• প্রথম পাতা
  • আরবী সাহিত্যে শাইখুল হাদিস সেমিনার
    • হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দা: বা:
    • শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
    • মুফতি আব্দুল মালেক দা: বা:
    • মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন
    • মুফতি মাহফুজুল হক দা:বা:
    • মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী ও উবায়দুর র
    • মাওলানা আব্দুল জব্বার দা: বা:
    • ড: শামসুল হক সিদ্দিকি দা:বা:
    • মাওলানা যায়নুল আবেদীন
  • শাইখুল হাদিস কনফারেন্স
    • উলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রö
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-২
    • উলামা ওরাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আলোচনা-৩
    • হাফেজ উমর রহ:
    • শাইখূল হাদিস মামুনুল হকের ভাষণ
    • তারানা- সাঈদ আহমাদ
  • রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা স্মৃতি আলোচনা
    • স্মৃতি আলোচনায় মাওলানা মামুনুল হক
    • স্মৃতি আলোচনায় মুফতি সাঈদ আহমাদ
  • জীবনের বাঁকে বাঁকে
    • আব্বার শাসন ও সযত্ন অনুশীলন
    • আমার আম্মার কথা
    • লেখাপড়ার সুচনা
    • হযরত শামছুল হক ফরিদপুরীর সাহচার্য আমার জী
    • আমার তালিম ও তরবিয়াতে হযরত ফরিদপুরির দরদ ও &#
    • হযরত রফিক আহমাদ কাশ্মিরী রহ. এর কথা
    • হাদিসে রাসুল সা. এর প্রথম পরশ
    • দাড়িয়ে তব দুয়ার মাঝে
    • অধমের মাথায় হযরত থানভীর পাগড়ি
    • হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.
    • হুজুরের স্নেহের একটি নমুনা
  • সরাসরি সম্প্রচার
  • প্রধান কলাম সমূহ
    • বিদায় বাংলার শাইখুল হাদিস
    • উলামায়ে দেওবন্দের পতাকাবাহী
    • এক আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় ছিল না
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • শাইখুল হাদিস রহ. স্মরণে
    • আমার জীবনের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
    • হেফাজতে দ্বীনের জন্য শায়েখের আদর্শ গ্রহন 
    • শাইখুল হাদিসের স্মৃতিকথা, তাযকিরাতুল আজিö
    • শাইখুল হাদিস অনুদিত বুখারী শরীফ
    • জীবনের বেলাভূমিতে প্রিয়তম শাইখুল হাদিস
    • নবী প্রেমের কবি
  • জীবনউপলদ্ধি
    • তার জীবন আমাদের উপমা
    • ঘরে বাইরে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক র
    • আদর্শ শিক্ষক যার শ্রেষ্ঠ পরিচয়
    • শাইখুল হাদিসের জীবনী পাঠ্য করা হোক
    • মওতুল আলেমি মওতুল আলমি
    • আজ আমি এতিম
    • অনন্য শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
    • তিনি আমাদের বুখারীর ইমাম
    • আললামা
    • গন্তব্যে আমৃত্যু অবিচল
    • তিনি কোটি মানুষের প্রেরনা
    • দ্বীনের সফল মহানায়ক
  • গবেষনা
    • হকের উপর অটল এক ব্যক্তিত্ব
    • অসাধারন গুনাবলীর অপূর্ব সমাহার
    • হাদিস চর্চায় কালজয়ী অবদান
    • আমার দেখা শাইখুল হাদিস
    • তিনি কেন অসাধারণ
    • ঈমানদীপ্ত এক বীরের গল্প
    • রহমানিয়া ও শাইখুল হাদিস রহ.
    • আপনি ঘুমাতে পারেন না
    • রাজনীতিবিদ শাইখুল হাদিস
    • বাবরী মসজিদ লংমার্চ
  • অনুভূতি
    • আমার অনুভূতি
    • দীনের দরদী খাদেম
    • তার সাথে আমার জীবনাচার
    • শাইখুল হাদিসকে যেমন দেখেছি
    • হাদিসের দিকপাল
    • মহানুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত
    • ইলম ও আমলের প্রানময় বটবৃক্ষ
    • স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
    • শাইখুল কুরআন
    • আদর সোহাগে গড়েছেন এক আদর্শ পরিবার
    • যে রত্ন আজ হারিয়ে খুজিঁ
  • স্মৃতি আলোচনা
    • প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা
    • কতো স্মৃতি কতো কথা
    • সুযোগ পেলেই তার কপালে চুমু খেতাম
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
    • যার জিকিরে গুন্ঞ্জরিত মাদরাসা
    • শাইখুল হাদিস জিন্দাবাদ নয়
    • স্মৃতিগুলো জেগে থাকে মনে
    • স্মৃতি ও স্বপ্ন
    • স্মৃতিতে শাইখুল হাদিস
    • স্মৃতিগুলো এলোমেলো
    • মনের মুকুরে
    • সবই আছে শুধু নানাজি নেই
    • স্মৃতির পাতায় শাইখুল হাদিস
  • একান্ত সাক্ষাতকারে শাইখুল হাদিস
  • শাইখুল হাদিসের বৈচিত্রময় জীবন-সাধনা
    • বংশ ও পূর্ব পুরুষ
    • জন্ম ও শৈশব কাল
    • শিক্ষা জীবন
    • উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দ
    • শিক্ষকতা
    • রচনা ও সংকলন
  • স্মৃতি তারানা
    • তুমি সত্য ন্যায়ের বাতি
    • এতিম হলো দেশ
    • তার বিদায়ে কেঁদেছে মানুষ
  • ছবি গ্যালারী

প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে ৩০ ঘন্টা

গাজী মোহাম্মাদ সানাউল্লাহ

ডেটলাইন ১৮ জুলাই ২০১২।রোজ বুধবার। ঘরির কাটা তখন রাত   ১২ পেরিয়ে। আমাদের অবস্থান দেশের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল ইবরাহিম মেমোরিয়াল হাসপাতাল যা বারডেম নামে পরিচিত। আবার দাড়িয়ে আছি ১২ তলার ১২১২ নং রুমে । মাঝারি আকুতির এ রুমটিতে রুগীর মুমুর্ষতার কারনে এয়ারকন্ডিশন লাগানো। পুরুনো এয়ারকন্ডিশন  হওয়ায় বাহিরে একটা আওয়াজ হচ্ছে। রুমের ভিতরে একপাশে বিশেষ সিসটেমের স্টিলে খাট। খাটের পাশে অকি্রাজেন এর সেলেন্ডার। অক্সিজেন মাস্ক লাগানো আছে রুগীর মুখে। পাশে ছোট্র একটি চেয়ারে বসা মাওলানা মাহবুবুল হক। অপলক নেত্রে তাকিয়ে আছেন খাটে নিসেস্তজ হয়ে শুয়ে থাকা আপন মানুষটির দিকে। কোন আওয়াজ নেই তার মুখে কিন্তু দু’ গাল বেয়ে ঝরঝর করে পড়ছে চোখের পানি। এস কালারের মোটা কাঠের দরজায় লাহানো কার্ড বক্সে একটি কাগজে লেখা রয়েছে রুগির নাম।  প্রিন্টেড কাগজে বলপেনের নিল কালিতে লেখা হয়েছে - আজিজুল হক। ভর্তির সময় ১৭ জুলাই।সন্ধা ৬.৩০ মিনিট।

গত কয়েক বছর ধরেই শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক  বাধ্যক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। দিন দিন তার এ অসুস্থতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। অসুস্থতা যত বাড়ছিল তার সাথে পাল্লা দিয়ে শায়েখের উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে পরিবারের সদস্যগন নানা চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। সর্বশেষ দেশের বিখ্যাত চিকিৎসাকেন্দ্র বারডেম হাসপাতালে শায়েখকে নিয়মিত চিকিৎসা দেয়া হয়। এর অনেকটা বড় কারণ ছিল বারডেমের প্রধান ডাক্তার দেশের প্রথম সারির খ্যাতিমান চিকিৎসক অধ্যাপক ডাক্তার এ,কে এম আজাদ চেীধুরী ছিলেন শায়েখের একান্ত ভক্তজন। ডাক্তার এ,কে এম আজাদ চেীধুরী’র তত্তবাধানে শায়েখের জীবনের শেষ সময়ের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। জীবনের শেষ দিনগুলিতে বেশ কয়েকবারই শায়েখের অসুস্থতা গুরুতর অবস্থায় এসে উপনিত হয়। প্রতিবারই তাৎক্ষনিকভাবে বাসা থেকে এ্যম্বুলেন্স যোগো হাসপাতালে আনা হয়েছে। দির্ঘ সময় চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষন ও প্রানান্তকর প্রচেষ্টার পর কখনো হয়ত একদিন আবার কখনো ২ বা ৩ দিন পর শায়েখের শারিরিক অবস্থা কিছুটা ভাল হত। বেশ ইকটু উন্নত  হলে এক সময় হাসপাতাল থেকে বাসায় আনা হত। এভাবেই চলছিল দিনমান।

গত ১৭ জুলাই এভাবেই হটাৎ করে শায়েখ প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষনিকভাবে বাসা থেকে বারডেম হাসপাতালে আনা হয়। অক্সিজেনের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হয় কৃত্রিম শ্বাষ-প্রশ্বাসের। উন্নত চিকিৎসার সবরকম চেষ্টা চলতে থাকে। চিকিৎসবৃন্দের সাথেসাথে শায়েখের পরিবারের প্রতিটি সদস্য উদ্বিগ্নভাবে কাটাতে থাকেন প্রতিটি সেকেন্ড। কারো মুখে রা নেই। কেবলি দোয়া ও কান্নাকাটি। আর অশ্রƒ বিগলিত চোখে চিকিৎসকদের ব্যস্ত ছুটাছূটি দেখা। মুহুর্তেই এ খবর ছড়িয়ে পরে সবখানে।  সারা দেশে শায়েখের অসংখ্য অগনিত ছাত্র ও ভক্তকুল, কর্মী সহ আপামর তাওহিদি জনতাও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন। সবার ফোন গুলি ব্যাস্ত হয়ে উঠে শায়েখ সংক্রান্ত আলোচনায়। অনেকেই ছুটতে থাকেন বারডেমের দিকে। অল্প সময় পর হাসপাতালের আঙ্গিনা ভরে উঠে সুন্নতি লেবাস ও মাথায় শুভ্রতার আলো ছড়ানো মানুষ গুলোর আনাগোনায়।

সময় গড়িয়ে যায়। দুপুর কেটে হয় বিকেল। এক সময় উদ্বিগ্ন এ মানুষগুলোর সীমাহিন অস্থিরতার কালো মেঘ সরে গিয়ে উদিত হয় আশার সোনালী সুর্য। আসে সান্তনার বাণী ।  দায়িত্বরত ডাক্তারগন জানান , আলহামদুলিল¬াহ। শায়েখ ভাল আগের চেয়ে অনেকটা ভাল আছেন। হাজারো মানুষের উদ্বিগ্ন চেহারায় সান্তনা ও আনন্দের প্রলেপ বুলিয়ে অস্তমিত যায় সেদিনের সুর্য। আল¬াহর এ মহান প্রিযতমবান্দার আরোগ্যতার সুসংবাদ শুনে অপেক্ষমান এসকল মানুষও লুটিয়ে পড়ে কিবলা দিকে। রত হয় প্রশস্ত হদয়ে প্রশান্তির নামাযে।

অন্য সকল সময় আমি যেমন পিছিয়ে। আমার দৃর্ভাগ্য সেদিনও আমি আগে যেতে পারিনি। যেতে যেতে একবারে মধ্যরাত। আমরা লিফটে উঠতে যাব এমনি সময় দেখা হল শায়েখের মেঝ সাহেবজাদা মাওলানা মাহবুবুল হকের সাথে। আমরা বলতে আমার সাথে আছেন মুমেনশাহী মাখজানুল উলুম মাদরাসার ভাইস প্রিনিসপ্যাল মাওলানা মুহাম্মাদ । বনানী কড়াইল মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আবদুল¬াহ মুকাররম।  লিফট থেকে নেমে মাহবুবুল হক সাহেবের সাথে শায়েখের রুমে দিকে আগালাম। ১২ তলার উত্তর দিকের একেবারে শেষ মাথায় একটা রুম ১২১২ নং রুম। ইকটু গিয়েই ডান দিকে গেলে এ রুম। এখানেই শায়েখ শুয়ে আছেন। ধিরে ধিরে রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। ইতোমধ্যে খবর পেয়েছি শায়েখ আগের চেয়ে ভাল আছেন তবুও কেন জানি, বুকের ভিতরটা জমাট বেধে আছে। অজানা একটা উদ্বেগ কাজ করছে। প্রথমে মাহবুব সাহেব রুমে ঢুকলেন। খোলা দরজার ভিতরে চোখ পড়তেই বুকের ভিতর একটা মুচড় অনুভব করলাম। মনের জোর না থাকায় চোখ নামিয়ে নিলাম। ইচ্ছে করেই সবার পিছনে ঢুকলাম।

আমি দাড়িয়ে আছি হযরত শায়েখের সামনে। বিশেষ একটি খাটে শায়েখ শুয়ে ঘুমিয়ে আছেন। নিচে মেশিন চালিত বিছানা। তার  উপরে গোলাপি রঙ্গের চাদর। চাদরের উপরের রক্তজবা কালারে নানা ফুল আকা। হটাৎ করে দেখলে মনে হয় রক্ত। শায়েখের মুখে অক্সিজেন লাগানো। মাথার দিকে একটার চেয়ারে বসলেন মাহবুব সাহেব। শায়েখের শারিরিক হালাতের নানা কথা বলছিলেন তিনি। আমরা তাকিয়ে আছি শায়েখের দিকে। এমনি সময় হঠাৎ করেই অঝোর ধারায় কেদে উঠলেন হযরত শায়েখের অসংখ্য স্মৃতির জাজ্বল্য সাক্ষি মাওলানা মাহবুব । ঘর থেকে মাদরাসা, বাইতুল মোকাররমের সমাবেশ থেকে থেকে বাবরি মসজিদ লংমার্চ। সব জায়গাতেই শায়েখের পাশে ছিলেন তিনি। সময়ের নানা ক্ষনে গর্জে উঠা  সেই লৌহ মানবটি আজ হাসপাতালের বিছানায এভাবে কাতর হয়ে আছেন, এ বিষয়টি মনে করেই কি তিনি এভাবে কেদে উঠলেন?  ঘন্ট খানেকের মত  শায়েখের পাশে দাড়িয়ে থাকলাম। কেবলি তাকিয়ে চোখের স্মৃতিকোটাই তাকে তোলে রাখলাম। হায়! কোন ভাবে যদি জানতে পারতাম সে দেখাই আমার শেষ দেখা। হাদিসে রাসূলের জীবন্ত এ কিংবদন্তীর সামনে আর কখনো দাড়াবার সুযোগ আমার হবে না।   

ক্যলেন্ডারের হিসেবে এ ঘটনার ২০দিন পর। ৮ আগষ্ঠ ২০১২। ১৮ রমজান। বুধবার। সময় দুপুর ১২ টা ২০ মিনিট । পকেটে রাখা ফোনটি বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠা নামটি দেখে তাড়াতাড়ি রিসিপ করলাম। অন্যপাশ থেকে কান্নাজড়িক কন্ঠে হযরত শায়েখের দৌহিত্র ওযাসিফ জানালো শায়েখের শরির খুব খারাপ। শ্বাষ-প্রশ্বাষে সমস্য হচ্ছে । অক্সিজেন লাগানো হয়েছে। এক তোড়ে অনেক গুলি কথা বলে থামল সে। বল্ল¬াম। আমি আজিমপর আসছি। যদি হাসপাতালে নেয়া হয় তবে আমাকে ফোন কর। বলেই রওয়ানা দিলাম। তারপর আরো কয়েকটা ফোন। আজিমপুর যাওয়ার গাড়িতে উঠার আগেই সব শেষ। শেষ খবরটি পাওয়ার পর আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। প্রচন্ড চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা করল। কিন্তু পথিমধ্যে থাকায় চিৎকার করে কাদতে পারলাম না। এতে করে বুকের ভিতর থেকে আরো জোরে কান্না আসতে লাগল। তারপরও কান্না বিজরিত কন্ঠে আরো কয়েকটি ফোন করলাম। না । আসলেই তিনি নেই। তিনি নেই তো সব নেই। যদি তিনিই না থাকেন তবে আমরা আর কার মমতার আসায় বেচে থাকবো। কার কন্ঠের একটি ডাকের জন্য জামিয়া রাহমানিয়ার ২য় তলার শেষ প্রান্তের সে রুমটির সামনে দাড়াবে। জামিয়া রাহমানিয়া তুমি আজ এতিম। শায়েখের লাখ ছাত্রসকল। জেনে নাও আমরা আজ এতিম। আমাদের সব শেষ। যে পৃথিবিতে শায়খুল হাদীস আল¬ামা আজিজুল হক নেই। সে প্রথিবিতে আমাদের বেচে  থাকার আর তো  কোন সম্বল রইল না। আমার বিশ্বাষ হযরত শায়েখের øেহ পাওয়া প্রতিটি মানুষের অনুভূতি এর চেয়ে ভিন্ন হবার নয়।

৭/২ আজিমপুর। ইতিহাসবিজড়িত এ বাড়িটির সামনে হাজারো মানুষের ভিড় আরো হয়েছে। তবে আজকের এ মিছিল কান্নার মিছিল। আজকের এসমাবেশ শোকার্ত মানুষের সমাবেশ। আজকের এ রুনাজারি সব হারানো মানুষের হদয়ের আর্তি। সকলেই তাকিয়ে আছেন এ বাড়িটির দিকে। কেউ কেউ হয়ত আনমনে প্রশ্ন করছেন হে বাড়ির বালু কনা, তুমিও কি বুঝতে পারছ আ্জ আমরা কাকে হারালাম। তুমিও পেয়ে হারানোর ব্যদনায় আমাদেরি মত মুহ্যমান?  ইতোমধো দেশের প্রায় সবকটি ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়াতে হযরত শায়েখের ইন্তেকালের খবর প্রচার করছে। ধিরে ধিরে শায়েখের বাসার সামনে বাড়ছে মানুষের ভির। আলেম ওলামা ,মাদরাসার ছাত্র, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ,নানা প্রান্তের নেতাকর্মি, মিডিয়ার লোকজন,সাধারণ দিন দরদি মানুষ। বাসার সামনের প্রধান রাস্তায় সবাই দাড়িয়ে খোলা আকাশের নিচে, শোকের সামিয়ানায় আবৃত হয়ে। সবারই চোখ অশ্রƒভিজা। কন্ঠই কাপা কাপা। কেমন যেন একে অন্যের দিকে তাকিয়ে ভিতরের শোককে শান্ত করতে চায়। কিন্তু মন তো মানে না। চোখ তো থামেনা। অনেককেই দেখলাম একে অন্যকে ধরে কাদছেন। কাদুক । আজ তো আমাদের কান্নারই দিন। আজ না কাদলে আর কবে কাদব। ইতোমধ্যে সারা দেশ থেকে ফোন আসছে জানাযার সময় জানার জন্য।

বেশ কিছু সময় পরে বাসায় ঢুকলাম। সিড়ি দিয়ে দু তলায় উঠছি মনটা হঠাৎ কওে আবারো কেদে উঠলো।এই সেই সিড়ি। এই সিড়িতে কতবার এসেছি শায়েখের সাথে। তিনি তো এ জায়গাটাদিয়ে হেটে উঠতেন। আর তার নিজস্ব ভঙ্গিতে আল্লাহ আল্লাহ যিকির করতেন। আর কখনো দু তলা থেকে নিচ তলার এই সিড়ি আঙ্গিনায় শায়েখের কন্ঠ ধ্বনিত হবে না।আর কখনো দেখা যাবেনা সাদা সুতির পতলা জামা গায়ে, মাথায় পাচ কল্লি টুপি দিয়ে হাত সেই আকর্শনিয় লাঠি নিয়ে হেটে যাওয়া শায়খুল হাদীসকে। উঠছি আর ভাবছি জীবনের মাত্র দশ টি বছর শায়েখকে কাছ থেকে দেখার কারনে আমার অন্তরের যদি এ অবস্থা হয় তবে যারা সারা জীবন শায়েকে পেয়েছিল নিজেদের আপন করে, সোই তারা তো আর পাবেনা এই প্রিয় মানুষটিকে। তাদের অবস্থা কি?

২য় তলার বসার রুমে ঢুকতেই চোখ পড়ল একটি পবিত্র দৃশ্যে । মক্ক শরিফ থেকে হয়রত শায়েখকে উপহার দেয়া পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফের মোবারক সেই খন্ডটিতে। রুমের উপরের দিকে সযতেœ টানানো আছে সেটি হে কাবার গিলাফ, যে ব্যাক্তি তোমাকে বহন করে এনেছিল কাবার ঘর থেকে এই ঘরে, সেই তো  আজ পথযাত্রি কাবার দয়াময় প্রভুর। তার যাত্র শুরু হয়েছে তোমার ও আমার ও সকলের মনিবের দিকে। ঘরে ঢুকতেই দেখা হল শায়েখের বড় ছেলে মাহমুদুল হক সাহেবের। তিনি তো শায়েখের বড় সন্তান। আজকের এ দিনে তার কষ্টটাও কি সবার চেয়ে বেশি। তিনিই তো সবচে বেশি লম্বা সময় ¯œাত হয়েছেন ¯েœময় আপন ¯েœময় পিতার ভালবাসা ও আদরে। খবর পেলাম মাহবুবুল হক সাহেবসহ শায়েখ পরিবারের প্রায় ৪০ জন সদস্য উমরায় আছেন। তারা কি আসতে পারবেন?

রুমের এক পাশে শায়েখর নাতি মূফতী সাইদ আহমদ, মাওলানা এনাম সাহেবসহ অন্যরা পাস্ববর্তি মসজিদের  ইমাম মাওলানা বাহাউদ্দিন সাহেবের সাথে লাস গোসল ও কাপনের বিষয়ে মসওয়ারা করছেন। চারদিকে ঘিরে আছে আরা বেশ কয়েকজন। ইতোমধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে জানাযা হবে পরের দিন সকাল ১১ টায়। খবর পেয়ে শায়েখের বাসায় ছুটে এসেছেন সরকারের প্রতিমন্ত্রী ও মোহাম্মাদপুরের এমপি. জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্থানীয় এমপি মোস্তফা জালাল মুহিউদ্দিন প্রমুখ। ইকটু পরে সুযোগ হল শািয়েখের রুমে যাওয়ার। ২য় তলার একেবারের শেষ প্রান্তে শায়েখের রুম। শোকের তিব্র অনুভূতিতে দগ্ধ হয়ে সেই রুমে প্রবেশ করলাম।শায়েখের পায়েররদিকে নিথর হয়ে দাড়িয়ে আছে শায়েখের সর্ব কনিষ্ঠ সন্তান মাসরুরুল হক,পরিবারের আরো বশে কজন ঘিরে আছে খারেটর চারপাশ। আস্তে আস্তে আরো কাছে গেলাম সেই খাটটির । যাতে  শায়েখ অল্প কিছুক্ষন আগেও জীবিত অবস্থায় শুয়ে ছিলেন। এখন ত তিনিদুর- বহুদুরে। প্রিয় প্রভুর দরবারে। খাটে কেবল  রয়েছে তার দেহ। ঘরে এসি চলছে। তারপরও পরিমানের চেয়ে ঘরটাকে অনেক বেশি শিতল মনে হল। মনের প্রচন্ড আবেগে কালের বিবর্তনে শতবছরের অবদান এই মহান ব্যাক্তিটিকে ইকটু ছুয়ে দিলাম।

এবার গোসলের পালা । ইতোমধ্যে কাফনের কাপর চলে এসেছে। সিদ্ধান্ত হল গোসল ও কাফনের পর বাদ যোহর লাশ পাস্ববর্তি চানতারা মসজিদ রাখা হবে। আসরের পর বাসায় রাতে লাস থাকবে জামিয়া রাহমানিয়ায়। পরের দিন প্রথমে খেলাফত মজলিস অফিসের সামনে লাস থাকবে কিছুক্ষন । তারপর জাতীয় ঈদগাহে জানাযা । এও সিদ্বান্ত হল ষায়েখকে সহাহিত করা হবে মোহাম্মাদপুরের অদুর ঘাটারচর পারিবারিক কবরস্থানে।

বেশ কিছুক্ষন পর। পৃথিবির শেষ গোসলের পর শায়েখকে পরানো হয় কাপনের সফেদ কাপর। বাসার নিচে পৌছে যায় লাসবাহী ফ্রিজিং গাড়ি। এ্যম্বোলেন্সের স্ট্রেচারে করে শায়েখের লাস মসজিওদও উদ্যোশ্যে ঘর থেকে বের করা হল। কাফনেরর সাদা কাপরের আবৃত শায়েখের পাশে অন্য অনেকের সাথে আমিও এই সবযাত্রার সঙ্গি। হয়ত কোন মিছির নয় কিন্তু লাশ কে ঘিরে জনতার ক্রন্দরত স্রোত চলল মসজিদে দিকে। চোখে পানি আর মুখে কালিমায়ে শাহাদাত। লাশ কাধে বাসা থেকে তখন বের হই তখর কেবল মনে হচ্ছিল এই সেই বাসা । এই সেই সিড়ি,গেট সবি আছে কেবল যিনি ছিলেন এখানের কেন্দ্র বিন্দু তিনি আর নেই। আছে কেবল তার লাশ। এ কষ্ট ও অনুভূতি সহ্য করার নয়। হে আল্লাহ তুমি সবাইকে শোক সইবার তাওফিক দাও।

চানতারা মসজিদের বারান্দার সামনের আঙ্গিনায় শায়েখের লাশ রাখা হল। দির্ঘ সময় ধে অপেক্ষমান হাজারো মানুষ লাইন ধওে সুসৃংখলভাবে দেথতে লাগলেন। চারপাশে দারিয়ে আছি আমরা। লাশকে আগলে এখানে দাড়িয়ে আছেন শায়েখের রেখে যাওয়া খেলাফতে দীনের ঝান্ডাবাহী, শায়েখের  সুযোগ্য সন্তান আমাদের  রাহবার মাওলানা মামুনুল হক। শায়েখের দোহিত্র এনামুল হক,সাইদ আহমাদ,মাসনুন, এহসানুল হক সহ অন্য অনেকেই। চিৎকার করে এ কথা বলতে প্রচন্ড ইচ্ছা করছিল, হে শায়েখ তুমি দেখ, তোমার সন্তানেরা,তোর ছাত্ররা,তোমার রেখ যাওয়া আদর্শেও সৈনিকেরা আজ তোমায় সেভাবেই আগলে রেখেছে যে ভাবে তোমাকে আগলে রেখে ছিল জীবনভর। শায়েখ তুমি দেখ। একবার তুমি চোখ খোল। এই তো সেদিনের কথা। শায়েখ জুম্মার পর মাহফিলে যাবেন।এ মসজিদে নামাজ পরে সরাসরি গাড়িতে উঠবেন। আমরা কয়েকজন হুইল চেযাওে কওে শায়েখ কে নিয়ে এসেছি ্ই মসজিদে। ডান পাশের একবাওে কানার দিওক তিনি বসে আছেন। আজও তিনি মসজিদে এসেছেন । কিন্তু এখানে তার কদম পওে নি। আর কোনদিন শায়েখ মসুজদে আসবেন না। এ মসজিদ শায়েখকে দেখতে পাবে না।

সারিবদ্ধ মানুষের মুখে কোন রা নেই। কেবলি কান্না।  সব বয়সি মানুষ আজ এককাতারে। বৃদ্ধ, জোয়ান, মাঝবয়সি সবাই  এসেছেন। যিনি আজ থেকে ৫০ বছর আগ শায়েখের কাছে বুখারী পড়েছেন আজ তিনিও এসেছেন। গত ক বছর আগে সবে মাত্র যে ছেলেটি শায়েখের ছাত্র হওয়া সোৗভাগ্য অর্জন করেছে সেও এসে এ লাইনে দাড়িয়েছে। শোক কান্নার প্রলেপ আজ সবার মুখে। অন্য সকলের সাথে লাইনে দাড়িয়েছে শায়েখের আজিমপর এলাকার নানা বয়সের প্রতিবেশিরা। তারা কি তাদের এ মহান পূন্যাত্বা গরবের ধন কে হারিয়ে অন্যদেে চেয়ে বেশি মুহ্যমান। এক সময় লাশের পাশে এসে দাড়ালেন সে মানুষ টি। সারা জীবন যাকে শায়েক অন্তরের গভিল থেকে মহব্বত করেগেছেন। মুফতী ফজলুল হক আমিনী। শায়েখের প্রিয়তম ছাত্র। অসংখ্য আন্দেলসেন সহযাত্রী। আমিনী সাহেব আস্তে আস্তে এসে শায়েখের মাথার পাশে দাড়ালেন। দির্ঘ সময় অপলকনেত্রে শায়েখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। এক সময় প্রিয় শায়েখকে হারানার শোক হয়ত আর সহ্য করতে পারলেন না। কান্না ভেজা চোখে ফিরে গেলেন।

ইফতারের কিছুক্ষন আগেই শায়েখের লাশ নিয়ে আসা হয় বাসায।  বাসার নিচ তলায়। পরিবারের সদস্যদে দেখার ব্যবস্থা করা হয়। এশার নামাজের পর লাশ যাবে শায়েখের হাতে গড়া প্রিয় প্রতিষ্ঠান জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ায়। শায়েখ ও জামিযা রাহমানিয়া । এক সুত্রে গাথা নাম। কিন্তু তারাবীর নামাজের পর শায়েখের বাসার সামনে আবারো ভির জমে যায় হাজারো মানুষর। ঢাকার বাহিরে থেকে অনেকে এসে নামাজের আগে পৌছেছেন। তাদেও আবদারের প্রেক্ষিত লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে লাশ দেখানো হয়। মানুষের দেখা যেন আর শেষ হয় না। প্রিয় রাহবারকে যেন তারা এক পলকের জন্যও চোখের আড়াল করতে চায় না। কিন্তু তিনি যে চোখের আড়াল হলেন চিরদিনের জন্য। হাজারো ভক্তবৃন্দেও অকাতর আবেদনই বলে দেয় শায়েখ হয়ত চোখের আড়াল হয়েছেন কিন্তু মনের আড়াল তিনি হবেন না। কোন দিন। কেয়ামত তক।

রাত এগারটার দিকে লাশবাহী গাড়িতে শায়েখকে নিয়ে আমরা রওয়ানা হয় জামিয়া রাহমানিয়ার দিকে। আজিমপুরের বাসা থেকে মোহাম্মাদপুরের জামিয়া রাহমানিযা। চিরপরিচিত এ রাস্তা দিয়ে শায়েখের সাথে অসংখ্যবার গিয়েছি আমরা। কিন্তু আজকের যাত্র ভিন্ন। আজকের পথচলার ধরন অন্য।এতদিন আমরা শায়েখের সাথে গিয়েছি। আজ শায়েখ যাচ্ছেন আমাদের সাথে। আজ ত তিনি যেতে পারেন না। আজ তাকে নিতে হয়। উঠাতে হয় । নামাতে হয়। লাশবাহী গাড়ির সানের সিটে আমি। আমাার পাশে বসা  শায়েখের জেলখানার খাদেম আবদুলি মুমিন। মধ্যরাতের অনেকটা নিস্তবদ্ধ রাস্তায় শায়েখের লাশ নিয়ে আমরা ছুটে চলছি। কোন ভয় নেই।আমার কেমন যেন মনে হচ্ছিল লাশ নয়, আমাদেও পেছন শায়েখ জীবিত অবস্থায় শুয়ে আছেন। আর তাকিয়ে আছেন আমাদেও দিকে। তার চিরপরিচিত এই রাস্তার দিকে। আর কন্ঠ হয়ত চিরচারিত সেই কালিমার সুর। সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি,সুবহানাল্লাহিল আজিদ। সেই গুন্জ্ঞন শুনার জন্য গাড়ির পিছনের অংশে আমি কানপেতে রই ।

আগেই খবর পেয়েছি সারা দেশ থেকে লোকজন এসে অপেক্ষা করছে মাদরাসায়। প্রতিক্ষিত প্রহওে সবার মনে একটাই আকুতি। কখন তিনি আসবেন। কখন শেষ বারের মত তাকে দেখা যাবে। এ্যম্বুলেন্সের উচ্চকিত সাইরেনে শায়েখকে নিয়ে গাড়ির বিশাল বহর উপস্থিত হল রাহমানিয়ার প্রধান গেট বাবুল আজিজে। নিচ থেকেই দেখলাম রাহমানিয়া ভবনের গোটা পাচ তলায় মানুষের উপচে পড়া ভির। শায়েখের শেষ আগমন উপলক্ষে প্রিয় রাহমানিয়া যেন আজ নতুন করে সেজেছে। কেবল রাহমানিয়ায় নয় সেদিনর আকাশও যেন কেদেছিল অঝুর ধারায়। সারা দিনের কাঠফাটা রোদেও শেষ হয়েছিল তুমুল বর্ষনের মাধ্যম। আকাশের পানির সাথে একাকার হয়ে যায় আমাদেও চোখের ক ফোটা তপ্ত অশ্রু।

 এখানেও সুশৃংখলভাবে লাইনের ব্যবস্থা করা হয়।মাদরাসার ভিতর বাহির, সাত মসজিদের আঙ্গিনা, চারপাশের রাস্তা ঘাট । চারদিকে কেবল শোকার্ত মানুষের সাড়ি। মাদরাসার সামনের অংশে ত্রিপল টানিয়ে সেখানে নিচে বরফ দিয়ে লাশ রাখা হয়। শায়েখের অত্যন্ত প্রিয় আসাতাযায়ে রাহমানিয়া ব্যস্ত হয়ে পরেন লাশের পাশে। কেউ বরফ হাতে।কারো হাতে কপোরের প্যাকেট । সারিবদ্ধ ভাবে মানুষজন আসছেন, লাশর পাশে দাড়িয়ে চোখর মনি কোটায় শেষ বারের মত শায়খকে  একে নিচ্ছেন। জামার আস্তিনে চোখ মুছে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে চলছে। এক সময় মানুষের ভির ঠেলে এগিয়ে এলেন হযরত শায়েখের অত্যন্ত প্রিয় ও মহব্বতের ছাত্র মাওলানা আবদুল হাই পাহাড়পুরী।হুযুর এমনিতেই প্রচন্ড অসুস্থ। কয়েকজন ছাত্রের হাতে ভর কওে হুযুর দাড়ালেন লাশের পাশে। সন্তানেরর জন্য পিতার লাশ যেমন ভারি ও অসহ্য কষ্ঠের। তেমনি ছাত্রের জন্য প্রিয় শিক্ষকের কতটা ভারি ? এ প্রশ্নে উত্তর অনেকটাই পাওয়া গেল পাহারপুরী হুযুরের চোহারায়। দির্ঘ সময় তিনি দাড়িয়ে থাকলেন। এক সময় আবেগের আতিসহ্যে কিছুটা উবু হয়ে শায়েখের কপালে চুম্মন করলেন। শেষ বারের মত বাধিত হলেন প্রিওয় শিক্ষকের স্পর্শে। তারপর বিদায় নিলেন।  মধ্যরাত থেকে একেবারে সকাল ৯ টা পর্যন্ত  এভাবেই শেষবারের মত সকলেই এক নযর দেখলেন তাদের প্রিয় রাহবার ও অভিববককে।

মধ্যরাতের শেষভাগ শায়েখকে আবারও নিয়ে এলাম আজিমপুরের বাসায়। পরিবারের অনেক সদস্য সকালে রওয়ারা মাত্র বাসায় এসে পৌছলেন। লাশ বাসার নিচতলায় নিয়ে রাখা হল তাদেও দেখার জন্য। বাদ ফজর লাশ নিয়ে আসা হল রাহমানিয়া প্রঙ্গনে।  সকাল নয়টায় শাখেকে নিয়ে আমরা রওয়ানা করলাম পল্টনে অবস্থিত খেলাফত মজলিস অফিসে। সেখানে একঘন্টা থাকবে লাশ। তারপর জানাযার জন্য জাতীয় ঈদগায়ে। রমজানের দিন হওয়ায় সকালে তেমন জাম  নেই রাস্তায়। অল্প সময়েই লাশবাহী গিয়ে দাড়ালো খেলাফত মজলিস অফিসের সামনে। ত্রিপল দিয়ে সামিয়ানার মত করা হয়েছে একটা জায়গায়। সেখানে গাড়ি দাড় করানো হল। লাশ ভিতরে রেখেই একপাশ থেকে কপাট সরিয়ে দেয়া হল। খুলে দেয়া হল কাফনের মাথার দিকটা । এখন কাচের ভিতর দিয়ে শায়েখের মোবারক চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রাস্তার একপাশ দিয়ে লাইন ধরে শায়েখের ভত্তরা অপেক্ষা করছেন দির্ঘক্ষন ধরে।আছেন খেলাফত মজলিসের নানা প্রান্তের নেতার্মিবৃন্দ।

ঘরির কাটায় তখন সকাল দশটা। আকাশে প্রচন্ড রোদ। বাতাশে প্রচন্ড গরমের আভা । ইতোমধ্যে জাতীয় ঈদগাহ প্রায় পুরুটাই ভরে গেছে। সদরগেট, হ্াইকোর্ট মাজার গেট সহ সকল গেট দিয়ে শুভ্র পোষাকের মিছিল। মেহরাবের সামনে প্রায় ৫০০ গজ জায়গা জুড়ে আলাদা বেষ্টনী দেয়া হয়েছে। এ বেষ্টনির মাঝে বরাবর রাখা হবে শায়েখের লাশ। পাশ দিয়ে এ মাথা ও মাথা চিকন একটি সারি করা হয়েছে । এপথ দিয়েই শায়েখের লাশ দেখতে যেতে হবে । মেহরাব সংলগ্ন এলাকা জুড়ে যে আলাদ বেষ্টনির এর জন্য প্রায় ৫০ জন সেচ্ছাসেবক নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্তরে শোকের পাথর বেধে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম শায়েখের বিদায়ের শেষ আনুষ্ঠানিকতায়। ২ জন সেচ্ছাসেবক নিয়ে হাইকোর্ট মসজিদ থেকে খাটিয়া আনলাম। এর উপরেই রাখা হবে শায়েখের কফিন। রাখলাম  মেহরাব সংলগ্ন এলাকার মাঝ বরাবর। চারদিকে শোরগুল আস্তে আস্তে বাড়ছে। সবারই কেবল অপেক্ষা। মাইক দিয়ে সবাইকে নিশ্চুপ হয়ে মনে মনে কালিমা পড়ার নির্দেশ দেয়া হল। এরি মাঝে গেটের সামনে এসে দাড়াল শায়েখের লাশ বাহী গাড়ি। মাওলানা মামুনুল হক সাহেব সহ আমরা কয়েকজন মিলে কাফন নামিয়ে এনে রাখলাম সেই খাটিয়ার উপর। কফিনের উপরের অংশ কিছুটা খুলে দেয়া হল। শায়েখের চেহারা মোবারক দেখার জন্য কাফনের উপরের অংশও সরিয়ে দেয়া হল। দির্ঘক্ষণ পর্যন্ত সারাদেশ থেকে ছুটে আসা মানূষ শেষবারের মত দেখলেন তাদের প্রিয় রাহবার, প্রাণপ্রিয় উস্তাদ ও আন্তরিক এই অভিবাবককে।

শোকে মুহ্যমান লাখ মাুনষের ভির আজ এখানে। এখানে যারা এসেছেন প্রত্যেকের চেহারা ভিন্ন, ঠিকানা ভিন্ন, কিন্তু পরিচয় তাদের  সকলের এক ও অভিন্ন। তারা শায়েখের ছাত্র। প্রিয়জন হারানোর বেদনা আজ সবারর বদনে স্পস্ট। এরি মাঝে জানাজার সময় হয়ে আসে। ঈদগা মাঠের সব টুকু ভরে গেছে আগেই, এখনও মানুষ আসছে। হাইকোর্ট এলাকা , দোয়েল চত্ত্বর, প্রেসক্লাব েেপরিয়ে পল্টন, আর এদিকে রমনা পার্ক। মেহরাব সংলগ্ন বাশ দিয়ে যে জায়গাটা ঘেরা হয়েছে তাতেও জায়গা নেই। দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম,পির-মাশায়েখ, মন্ত্রী,এমপি,রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বুদ্ধিজীবিমহল,সাংবাদিকবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ আজ এখানে।  কিছু সময় পরে অসংখ্য মানুষের তিব্র আকুতি সত্ত্বেও লাশের কফিনের ডালা বন্ধ করে দেয়া হয়। শেষবারের মত প্রিয়জনকে এক নযর দেখতে না পারা হাজারা কন্ঠের তিব্র আকুতি পিছনে ফেলে লাশ নিয়ে আসা হয় মেহরাবের সামনে। জানাযা এবার প্রস্তুত। কাতারবদ্ধ গোটা এলাকা। জানাযা পড়ানোর জন্য লাশের বুক বরাবর গিয়ে দাড়ালেন মাওলানা মাহফুজুল হক। প্রথম তাকবিরের সাথে সাথে চারদিকে গুন্জরিত কান্নার এক ঢেউ উঠল। তারপর আরো তিনটি তাকবির। সালাম ফিরানুর সাথে সাথে কান্নার সে ঢেউ অঅরো তিব্র হয়ে উঠলো। বিদায় শাইখুল হাদীস। বিদায় বাংলার বুখারী । বিদায় সালাম হে আল্লাহর প্রিয় খলিফা।

আমাদের মানযিল এখন কেরানী গন্জের আটি বাজার সংলগ্ন ঘাটারচর। শায়েখের পারিবারিক কবরস্থানে। আগের কোন প্রস্তুতি ছিলনা। তারপরেও কেমন করে যেন বিশাল এক গাড়িবহর তৈরী হয়ে গেল শায়েখের বিদায় কাফেলায়। প্রায় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল, শতাধিক গাড়ি,বাস,ট্রাক, সিএনজি, এমনকি সাইকেলে করেও অনেকে শামিল হলেন তাদের প্রিয় রাহবারের শবযাত্রার মিছিলে। আমাদের যাত্রার ধরন আজ ভিন্ন কিন্তু পথ! সে তো চির পরিচিত। যে পথে শােেয়র সাথে গিয়েছি অনেকবার। যে পথের প্রতিিিট গাছপালা, ববন, দোকানপাট, ধুলি-কনা সবই দির্ঘ দিন শায়েখকে দেখেছে সাদা রঙ্গের  মাইক্রেবাসে জানালার কাচ নামিয়ে তিনি বসে আছেন। সফেদ পোষাকে।আর আজও তিনি সফেদ পোষাকে আবৃত । বসার বদলে চির নিদ্রিত। জানালার কপাট বন্ধ। গাড়ির রং সাদা কিন্তু এ যে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি। সকল রাস্তা পেরিয়ে আমরা এখন মোহাম্মাদপুরের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। সাতমসজিদ আর রাহমানিয়ার পাশ দিয়ে যাব আমরা কিন্তু রাহমানিয়ার প্রানপুরুষের শবযাত্রার এ মিছিল আজ রাহমানিয়ায় থামবে না। দির্ঘ সময় ধরে চেপে রাখা কান্না আর থামাতে পারলাম না। মোহাম্মাদপুর সুপার মাকেটেরে যে কোনটি দিয়ে আমরা বসিলার দিকে যাব সেখানে এস মুখুমুখি হলাম রাহমানিয়া ভবনের। প্রিয় রাহমানিয়া, তুমিও কি সেদিন কান্নার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলে?

লাশ আসার আগেই কবরের মাটি ভিজে উঠেছে শায়েখ ভক্তদের চোখের পানিতে। গাড়ি থেকে নামিয়ে নিজের রক্তেগড়া পরিবারের সদস্য ও আদর্শেগড়া ভক্তদের কাধে কাধে শায়েখের লাশ এল ঘাটারচরর সবুজ প্রঙ্গণটিতে। কবরের পাশে রাখা হল কফিন। কবরের পাশে অন্য অনেকের সাথে দাড়িয়ে আছেন কবর খননকারী বাদশা মিয়া। পরে জেনেছি সিলেট থেকে আগত এ ব্যাক্তি অনেক বুযৃর্গপ্রান মনিষির কবর খনন করেছেন। কবর সম্পনণ প্রস্তুত।   একে একে কবরে নামলেন শায়েখের কনিষ্ঠ দুই ছেলে মাওলানা মামুনুল হক,মাসরুরুল হক এবং দৌহিত্র মুফতী সাইদ আহমাদ। ধরাধরি কর সযতেœ শায়েখকে শুইয়ে দিলেন সাড়ে তিনহাত জান্নাতের এ টুকরাতে। খুলে দিলেন সফেদ কাফনের বাধনগুলো। সব শেষে আকাশের সমান ভালবাসা বুকে  নিয়ে মুঠি মুঠি মাটি দিলাম আমরা। আর এভাবেই এক সময় আমাদের চর্মচক্ষুর আড়াল হয়ে গেল যুগ-জমানার আন্দোলন- সংগ্রামমুখর একটি আলোচিত অধ্যায়। উম্মাহ’র  ক্রান্তিকালীন সময়ের এক অনন্য দিকপাল।  কালের বিবর্তনে শতবছরের অবদান শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. ।

 গাজী মোহাম্মাদ সানাউল্লাহ

  সম্পাদক:ইসলামবার্তা

  বিভাগীয় সম্পাদক: রাহমানী পয়গাম

           

Powered by Create your own unique website with customizable templates.