রহ.-এর নিকট হযরত থানভী রহ. এর কলমদানি। আর সদর সাহেব হুজুরের কাছে ছিল এই মূল্যবান পাগড়িটি। প্রিয় উস্তাদ ও মুর্শিদের মহামূল্যবান পাগড়ি কতটা স্নেহ করেই না আমার মাথায় পরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বিষয়গুলো মনে হলেই আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারি না। দুচোখ দিয়ে ঝরঝর করে করে পানি ঝরে। 
এমন আরেকটি ঘটনা
আমি তখন বড় কাটারা মাদরাসায় পড়ি। মাদরাসার পশ্চিম দিকে ছিল গনি মিয়ার হাট। বেশ প্রাচীন একটা বাজার ছিল এটা। এমনিতে লোকজনের ভিড়  তো থাকতই, হাটবারের দিন সে ভিড় বেড়ে যেত বহুগুণ। সে হাটের বড় মসজিদে ঈদের নামাজ পড়াতেন সদর সাহেব হুজুর। একদিন আমাকে হঠাৎ  ডেকে বললেন, মাওলানা আজিজুল হক! আপনি কালকে হাট মসজিদের ফজরের নামাজ পড়াবেন। সে ছাত্র জামানা থেকেই হুজুর এভাবে আমাকে তা’লিম তারবিয়াতে দিয়ে আসছিলেন। আল্লাহ তায়ালা আমার মাধ্যমে বুখারি শরিফ অনুবাদের যেটুকু খেদমত নিয়েছেন, তার পিছনে সবচেয়ে  বেশি ভূমিকা সদর সাহেব হুজুরের। তার উৎসাহ উদ্দীপনা ও নেহায়েৎ সহযোগিতার ফলেই আল্লাহর মেহেরবানিতে এ বিশাল খেদমত করার তাওফিক পেয়েছি। 
হুজুর আমার জন্য মক্কা শরিফ গিয়ে দোয়া করেছেন। বুখারি শরিফ লেখে আমি মাঝে মাঝে হুজুরকে দেখাতাম। তিনি অত্যন্ত আগ্রহের সাথে দেখতেন। মাঝে মাঝে ঠিকঠাক করতেন। শব্দ এদিক সেদিক করতেন, বানান ঠিক করতেন। হুজুরের মুখে শুনেছি, আমি লেখার প্রায় দশ বছর আগে হুজুর বুখারি শরিফ বঙ্গানুবাদের কাজ শুরু করেছিলেন এবং একটি ভূমিকাও লিখে ফেলেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে নানা ব্যস্ততা ও শারীরিক দুর্বলাতার ফলে কাজটা বেশি দূর অগ্রসর হয়নি।  
আমি যখন বুখারি শরিফের কাজ আরম্ভ করি। এর ক’দিন পরেই তিনি হজে যান। সেখানে গিয়ে তিনি আমার জন্য এবং আমি যেন বুখারি শরিফের কাজটুকু পূর্ণ করতে পারি এ জন্য তিনি পবিত্র কাবা শরিফের হাতিমে, মাতাফে, মাকামে ইব্রাহীমে এবং রাসূলে আকদাস সা.-এর রওজায়ে আতহারের পাশে দাঁড়িয়েও দোয়া করেছেন। আমি এই অধমের জন্য দোয়া করেছেন, চোখের পানি ফেলেছেন। এ সবের বরকতেই আল্লাহ পাক আমাকে দীনের কিছু খেদমত করার তাওফিক দিয়েছেন। 
অনেক সময় নিজেকে বড় একা মনে হয়। আমার প্রাণপ্রিয় এসব অভিভাবক ও মুরুব্বীদের হারিয়ে নিজেকে বড় নিঃস্ব মনে হয়। সদর সাহেব রহ. ছিলেন আমার উস্তাদ, আমার মুর্শিদ এবং আমার চোখের মণি। আমি হুজুরের একজন ছাত্র মাত্র। অথচ তার মুক্তমন নিয়ে বুখারি শরিফের ভূমিকায় লিখেছেন  ‘আল্লাহ তায়ালা দরজা বুলন্দ করিয়া দিন আমার পরম দোস্ত মাওলানা আজিজুল হক সাহেবের যে, তিনি এতবড় বিরাট কাজে হাত দিতে সাহস করিয়াছেন। তিনি জওয়ানে ছালেস। তিনি বাস্তবিকই এই কাজের যোগ্যতা রাখেন। যতদূর আমার জানা আছে, বুখারি শরিফ বর্তমান যুগে বাংলাদেশে তার চেয়ে অধিক যতœ সহকারে এবং আদ্যোপান্ত বুঝিয়া আর কেহ পড়েন নাই এবং বুখারি শরিফের খেদমতও কেহ করেন নাই। তিনি হযরত শায়খুল ইসলাম মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী রহ.-এর খাছ সাগরেদ। পড়ার জামানাতেই তিনি ১৮০০ পৃষ্ঠাব্যাপী শরাহ উর্দু ভাষায় লিখিয়াছেন। স্বয়ং হযরত শাইখুল ইসলাম তাহার লেখা সঙ্গে সঙ্গে আদ্যোপ্রান্ত দেখিয়াছেন এবং আনন্দিত হইয়াছেন এবং প্রশংসা করিয়াছেন। (বর্তমানে ইহা পাকিস্তান ছাপা হয়েছে)  
‘বুখারি শরিফ পড়ার পরও প্রায় এক বছর হযরত শাইখুল ইসলামের খেদমতে থাকিয়া এছলাহে নফস ও তাজকিয়ায়ে বাতেনের কাজে লিপ্ত ছিলেন এবং বুখারি শরিফের শরাহ লিখিয়া তাহাকে দেখাইয়াছেন। কাজেই তাহার যোগ্যতায় এবং বিশ্বস্ততায় কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। অতঃপর কয়েকবার বুখারি শরিফ এবং অন্যান্য ছেহাহ ছেত্তা হাদিসের কিতাব দরস দেওয়ার পর যখন বাংলাদেশের অভাব মিটানোর জন্য বুখারি শরিফের বাংলা অনুবাদ করা তিনি শুরু করিয়াছেন, তখন আমার খুশির আর সীমা রহে নাই”। 
আমার মতো একজন নগণ্য মানুষ সম্পর্কে হুজুরের মতো এত উচুঁ তবকার একজন মহান ব্যক্তির এই উচ্ছ্বসিত প্রশংসার ফলে আমার মনোবল-কর্মস্পৃহা কতটাই যে বেড়ে গেল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 
হযরত সদর সাহেব হুজুর রহ. আমার সম্পর্কে সবচেয়ে বড় যেই অভিব্যক্তিটি প্রকাশ করেছেন, যেটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্যের বিষয় এবং পরকালের সম্ভাব্য নাজাতের উসিলা, তা হলো তিনি বলতেন, আমাকে যদি পরকালে আল্লাহ তায়ালা জিজ্ঞাসা করেন, শামছুল হক তুমি আমার সামনে পেশ করার মতো কী নিয়ে এসছে? তখন আমি মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ ও মাওলানা আজিজুল হককে পেশ করে বলব, আমি তোমার জন্য এ দু’জনকে নিয়ে এসেছি।   আল্লাহ মেহেরবান যদি হযরতের এ অমর কথা কবুল করে নেন, তবেই আমার পরকালীন আর কোনো ভয় থাকবে না। আল্লাহ পাক যেন হজরতের এ তামান্না কবুল করেন, সর্বদা আমি এ কামনাই করি। 
হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. 
বড়কাটারা মাদরাসায় পড়াকালীন যে সকল উস্তাদ আমাকে চোখে চোখে রাখতেন এবং অত্যধিক স্নেহ করতেন তাদের মাঝে অন্যতম মাহবুব উস্তাদ হলেন হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.। 
হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর কাছে আমার দীর্ঘ সময় পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। কমপক্ষে একাধারে ১০ বছর আমি হুজুরের কাছে পড়েছি। হুজুরের সাথে আমর প্রথম পরিচয় হয় ব্রাহ্মবাড়িয়া জামিয়া ইউনিসিয়ায়। আমি যখন সেখানে মক্তবে ভর্তি হলাম, তখন হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. সেখানের সিনিয়র উস্তাদ। বড়কাটারা মাদরাসায় এসে আমি মিজান মুনশায়েব জামাতে ভর্তি হই। হাফেজ্জী হুজুর রহ. তখন এখানে হাদিস পড়ান। জামিয়া ইউনুসিয়ায় থাকতে হুজুরের কাছে আমার কোনো কিতাব পড়ার সুযোগ না হলেও কীভাবে যেন তার স্নেহের চাদরে আবৃত হয়ে গিয়েছিলাম। হুজুর আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। আসলে এটা আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ মেহেরবানি। আমি যখনই যে মাদরাসায় পড়েছি, সেখানকার আসাতেজায়ে কেরাম আমাকে খুবই আদর করতেন। 
হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও তেমন ছিলেন। ব্রাহ্মবাড়ীয়াতে হুজুরের কাছে কোনো কিতাব ছিল না; কিন্তু তার পরেও হুজুর আমাকে খুবই মহব্বত করতেন। বড়কাটারা মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর হাফেজ্জী হুজুরের কাছে প্রথম পড়ি পান্দেনামা কিতাব। সে সময় আমি নাহবেমির জামাতে পড়তাম। এরপর ফরিদউদ্দিন আত্তার থেকে নিয়ে বুখারি শরিফ পর্র্যন্ত সব জামাতেই হুজুরের কাছে সবক পড়েছি। এতো লম্বা সময় হুজুরের কাছে পড়ার কারণে আমি তার আপনজন হিসাবে পরিগণিত হয়েছিলাম। আমি দরসের সময় সামনের টেবিলে বসতাম, ফলে হুজুরের খুব কাছ থেকে তার পাঠদান রীতি আমার পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হয়েছে। 
আমাদের সময় এখনকার মতো উস্তাদরা ছাত্রদের রুমে গিয়ে পড়াতেন না; বরং ছাত্ররা উস্তাদদের রুমে গিয়ে সবক পড়াত। আমরাও এ হুজুরের ক্লাশ শেষ হলে অন্য হুজুরের কামরায় গিয়ে উপস্থিত হতাম। হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর কামরা ছিল দ্বিতীয় তলায়। পুরাণ আমলে একটি রুম। আসলে বড়কাটারা পুরা মাদরাসাই ছিল একটি প্রাচীন দালানে। এর সবগুলো রুম ছিল ছোট ছোট। হাফেজ্জী হুজুরের কাছে যতদিন পড়েছি সব সময়ই দেখতাম, হয়তো তিনি কিতাব মুতালায়া করছেন, নয়তো বসে বসে  জিকির করছেন। হাফেজ্জী হুজুর খুব জোরে জোরে জিকির করতেন না, আস্তে আস্তে নিচু স্বরে তিনি জিকির করতেন। এমনতিইে হুজুর খুব নরম তবিয়তের ছিলেন। হযরতকে কখনও কারো সাথে ধমক দিতে বা কারো সাথে রাগ করতে অথবা খুব বেশি হৈচৈ করতে দেখিনি। খুবই নরম তবিয়তের এক নীরব বুযুর্গ ছিলেন হাফেজ্জী হুজুর রহ.। আমরা হুজুরের কামরায় গিয়ে দেখতাম হুজুর কিতাব মুতালায়া না করলে বসে বসে আস্তে আস্তে জিকির করছেন। কখনও হালকা আওয়াজ হতো, আবার কখনও শুধু ঠোঁট নড়ত, কোনো আওয়াজ হত না। 
হুজুর  কুরআনের হাফেজ ছিলেন। অনেক সময় বসে বসে মুখস্ত কুরআন তেলাওয়াত করতেন। মোটকথা কখনও একেবারে অনর্থক বসে থাকতেন না অথবা গল্প-গুজব করে সময় কাটাতেন না। কোনো না কোনো ইবাদতে লিপ্ত থাকতেন। হজরতের এই অভ্যাস সারা জীবনই ছিল। হুজুর যখন খেলাফত আন্দলনের জোরদার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তখন আমি হুজুরের প্রতিষ্ঠিত কামরাঙ্গীরচর নূরিয়া মাদরাসায় হাদিস পড়াই এবং হুজুরের সঙ্গে আন্দোলন করি। সে সময়ও দেখেছি, হুজুর কোনো প্রোগ্রামে যাচ্ছেন তো গাড়িতে চুপ করে বসে তেলাওয়াত করছেন। 
হযরতের সুহবতে দীর্ঘ সময় থাকার কারণে আমার মাঝেও এই অভ্যাসটা চলে এসেছে। এখন তো বয়স প্রায় নব্বই। আলহামদুলিল্লাহ এই অবস্থায়ও কোনো সময় বেকার থাকতে পারি না। সবগুলো মাদরাসায় পড়িয়ে যে সময়টুকু পাই তখন বুখারি শরিফের লেখালেখির কাজ করি। নয়তো মুখে আল্লাহ আল্লাহ জিকির করি।  আসলে সময় নেহায়েত দামি জিনিস। কোনোক্রমেই একে অবহেলা করা উচিত নয়। 
হাফেজ্জী হুজুর রহ. যে কত বড় বুজুর্গ ছিলেন, এটা তার চলাফেরার মাধ্যমেই বোঝা যেত। তিনি মাদরাসায় পড়াতেন, রাজনীতি করতেন, আন্দোলন করতেন, দীনী কাজে দূর-দূরান্তে সফর করতেন, এ সকল অবস্থায় সর্বদাই তিনি জিকিরের হালাতে থাকতেন। ওঠাবসা করতেও তিনি জিকির আজকার করতেন। মুখ সর্বদাই জারি থাকত। যাদের মুখে সর্বদা আল্লাহর জারি থাকে তাদের অন্তর কী পরিমাণ খালেছ ছিল এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। হুজুরের চেহারায় সর্বদাই একটা রোশনি দেখতে পেতাম। আসলে এটাই আল্লাহ-ওয়ালাদের সঠিক পরিচয়। 
হযরত হাফেজ্জী রহ. এর কাছে দীর্ঘ দশ বছর তালীম তরবিয়াত এবং  একটা বিশাল সময় তার সুহবতে থাকার ফলে আমার মাঝেও আলহামদুলিল্লাহ এই তবিয়ত এসে পড়েছে। জিকির আজকার করাটা এখন এক রকম অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। 
কোনো কাজ না থাকলে বসে বসে জিজির করি, সূরায়ে এখলাছ পড়ি। আল্লাহর মেহেরবানী করে আমাকে একটা গাড়িব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এতে আমার  অনেক সুবিধা হয়। যে সময়টা রাস্তার মাঝে থাকি, গাড়িতে চলাফেরা করি, সে সময়টাতেও আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতে পারি। গাড়িতে বসে নফল নামাজ পড়া যায়, কুরআন  তেলওয়াত করা যায়, বসে বসে জিকির করা যায়। অধিকাংশ সময় মাগরিবের পর বিভিন্ন মাহফিলে যেতে হয়, মসজিদের আওয়াবিনটা পড়েই গাড়িতে উঠে পড়ি। গাড়িতে বসেই নফল নামাজে সূরা ওয়াকেয়া তিলাওয়াত করি।
অনেক সময় শুক্রবার প্রোগ্রাম করতে হয়। জুমার পরে কোথায় রওনা হলে গাড়িতে বসে নফল নামাজে সূরা কাহাফ পড়ে নিই। আল্লাহ যে নেয়ামত দিয়েছেন তার পরিপূর্ণ এহতেমামা করা দরকার। এখনকার মানুষ তো বোকা, যে সময়টা গাড়িতে মুখ বন্ধ করে বসে থাকে, সে সময়টা যদি জিকির করত, তাহলে অনেক সওয়াব হতো। 
একদিন কোথায় যেন প্রোগ্রামে যাচ্ছি। আমি গাড়িতে বসা। গাড়ি খুব জোরে চলছে। এক লোক রাস্তায় চলছে আর গান গাচ্ছে। গানগুলো তারে-নারে বন্ধুরে। গান গাইতে গাইতে গাড়ির নিচে যেন পড়ে যাবে।  

Powered by Create your own unique website with customizable templates.